ঢাকা ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দলটা কী ছিল কী হলো

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১০:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৭
  • ২২৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বপ্নযাত্রা কি শেষ? না, এখনই এমন অলক্ষুনে কথা বলার কোনো যুক্তি নেই। তবে খোদ অধিনায়ক মাশরাফি যা বলেছেন, সেই সত্যিটা সবাইকে মানতে হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এটা ছিল ‘সতর্কসংকেত’। বাস্তবতার আয়নায় নিজেদের আসল অবস্থাটা দেখে নেওয়া। করণীয় ঠিক করা। ঘড়ি অ্যালার্ম বাজিয়েছে। সেই অ্যালার্মে ঘুম ভাঙলেই ভালো, না ভাঙলে? সেটি কিন্তু সর্বনেশে ঘুম!
গত দুই বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে সবচেয়ে পরিচিত বাক্যটি মনে আছে তো? ‘ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া দল’। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর এ বাক্য ব্যবহার করতে এখন একটু হলেও বাধবে সবার। প্রথম ম্যাচে ২৭৮ রান করেও ১০ উইকেটের হার। পরের দুই ম্যাচে রানের পাহাড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হওয়া দল। দক্ষিণ আফ্রিকায় সফরকারী সব দলেরই বাজে সময় যায়। এই তো, গত বছর অস্ট্রেলিয়াও পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ধবল ধোলাই হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণটা কিন্তু চোখে লাগছেই।
দুশ্চিন্তার বিষয়, এ পারফরম্যান্স আলাদা কোনো ঘটনা নয়। এক বছর ধরেই বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স শঙ্কা জাগানো। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালে ওঠায় সময়টা সাফল্যমণ্ডিত মনে হলেও চরম সত্য হলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে না গেলে গ্রুপ পর্ব পেরোনো হতো না মাশরাফিদের। তবু ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে দুবার হারানোকে সাফল্য হিসেবে রাখতেই হচ্ছে।
কিন্তু গত অক্টোবর থেকেই কিন্তু ওয়ানডেতে ভালো সময় যাচ্ছে না বাংলাদেশের। এ সময়ে চারটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে একটিতেও জেতেনি বাংলাদেশ। দেশের বাইরের দুটি সিরিজেই হয়েছে ধবলধোলাই। ২০টির মধ্যে মাত্র ৫টি ওয়ানডেতে জিতেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ, মাত্র ২৫ শতাংশ সাফল্য! অথচ এর আগের দুই বছরে ২৬টি ওয়ানডে খেলে ২০টিতেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে কাকে হারায়নি? পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা! টানা ছয়টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জেতার উপমহাদেশীয় রেকর্ডও গড়েছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা কিংবা সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করাও এ সময়েই হয়েছে।
সব অর্জনই এখন সবাই ভুলে যেতে বসেছে। মাঝের দুই বছরে যে সূত্র মেনে সাফল্য এসেছিল, সবই যে হঠাৎ ভুলে বসেছে বাংলাদেশ। দলের পেসারদের বলে কোনো ধার নেই, স্পিনাররাও উইকেটের সহযোগিতা না পেলে ‘টার্ন’ কী জিনিস ভুলে যান। ব্যাটিংয়ের অবস্থাও তথৈবচ। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের মূল অস্ত্র ছিল তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেল। অভিজ্ঞরা পথ দেখাতেন আর তরুণেরা আগ্রাসন ও শৌর্য দেখিয়ে জয় এনে দিয়েছেন দলকে।
বাংলাদেশ দল এটিই হারিয়ে ফেলেছে। অভিজ্ঞরা তাও যা একটু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন; গত এক বছরে দলের সব জয় এসেছে কিন্তু তাঁদের সুবাদেই। কিন্তু তরুণদের সবারই দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নিয়মিত। মোস্তাফিজের কাটার, তাসকিনের গতি, সৌম্যের নান্দনিক শট কিংবা সাব্বিরের মারমুখী ব্যাটিং অথবা ভারসাম্য—সবই যে প্রায় হারিয়ে যাওয়া রত্ন! এভাবে চলতে থাকলে ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে আশার বেলুন ফুটো হতে দেরি নেই।
অতএব সময় থাকতেই সাবধান!

