জাকির হোসাইনঃ‘মেষপালক থেকে রাষ্ট্রনায়ক’। প্রচলিত কথাটির সঙ্গে একটু মিলিয়ে ‘হাওর থেকে বঙ্গভবনের অধিপতি’- এভাবে বললে এতটুকু অত্যুক্তি হবে না।
প্রথমজনকে চিনতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহম লিংকন। আর দ্বিতীয়জন? হ্যাঁ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কথাই বলছি। ভাটির দেশ নামে পরিচিত দুর্গম হাওর অঞ্চলের কৃষকের ছেলে কিশোরগঞ্জের মানুষ আবদুল হামিদ এখন রাষ্ট্রের অভিভাবক, যিনি সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠায় অনুসরণীয়। যাঁর বিবেক সদাজাগ্রত হাওরের মা, মাটি ও মানুষের কল্যাণচেষ্টায়। নিজ দায়িত্ব পালনে সর্বদাই সব মত পার্থক্যের ঊর্ধ্বে তাঁর অবস্থান প্রমাণিত।
সংসদবিষয়ক খবর সংগ্রহে নিয়োজিত বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ সাতবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট। সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার ও দুইবার স্পিকার হিসেবে। দীর্ঘ ৪২ বছরের অন্যতম প্রধান কর্মস্থল সংসদ থেকে অধিষ্ঠিত হলেন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে।
সেদিন ছিল ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ ভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অঝোরে কেঁদেছিলেন রাষ্ট্রের অভিভাবক আবদুল হামিদ। চোখ ভিজেছিল উপস্থিত সবার। নির্বাচিত এই রাষ্ট্রপতি বক্তব্যের শুরুতে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। রুমালে চোখ মুছতে মুছতে বলেন, এই সংসদে আমি ৪২ বছর কাটিয়েছি। আজকের দিনটা আমার জন্য বিষাদের। যেখানেই থাকি, মন থাকবে সংসদে। আপনাদের সবাইকে বিদায় জানানো আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি হয়তো বঙ্গভবনেই থাকব। তবে অন্য রাষ্ট্রপতির চেয়ে আমি বেশি সংসদে আসব। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন, যেন অর্পিত দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করে ইজ্জতের সঙ্গে বিদায় নিতে পারি। ‘
সত্যি আবদুল হামিদ ভুলে যাননি জাতীয় সংসদকে। মাঝেমধ্যেই ছুটে যান সংসদ ভবনে। সংসদ ভবনের সপ্তম তলায় রাষ্ট্রপতির দপ্তরে সময় কাটান। খোঁজখবর নেন স্পিকার থেকে শুরু করে সংসদ সচিবালয়ের সাধারণ কর্মচারীদের। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতাও করেন। সাংবাদিকরাও এর থেকে বাদ পড়েন না। এই তো হঠাৎ ঢুকে পড়লেন সংসদ ভবনের সাংবাদিক লাউঞ্জে। সবাই হতবাক। এর আগে গত বছর বাজেট অধিবেশন চলাকালে একদিন আগে ঘোষণা ও প্রটোকল ছাড়াই সাংবাদিক লাউঞ্জে হাজির হন তিনি।
প্রয়োজনীয় খবরাখবরের পাশাপাশি সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধার খবর নিতেও এতটুকু ভুল হয়নি তাঁর। লাউঞ্জে ঢুকে প্রথমেই হাত মেলান এই সাংবাদিকদের সঙ্গে। তারপর জানতে চান, ‘কেমন আছেন আপনি? আপনাদের অবস্থা কী? কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো। আজও সে কথা মনে পড়লে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে।
স্পিকার থাকা অবস্থায়ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সুযোগ পেলেই ঢুঁ মারতেন সাংবাদিক লাউঞ্জে। সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। চিরচেনা এই স্থানটি ভুলতে পারেননি বলেই ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পরও ওই বছর বাজেট অধিবেশন চলাকালে একইভাবে হাজির হয়েছিলেন সাংবাদিক লাউঞ্জে।
সেদিন বলেছিলেন, ‘একদিন আপনাদের নিয়ে যাব বঙ্গভবনে। ‘ আর সে কথাও রেখেছিলেন। সেদিন আবার অনুভব করেছিলাম, স্পিকার থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরো বিনয়ী, বন্ধুবৎসল আর প্রাণবন্ত মানুষ। কথাবার্তা কিংবা আচরণে কোনো পরিবর্তন নেই স্পিকার ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে। হাওর অধ্যুষিত জেলা কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে এসে বঙ্গভবনে স্থান করে নেওয়া আবদুল হামিদ সেদিন বিশাল বঙ্গভবনের দরবার হলে আমাদের দেখামাত্রই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করেন, নাম ধরে ধরে সাংবাদিকদের পারিবারিক খোঁজখবর নেন। ইফতার শেষে বঙ্গভবন ঘুরিয়ে দেখান। ছবি তোলেন। আড্ডা দেন। খোলামেলা কথা বলেন অনেক বিষয়েই।
