হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আগামী রোববারের সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ওই সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ঢাকা এবং আশপাশের কয়েকটি জেলার নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কয়েক দফা প্রস্তুতি সভা করেছে দলটি। গতকালও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে যৌথসভা করেছে বিএনপি।
সমাবেশের অনুমতি এখনো না পেলেও প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে সমাবেশের অনুমতির ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। আশা করি সরকার কোনো ধরনের বিঘ সৃষ্টি না করে বিরোধী দলের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী সমাবেশ করতে সহায়তা করবে।
জানা গেছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে গতকালের যৌথসভায় রোববারের সমাবেশ সফল করা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘ দিন পর এ রকম একটি সমাবেশ যেন সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে করা যায় সে ব্যাপারে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ঢাকার পার্শবর্তী বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিট নেতৃবৃন্দকেও একই নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশটি আমরা করতে চাই। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এখন পর্যন্ত আমরা সমাবেশের অনুমতি পাইনি। তবে আশা করছি, ১২ তারিখের জনসভার অনুমতি যথাসময়ে দেয়া হবে।
জনসভা করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করি, এই জনসভাটি করার জন্য সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। কারণ তারা সব সময়ই বলে থাকেন যে, তারা কোনো বাধা দেন না, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, মানুষের ও রাজনৈতিক দলগুলোর মত প্রকাশে তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। গতকাল তাদের একজন নেতা বলেছেন, তারা বাধা দেননি এবং এই ধরনের সমাবেশে কোনো বাধা নেই। আমরা আশা করব, তাদের এই কথাগুলো যেন সত্য প্রমাণিত হয়।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, হারুনুর রশীদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলার হাজী আবু আশফাক, মুন্সীগঞ্জের আবদুল হাই, কামরুজ্জামান রতন, মানিকগঞ্জের মইনুল ইসলাম শান্ত, গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন, কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, হাসানউদ্দিন সরকার, নরসিংদীর খায়রুল কবীর খোকন, নেসারউদ্দিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে যৌথসভায় বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আমরা ঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। কারণ কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের (সিপিসি) কথা বলে আমাদের অনুমতি দেয়া হয়নি। আমরা আশা করব, এই সমাবেশের অনুমতি তারা যথাসময়ে দেবেন; আমাদের যে গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই অধিকার প্রয়োগ করার সরকারের কাছ থেকে আমরা সেই সহযোগিতা পাবো।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রোববারের সমাবেশ সফল করা প্রসঙ্গে হাওর বার্তাকে বলেন, সমাবেশের ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি বিএনপির আছে। ইতোমধ্যে সমাবেশ সফল করার ব্যাপারে বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সাধারণত যেভাবে আমাদের সভা-সমাবেশ হয় এবারো সেভাবেই হবে।
মাঠ পরিদর্শন : এ দিকে গতকাল বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, উত্তরের সহসভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জুসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তারা বিকেল সাড়ে ৩টায় সোহরাওয়ার্দীতে যান এবং সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেন।
প্রস্তুতি সভা : রোববারে সমাবেশ সফল করতে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনও প্রস্তুতি শুরু করেছে। তারা বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে গতকাল দুপুরে প্রস্তুতি সভা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল ও মহিলা দল এবং ছাত্রদল দক্ষিণ ও পূর্বসহ অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও প্রস্তুতি সভা করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের যৌথসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের সঞ্চালনায় যৌথসভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা জেলা ও মহানগর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, সরকারের দুঃশাসন, নিপীড়ন নির্যাতনে অতিষ্ঠ জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই অনির্বাচিত সরকারকে ‘না’ বলতে তারা উদগ্রীব হয়ে আছেন। আগামী ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশে জনতার জোয়ার সৃষ্টি হবে। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকা মহানগর দেিণর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড, পাড়া, মহল্লা থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সে দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ হাওর বার্তাকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পর বেগম খালেদা জিয়ার একটি সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি সরকার আমাদের অনুমতি দিলে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ করতে পারব।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, আমরা দেশনেত্রীর সমাবেশ সফল করার জন্য সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর প্রত্যেকটি থানা ও অন্যান্য ইউনিট নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। আশা করি সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ করতে পারব।