হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি ইচ্ছে করে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে না গিয়ে এখন সরকারকে অপবাদ দিচ্ছে। জিয়ার মাজারে কারও যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোন বাধা ছিল না। এ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত দলের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনের অজুহাতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দলের নেতাকর্মীদেরকে যেতে দেয়নি।
বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব, আপনি বিএনপির মহাসচিব। আমি সবিনয়ে জানাচ্ছি, আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, তাদেরকে কমনওয়েলথ সম্মেলনের কারণে একটু শৃংখলার সঙ্গে মরহুম জিয়াউর রহমানের মাজারে যেতে বলা হয়েছিল। পুলিশের অনুমতি ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই আমাকে বলেছেন।’
‘তারা ইচ্ছে করে সেখানে না গিয়ে অপবাদ দিচ্ছে। জিয়ার মাজারে যাওয়ার কোন বাধা সরকারের পক্ষ থেকে ছিল না’, বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা একটা সার্বজনীন প্রেগ্রাম। যেখানে সভাপতিত্ব করবেন ড. আনিসুজ্জামান। এটার সঙ্গে পলিটিক্যাল প্রোগ্রামকে মেলানোর মানেটা কি ?’
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় ১৮ নভেম্বর নাগরিক সমাজের উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। আর আজ সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান সভাপতিত্ব করবেন বলে জানান। আর প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা বলেন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘নাগরিক সমাজের যে প্রোগ্রাম আছে ১৮ নভেম্বর। সেটারও কিন্তু পারমিশন চাওয়া হয়েছে। এখনো আমরা পারমিশন পাইনি। পারমিশন আওয়ামী লীগের কাছে নেই। পারমিশন হলো মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের অর্থাৎ পারমিশনটা হল পুলিশের কাছে।’
অনুমতি দেবে কি দেবে না বা অনুমতি দেওয়ার জন্য কোন বাধা আছে কি না- সেটা তো পুলিশের ব্যাপার। আওয়ামী লীগ এটা ডিসাইড করবে না। ডিসাইড করবে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এটা সব সময় হয়ে এসেছে। কিন্তু মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন যে, এটার অনুমতি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে দেশে গণতন্ত্র আছে?’
এ ব্যাপারে কাদের বিএনপির বিগত শাসনামলের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের কর্মসূচির উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের বারান্দায় আমরা যখন মঞ্চ করেছিলাম, আমাদের সেই মিটিং পুলিশ প- করে দিয়েছে, মাইক ছিনিয়ে নিয়েছে। তখন গণতন্ত্র কোথায় ছিল ? আমরা যখন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আমাদের পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশকে হাওয়া ভবনের নির্দেশে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এতে ২২ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। সেদিন গণতন্ত্র কোথায় ছিল ?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অনুমতি চেয়েছি কিন্তু তারা বহুবার অনুমতি দেয়নি। অনুমতি দিয়েও সভাস্থলে আক্রমণ করে আমাদের সভা প- করে দিয়েছিল তৎকালীন বিএনপি সরকার।’
‘অনুমতি দেওয়া, না দেওয়াটা পুলিশ কমিশনারের ব্যাপার। সেখানে তারা এখনো অনুমতি পায়নি। পুলিশ এখনো কোন জবাব দেয়নি। কাজেই পুলিশ কি জবাব দেয়, সেটার জন্য তারা অপেক্ষা করুক। হঠাৎ করে গণতন্ত্রের সঙ্গে তাদের সমাবেশকে মেলাচ্ছেন, এটা তো একটার সঙ্গে আরেকটা মেলে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি অনুমতি কোনখানে না কোনখানে পেয়ে যান? তাহলে, কেন সরকারকে আগে ভাগে শর্ত দিচ্ছেন। নিজেদের আমলটা একটু ভেবে দেখুন।’
‘সমাবেশের সঙ্গে আইনশৃংখলার ব্যাপার আছে’ উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘আমাদের আজকের এই কালচারাল প্রোগ্রাম আমরা তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনের পাশে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদেরকে অনুরোধ করেছে, এখানে আইনশৃংখলাজনিত কিছু সমস্যা আছে, সে কারণে আমাদেরকে এখানে প্রোগ্রাম শিফট করতে হয়েছে।’
ডিএমপি তো সরকারের অধীনেই তাহলে কি বিএনপি সমাবেশের অনুমতি পাবে না- এ প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘আজকে আমাদেরকেও করতে দিল না। আমাদেরকেও অনুরোধ করেছে, সেজন্য আমরা শিফট করেছি।’
এছাড়াও আগে সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এতদিন যে ভাষণ ছিল, বাঙালির জাতির সম্পদ। এখন সেই ঐতিহাসিক ভাষণ সমগ্র বিশ্বের সম্পদ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে। ৭ মার্চ মাত্র ১৭মিনিটের এই ভাষণ একটা জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল এবং সাড়ে সাত কোটি বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ডাকে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।