প্রথম আলো

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

দলটা কী ছিল কী হলো

আপডেট টাইম : ১২:১০:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বপ্নযাত্রা কি শেষ? না, এখনই এমন অলক্ষুনে কথা বলার কোনো যুক্তি নেই। তবে খোদ অধিনায়ক মাশরাফি যা বলেছেন, সেই সত্যিটা সবাইকে মানতে হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এটা ছিল ‘সতর্কসংকেত’। বাস্তবতার আয়নায় নিজেদের আসল অবস্থাটা দেখে নেওয়া। করণীয় ঠিক করা। ঘড়ি অ্যালার্ম বাজিয়েছে। সেই অ্যালার্মে ঘুম ভাঙলেই ভালো, না ভাঙলে? সেটি কিন্তু সর্বনেশে ঘুম!
গত দুই বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে সবচেয়ে পরিচিত বাক্যটি মনে আছে তো? ‘ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া দল’। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর এ বাক্য ব্যবহার করতে এখন একটু হলেও বাধবে সবার। প্রথম ম্যাচে ২৭৮ রান করেও ১০ উইকেটের হার। পরের দুই ম্যাচে রানের পাহাড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হওয়া দল। দক্ষিণ আফ্রিকায় সফরকারী সব দলেরই বাজে সময় যায়। এই তো, গত বছর অস্ট্রেলিয়াও পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ধবল ধোলাই হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণটা কিন্তু চোখে লাগছেই।
দুশ্চিন্তার বিষয়, এ পারফরম্যান্স আলাদা কোনো ঘটনা নয়। এক বছর ধরেই বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স শঙ্কা জাগানো। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালে ওঠায় সময়টা সাফল্যমণ্ডিত মনে হলেও চরম সত্য হলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে না গেলে গ্রুপ পর্ব পেরোনো হতো না মাশরাফিদের। তবু ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে দুবার হারানোকে সাফল্য হিসেবে রাখতেই হচ্ছে।
কিন্তু গত অক্টোবর থেকেই কিন্তু ওয়ানডেতে ভালো সময় যাচ্ছে না বাংলাদেশের। এ সময়ে চারটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে একটিতেও জেতেনি বাংলাদেশ। দেশের বাইরের দুটি সিরিজেই হয়েছে ধবলধোলাই। ২০টির মধ্যে মাত্র ৫টি ওয়ানডেতে জিতেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ, মাত্র ২৫ শতাংশ সাফল্য! অথচ এর আগের দুই বছরে ২৬টি ওয়ানডে খেলে ২০টিতেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে কাকে হারায়নি? পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা! টানা ছয়টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জেতার উপমহাদেশীয় রেকর্ডও গড়েছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা কিংবা সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করাও এ সময়েই হয়েছে।
সব অর্জনই এখন সবাই ভুলে যেতে বসেছে। মাঝের দুই বছরে যে সূত্র মেনে সাফল্য এসেছিল, সবই যে হঠাৎ ভুলে বসেছে বাংলাদেশ। দলের পেসারদের বলে কোনো ধার নেই, স্পিনাররাও উইকেটের সহযোগিতা না পেলে ‘টার্ন’ কী জিনিস ভুলে যান। ব্যাটিংয়ের অবস্থাও তথৈবচ। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের মূল অস্ত্র ছিল তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেল। অভিজ্ঞরা পথ দেখাতেন আর তরুণেরা আগ্রাসন ও শৌর্য দেখিয়ে জয় এনে দিয়েছেন দলকে।
বাংলাদেশ দল এটিই হারিয়ে ফেলেছে। অভিজ্ঞরা তাও যা একটু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন; গত এক বছরে দলের সব জয় এসেছে কিন্তু তাঁদের সুবাদেই। কিন্তু তরুণদের সবারই দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নিয়মিত। মোস্তাফিজের কাটার, তাসকিনের গতি, সৌম্যের নান্দনিক শট কিংবা সাব্বিরের মারমুখী ব্যাটিং অথবা ভারসাম্য—সবই যে প্রায় হারিয়ে যাওয়া রত্ন! এভাবে চলতে থাকলে ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে আশার বেলুন ফুটো হতে দেরি নেই।
অতএব সময় থাকতেই সাবধান!

প্রথম আলো