বলা যায়, পুরো হবিগঞ্জ জুড়েই বিস্তৃত পাহাড় ও হাওর। এখানে গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস, মোরগ, ভেড়া পালন অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের আয়ের উৎস। তবে ভেড়া পালনকে অনেকেই সাবলম্বী হওয়ার পথ হিসাবে বেছে নিয়েছেন। তাই হবিগঞ্জের চা-বাগান ও পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে এই ভেড়াদের পাল দেখতে পাওয়া যায়। এখন বিস্তৃত হাওর এলাকায়ও ভেড়া পালনের আগ্রহ বেড়েছে। এতে সফলতাও আসছে। ভেড়া পালন করে হাওর এলাকায় অনেক বেকার স্বাবলম্বীও হয়েছেন।
চুনারুঘাট উপজেলার চা-শ্রমিক অরুণ সাঁওতাল, সাধন ভৌমিক, কিরণ চাষা, চন্দন সাঁওতাল, সূর্য্য সাওতাল, ফুলমতি চাষা চা-বাগানে কাজের ফাঁকে ভেড়াও পালন করেন। এতে তারা আর্র্থিকভাবেও অনেক লাভবান। তাদের সঙ্গে তালমিলিয়ে নবীগঞ্জ হাওর এলাকার ফুল বানু জানান, তারও রয়েছে ২৫টি ভেড়া।
ফুল বানু যে লাভের কথা শোনালেন তাও আশাবাদী হওয়ার মতো। বললেন, ‘এর আগেও আরো ২০টি ভেড়া বিক্রি করে ঘরের উপরে টিন লাগিয়েছি। তাই এ রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারছি।’ এভাবেই ভেড়া পালন করে লাভের গল্প শোনালেন তিনি।
হাওরের বিস্তৃত এলাকায় ভেড়ার বিচরণের জন্য দারুণ পরিবেশ বিদ্যমান। তাই ফুল বানুর মতো অনেক নারী-ই হাওরে ভেড়া পালন করে সাবলম্বী হয়ে ওঠার পথ খুঁজে নিচ্ছেন। আর এসব আগ্রহীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
সম্প্রতি এই অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘সমাজ ভিত্তিক ও বাণিজ্যিক খামারে দেশি ভেড়ার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্প (কম্পোনেট-বি)’ এর ২য় পর্যায় প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয় । হবিগঞ্জের ৮টি উপজেলার ভেড়া খামারি ও বেকার লোকদের মাঝে এ প্রশিক্ষণের তদারক করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাহবুবুল আলম।
এরই ধারাবাহিকতায় নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হল রুমে উদ্বোধন করা হয় ৫দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এতে অংশ নেন ২০ জন নারী-পুরুষ। কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীগণ জানতে পারছেন কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে ভেড়া পালন, সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ঘটানো যায়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলার ৮টি উপজেলায় ২০ জন করে মোট ১৬০ লোকের মধ্যে ভেড়া প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ভেড়া পালন লাভজনক। বাড়ি বাড়ি ভেড়া খামার গড়া প্রয়োজন। তাহলে নিজের যেমনটা উপকারে আসছে, তেমনি দেশও লাভবান হবে। এ প্রশিক্ষণে ভেড়া পালনের নিয়মনীতির উপর নানা ধরণের তথ্য-পরামর্শ উপস্থাপন করা হয়।’