হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুর এখন দিনকে দিন দখল হয়ে যাচ্ছে। একসময় রংপুরের ছয়টি আসনই জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও এখন সেই চিত্র আর নেই। রংপুর-১ ও ৩ আসন ছাড়া বাকি চারটা ইতিমধ্যে চলে গেছে মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের ঘরে। আগামী নির্বাচনে রংপুর-১ আসনটিও দখলে নিতে তৎপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। এ জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। জাতীয় পার্টিও নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চায়। যেকোনো মূল্যে তারা রংপুরের ছয়টি আসন আবার নিজেদের কবজায় আনতে চাইছে। সে জন্য দলীয় প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘন ঘন রংপুর সফরে আসছেন।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রংপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভেতরে ভেতরে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে সরকারের প্রধান দুই শরিক আওয়ামী লীগ ও জাপার মধ্যে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-১ আসনটি জাতীয় পার্টির একান্ত নিজের আসন বলে পরিচিত। এই আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী।
জাপা সূত্র জানায়, দলের জন্য অনেকটা নির্ধারিত আসন রংপুর-১। ৯০ সালের পর থেকে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাই বরাবর জয়লাভ করে আসছেন। তাই সব ভেদাভেদ ভুলে আসনটি তারা ধরে রাখতে চায়।
মশিউর রহমান রাঙ্গা এর আগেও এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি এখানে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে তার কাছের জনরা জানান। জোটগত নির্বাচন হলে তিনি ছাড় পেতে পারেন আওয়ামী লীগ থেকে এমনটাই আশা করছেন জাপার নেতাকর্মীরা।
কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ আছে কঠোর অবস্থানে। যেকোনো মূল্যে জাতীয় পার্টির এই আসনটি চায় তারা। মহাজোটের শরিক হলেও এবার আর আসনটি জাপাকে ছাড় দেবে না তারা। স্থানীয় নেতাদের দাবি, তারা এখানে দল গুছিয়ে ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রংপুর-১ আসনে তারা এখন অনেকটাই শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত। নির্বাচনের জন্য নিজেদের গুছিয়ে রেখেছেন। জোটগতভাবে নির্বাচন না করে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আলাদা প্রার্থী দিলে ভোটের লড়াই হবে, যেটা আগে কখনো হয়নি।
দুই দলের ভেতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আসনে আগামী নির্বাচন জাপার জন্য সহজ হবে না। আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি নিজ দলের ভেতরে দ্বন্দ্বও জাপাকে ভোগাবে।
জাপার চেয়ারম্যান এরশাদের ছোট ভাইয়ের ছেলে হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী। এর আগে এখান থেকে নির্বাচন করেছেন তিনি। এবারও তিনি এখান থেকে নির্বাচন করবেন, সেটা দলের মনোনয়নে হোক কিংবা স্বতন্ত্র হিসেবে। তবে দলের মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী এরশাদের এই ভাতিজা।
এরশাদের ভাগ্নে হিসেবে পরিচিত মশিউর রহমান রাঙ্গা নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টি করি। দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে অবশ্যই নির্বাচন করব।’
আগামী নির্বাচনে নিজের মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাঙ্গা বলেন, ‘আমরা ঐকমত্যের সরকার গঠন করেছি। অন্য দলের লোক হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিত্ব পেয়েছি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী গঙ্গচড়ার উন্নয়নের জন্য প্রচুর বরাদ্দ দিয়েছেন। এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে।’ আগামী নির্বাচনে গঙ্গাচড়ার মানুষ তাকে ভোট দেবে বলে আশা করেন রাঙ্গা।
হোসেন মকবুল শাহরিয়ার ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন আড়াই হাজারের বেশি ভোটারের স্বাক্ষর নিয়ে। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশের কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। গঙ্গাচড়ায় দলের সাংগঠনিক কাজে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গঙ্গাচড়া উপজেলার ৯০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করেছি আমি। দল যদি মনোনয়ন না দেয় তাহলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গঙ্গাচড়া থেকে নির্বাচন করব।’ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবেন বলে আশা করেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রুহুল আমীন সাংবাদিকদের জানান, এই আসনে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। তিনি আগামী নির্বাচনে গঙ্গচড়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে রুহুল আমীন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের কারণে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশী। এ জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন।
গঙ্গচড়ায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে রুহুল আমীন আশা প্রকাশ করেন এখানে তার দল জয় লাভ করবে।
আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলুও নিজের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছি। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি জয়লাভ করতে পারব।’
গোটা রংপুরের মতো এই আসনে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির খুব একটা শক্ত অবস্থান আগে ছিল না। তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু সাংবাদিকদের জানান, জাতীয় পার্টির আগের অবস্থান নেই। এরশাদের আবেগ শেষ হয়ে গেছে। তাই বিএনপির অবস্থান এখানে আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।’ আগামী নির্বাচনে গঙ্গাচড়ায় বিএনপি ভালো করবে বলে আশা করেন তিনি।
বিএনপির নেতা বলেন, দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে তিনি এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঠিক না হলেও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা অনেকটা শুরু হয়ে গেছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পারিবারিক, মসজিদ মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।