সেদিনের অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, বঙ্গভবনে নিজেকে বন্দি মনে করেন রাষ্ট্রপতি। বিভিন্ন সময় তিনি অনেককেই তা বলেছেন। আমাদেরও বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম বরাবরই আড্ডাপ্রিয় মানুষ। এখন আর আগের মতো আড্ডা দিতে পারি না। কথা বলতে পারি না। সংসদে কাটিয়েছি জীবনের বড় একটি অংশ। সেই সংসদ আমাকে টানে। কিন্তু মন চাইলেই সেখানে ছুটে যেতে পারি না। ‘ রসিকতা করে বললেন, ‘ইচ্ছা করলে যেতে পারি মাত্র ১২ মিনিটে। কিন্তু যাই না। কারণ রাজধানীর ট্রাফিক। এমনিতেই যানজট নিয়ে মানুষের ত্রাহি অবস্থা। এর ওপর আমি যদি সংসদে যেতে চাই, তাহলে এক ঘণ্টা আগে থেকেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সে জন্য আমার আত্মীয়স্বজন, এমনকি লালমাটিয়ায় আমার মেয়ের বাসায়ও যাই না। ‘
সত্য প্রকাশে সাহসী
হাস্যরসের মাধ্যমে সংসদে অনেক সত্য প্রকাশ করতেন আবদুল হামিদ। এখনো সেই কাজটি তিনি করেন বলে জানালেন একসময় সংসদে কর্মরত ছিলেন বঙ্গভবনের এক কর্মকর্তারা। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংকটকালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন। সেদিন রাষ্ট্রপতির কথা শুনে চমকে উঠেছিলেন তিনি। বিরোধী দলের দাবিনামা হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার আর প্রধানমন্ত্রীর এক জায়গায় দারুণ মিল আছে!’ শুনেই নড়েচড়ে বসে জানতে চাইলেন খালেদা জিয়া, মিল মানে? উত্তরে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটা ছিনিয়ে নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে আপনারা দুজনই এক হয়ে কাজ করেছেন। এমনকি সংসদে রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দেবেন, তাঁর একটি ভাষা বা শব্দ ব্যবহারেরও সুযোগ রাখেননি। রাষ্ট্রপতির ভাষণ আপনারাই তৈরি করেন, আপনারাই মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করেন। রাষ্ট্রপতি শুধু সংসদে দাঁড়িয়ে তা পাঠ করেন। ‘ এই বাস্তবতাকে সেদিন বিরোধীদলীয় নেতা অস্বীকার করেননি বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
ভাটির শার্দূল
একটি সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান হয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে আবদুল হামিদের সততা, নিষ্ঠা আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই প্রধান বলে মনে করে এলাকাবাসী। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও বেশ কিছুদিন তিনি অফিস করেন সংসদ ভবনে। সে সময় এলাকার অনেকেরই ভিড় ছিল সংসদ এলাকায়। তখন কথা হয় তাঁদের অনেকের সঙ্গে। নিভৃত হাওরের ওই সব মানুষ ভালোবেসে তাঁদের প্রিয় এই নেতাকে ভূষিত করেছে ‘ভাটির শার্দূল’ উপাধিতে।
রাষ্ট্রপতির বাল্যকালের বন্ধু অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান শাহজাহানের মতে, আবদুল হামিদ ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে এ দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। তাঁর সততা ও নিষ্ঠাই আজ তাঁকে রাষ্ট্রের এমন মর্যাদাপূর্ণ আসনে বসিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি এমন দুর্গম একটি এলাকা থেকে একজন মানুষ রাষ্ট্রপতি হতে পারেন। আমরা কিশোরগঞ্জের সকলেই গর্বিত। ‘
রাষ্ট্রপতির নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আবদুল হামিদ সব সময় স্কুলের খোঁজখবর নেন। তিনি একটাই কথা বলেন, সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাঁর কাছ থেকে আমরা অনেক শিখেছি, তাঁর মূল হলো সততা। ‘
এর আগে স্পিকার থাকাকালে অনেকবারই তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার প্রোগ্রাম হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। তবে তাঁর সঙ্গে হাওর এলাকা সফরে যাওয়া সহকর্মীদের কাছে শুনেছি, বলদা হাওর, আলালের হাওর, আঙ্গানের হাওর, চিন্নির হাওর, তলার হাওর, বড় হাওর- এসব এলাকার প্রতিটি বাঁক তাঁর চেনা। শৈশব থেকেই হাওরের দুর্গম এলাকা জয় করেছেন। সাঁতরে টানা ১৩ ঘণ্টা এই হাওরের বুকেই কাটিয়ে দিয়েছেন। হাওরবাসীর কাছে খ্যাতি পেয়েছেন ‘ভাটির শার্দূল’ নামে। সহকর্মীরা জানান, সেখানকার মানুষকে বলতে শোনা যায়, ‘লাগে চাচা, ডাহি বাই। তাইনে আমাগো হামিদ বাই’ (সম্পর্কে চাচা, ডাকি ভাই, তিনি আমাদের হামিদ ভাই)। আবদুল হামিদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন অনেকেরই ছেলে, এমনকি নাতি বর্তমানে তাঁর কর্মী। তাই মজা করে এই শ্লোক বলেন অনেকে।
হাওরবাসীর সঙ্গে এখনো নিবিড় সম্পর্ক
রাষ্ট্রের গুরুদায়িত্ব পালনকালেও জনবিচ্ছিন্ন নন আবদুল হামিদ। তাঁর নিজের এলাকা কিশোরগঞ্জের মানুষ শত নিরাপত্তার মধ্যেও বঙ্গভবনে এসে ভিড় করেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য, কথা বলার জন্য বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই তো গত সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখায় বসে কথা হচ্ছিল রাষ্ট্রপতির ভাই আবদুল হাইয়ের সঙ্গে। এলপিআরে যাওয়া সংসদ সচিবালয়ের ওই কর্মকর্তা বলছিলেন, এলাকার মানুষ নাছোড়বান্দা। তাঁরা গ্রাম থেকে আসেন। বলেন, হামিদ ভাইকে দেখব। নিরাপত্তার কথা তাঁরা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি একটাই, ‘আমাদের হামিদ মিয়াকে কেউ দূরে রাখতে পারবা না। ‘ অনেকেই গিয়ে অপেক্ষা করেন বঙ্গভবনের গেটে। তাঁরা জানেন ডাক একসময় পড়বেই। হয়ও তা-ই। দেখা করে তবে বাড়ি ফেরেন।
এর আগে ২০০৪ সালের শেষ দিকের কথা। একদিন সকালে সংসদে ঢোকার সময় দেখি, ১০-১২ জন লোক সংসদ ভবন এলাকায় ঘুরছেন। আর লুঙ্গি ও টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি তাঁদের সংসদ ভবন দেখাচ্ছেন। কাছে গিয়ে দেখলাম, ওই লুঙ্গি পরা লোকটিই বিরোধীদলীয় উপনেতা আবদুল হামিদ। সেদিন জেনেছিলাম, এমনটি তিনি মাঝেমধ্যেই করেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও হেলিকপ্টারে এলাকায় গিয়ে রিকশায় করে সংবর্ধনা নিতে গেছেন। সেখানে টমটমে চড়ে ঘুরেছেন। সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিয়েছেন।
মন পড়ে আছে হাওরে
এলাকাবাসীর জন্য বিভিন্ন সময় ডুকরে কেঁদে উঠতে ইচ্ছা করে রাষ্ট্রপতির। বিভিন্ন সময় তা অনেককেই জানিয়েছেন। গত বছরের ২ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের ইটনা কলেজ মাঠে সংবর্ধনা নিতে গিয়ে সেটা অকপটে স্বীকার করেন তিনি। ওই দিন হাওর এলাকার মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রামই হাওরবাসীর জীবন। হাওরের প্রবল ঢেউ থেকে বাঁচা, বাড়িঘর ও ফসল রক্ষার চিরসংগ্রামের কথা আমি জানি। তাই রাষ্ট্রপতি হলেও আমার মন পড়ে থাকে হাওরে। হৃদয়ের টানে, মাটির টানে বারবার ছুটে আসি আপনাদের কাছে। হাওরবাসীর হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা তথা এলাকার মানুষের প্রাণস্পন্দন ঢাকায় সুরক্ষিত প্রাসাদে বসে আমি অনুভব করি। প্রায়ই হারিয়ে যাই আমার শৈশব, স্কুল ও কলেজজীবন এবং সোনালি অতীতে।
‘
দুরন্ত কৈশোর
স্পিকারের দায়িত্বে থাকাকালে মাঝেমধ্যেই সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডা জমত সংসদ ভবনে স্পিকারের দপ্তরে। একদিন তিনিই বলছিলেন তাঁর দুরন্ত কৈশোরের কথা। ভৈরবে স্কুলের বোর্ডিংয়ে থেকে পড়ালেখা করতেন।
দায়িত্ব পালনে আপসহীন
কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সামনের কাতারে না থাকলেও তিনি সব সময় ছিলেন দায়িত্বশীল। অর্পিত দায়িত্ব সব সময় যথাযথভাবে পালন করেছেন। সর্বশেষ ২০০৯ সাল পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারারুদ্ধ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং ১৯৬৫ সালে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। এরপর মাত্র ২৬ বছর বয়সে ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স মুজিব বাহিনীর সাবসেক্টর কমান্ডারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর তিনি কারারুদ্ধ হন। এরপর ১৯৮৬ সালে তৃতীয়, ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
আবদুল হামিদ সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালের ১১ জুলাই স্পিকার নির্বাচিত হন। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় উপনেতা ছিলেন এবং নবম সংসদে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার নির্বাচিত হন। এর আগে ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা হাজি মোঃ তায়েব উদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুন। তিনি তিন পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক।