ঢাকা ০২:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিরাপত্তার জন্য হুমকি রোহিঙ্গাদের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৭:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৯৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপকতা এবং লাখ লাখ মানুষের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইসলামপন্থী সংগঠনের পক্ষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকিও প্রচার করা হয়েছে। এসব পর্যবেক্ষণ থেকে এ অঞ্চলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি হয়েছে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান ও তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ রোহিঙ্গাদের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।

মুনীরুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘বড় ধরনের উগ্র মতবাদ ছড়িয়ে দেয়া ও বিস্তার লাভের একটা ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী গিয়ে তাদের উগ্র মতবাদ দিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।’ একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, এখান থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠী সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। আমরা এরই মধ্যে জানি, আরসা নামে যে সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংগঠিত হয়েছে, তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভেতর থেকে সদস্য সংগ্রহের জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে। পর্যবেক্ষণ বলছে, এরই মধ্যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি এসেছে আল কায়দার পক্ষ থেকে। বিশেষ করে ইয়েমেনভিত্তিক আল কায়দা এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছে। এছাড়া তালেবান, সোমালিয়ার আল শাবাব গোষ্ঠী এবং ইসলামিক স্টেটপন্থী গ্রুপগুলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের আহ্বান জানাচ্ছে।

মুনীরুজ্জামান জানান, ইদানীং আমরা দেখতে পেয়েছি, চেচেনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে তাদের প্রতি সমর্থন এসেছে। ইন্দোনেশিয়ার বেশকিছু উগ্র মতবাদের গোষ্ঠীর কাছ থেকে শুধু সমর্থনই আসেনি, তারা সেখানে একটি নতুন করে ব্যাটালিয়ন সংগঠন করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ভলান্টিয়ার সংগ্রহ করে ওখানে (ইন্দোনেশিয়া) প্রশিক্ষণ নিয়ে এখানে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তারা সংগ্রামে লিপ্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে এবং এরই মধ্যে তারা বেশকিছু ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড করেছে। এরকম উদ্বেগ থাকলেও বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত জঙ্গি তৎপরতার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। তবে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বর্তমান মানসিকতা এবং তাদের মধ্যে প্রতিহিংসাপরায়ণতার সুযোগ নিয়ে সদস্য সংগ্রহের ঝুঁকি উড়িয়ে দিচ্ছে না নিরাপত্তা বাহিনী।

পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘বিশেষ করে পুলিশ-র‌্যাব আমরা অত্যন্ত সতর্ক আছি। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি আছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ একটি পুলিশের টিম কাজ করছে। কোনো বেআইনি সংগঠন, এদের বেআইনি পথে বা জঙ্গিপথে, সন্ত্রাসী বা উগ্রবাদে নেয়ার চেষ্টা করছে কিনা, সেদিকে আমাদের নজর আছে।’ কিন্তু বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা যেভাবে বসতি গেড়েছে এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, তাতে নিরাপত্তার প্রশ্নে সার্বিক পরিস্থিতি জটিল বলেই মনে করছে পুলিশ বিভাগ। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিশেষ প্রস্তাব দিয়েছে।

শহীদুল হক জানান, এ সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি এবং সমস্যা সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ কারণে ওখানে একটা স্থায়ী পুলিশি অবস্থান থাকা দরকার। আমরা ৮০০ থেকে ১ হাজার সদস্যের একটা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ওখানে রেইজ করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। এদিকে ২৫ আগস্ট হামলার পর বাংলাদেশে ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছেন। এসব রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দিতে শুরু থেকেই দেশি-বিদেশি এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ শুরু করে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুনীরুজ্জামান মনে করেন, ত্রাণ ও সহায়তা নিয়ে যারা এগিয়ে এসেছে, তাদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তার কথায়, এটা আমাদের পরিভাষায় যদি বলি, এটাকে ‘হামাস ফ্যাক্টর’ বলা যায়। এ কারণে রাষ্ট্রের অনুদান পৌঁছানোর আগে এ ধরনের সংগঠন পৌঁছে যায়, সেখানে এ সংগঠনগুলো খুব সক্রিয় হয়ে যায়। আমরা মাঠপর্যায়ে যে বিশ্লেষণ দেখতে পাচ্ছি, সেখানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন এনজিও এবং সংগঠন এখানে উপস্থিত হয়েছে। এদের সমন্বয় করার জন্য খুব কার্যক্রম আমরা নিয়েছি বলেও মনে হচ্ছে না। তারা প্রায় স্বাধীনভাবে এখানে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা কে কী করছে, কী ধরনের মতবাদ নিয়ে এসেছে, ত্রাণের সঙ্গে অন্য কোনো মতবাদ নিয়ে এসেছে কিনা, আমরা জানি না। তাই এ ধরনের আশঙ্কা আমাদের সবসময় থেকেই যাবে।

সূত্র : বিবিসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নিরাপত্তার জন্য হুমকি রোহিঙ্গাদের

আপডেট টাইম : ১২:২৭:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপকতা এবং লাখ লাখ মানুষের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইসলামপন্থী সংগঠনের পক্ষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকিও প্রচার করা হয়েছে। এসব পর্যবেক্ষণ থেকে এ অঞ্চলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি হয়েছে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান ও তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ রোহিঙ্গাদের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।

মুনীরুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘বড় ধরনের উগ্র মতবাদ ছড়িয়ে দেয়া ও বিস্তার লাভের একটা ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী গিয়ে তাদের উগ্র মতবাদ দিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।’ একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, এখান থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠী সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। আমরা এরই মধ্যে জানি, আরসা নামে যে সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংগঠিত হয়েছে, তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভেতর থেকে সদস্য সংগ্রহের জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে। পর্যবেক্ষণ বলছে, এরই মধ্যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি এসেছে আল কায়দার পক্ষ থেকে। বিশেষ করে ইয়েমেনভিত্তিক আল কায়দা এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছে। এছাড়া তালেবান, সোমালিয়ার আল শাবাব গোষ্ঠী এবং ইসলামিক স্টেটপন্থী গ্রুপগুলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের আহ্বান জানাচ্ছে।

মুনীরুজ্জামান জানান, ইদানীং আমরা দেখতে পেয়েছি, চেচেনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে তাদের প্রতি সমর্থন এসেছে। ইন্দোনেশিয়ার বেশকিছু উগ্র মতবাদের গোষ্ঠীর কাছ থেকে শুধু সমর্থনই আসেনি, তারা সেখানে একটি নতুন করে ব্যাটালিয়ন সংগঠন করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ভলান্টিয়ার সংগ্রহ করে ওখানে (ইন্দোনেশিয়া) প্রশিক্ষণ নিয়ে এখানে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তারা সংগ্রামে লিপ্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে এবং এরই মধ্যে তারা বেশকিছু ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড করেছে। এরকম উদ্বেগ থাকলেও বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত জঙ্গি তৎপরতার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। তবে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বর্তমান মানসিকতা এবং তাদের মধ্যে প্রতিহিংসাপরায়ণতার সুযোগ নিয়ে সদস্য সংগ্রহের ঝুঁকি উড়িয়ে দিচ্ছে না নিরাপত্তা বাহিনী।

পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘বিশেষ করে পুলিশ-র‌্যাব আমরা অত্যন্ত সতর্ক আছি। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি আছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ একটি পুলিশের টিম কাজ করছে। কোনো বেআইনি সংগঠন, এদের বেআইনি পথে বা জঙ্গিপথে, সন্ত্রাসী বা উগ্রবাদে নেয়ার চেষ্টা করছে কিনা, সেদিকে আমাদের নজর আছে।’ কিন্তু বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা যেভাবে বসতি গেড়েছে এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, তাতে নিরাপত্তার প্রশ্নে সার্বিক পরিস্থিতি জটিল বলেই মনে করছে পুলিশ বিভাগ। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিশেষ প্রস্তাব দিয়েছে।

শহীদুল হক জানান, এ সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি এবং সমস্যা সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ কারণে ওখানে একটা স্থায়ী পুলিশি অবস্থান থাকা দরকার। আমরা ৮০০ থেকে ১ হাজার সদস্যের একটা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ওখানে রেইজ করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। এদিকে ২৫ আগস্ট হামলার পর বাংলাদেশে ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছেন। এসব রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দিতে শুরু থেকেই দেশি-বিদেশি এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ শুরু করে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুনীরুজ্জামান মনে করেন, ত্রাণ ও সহায়তা নিয়ে যারা এগিয়ে এসেছে, তাদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তার কথায়, এটা আমাদের পরিভাষায় যদি বলি, এটাকে ‘হামাস ফ্যাক্টর’ বলা যায়। এ কারণে রাষ্ট্রের অনুদান পৌঁছানোর আগে এ ধরনের সংগঠন পৌঁছে যায়, সেখানে এ সংগঠনগুলো খুব সক্রিয় হয়ে যায়। আমরা মাঠপর্যায়ে যে বিশ্লেষণ দেখতে পাচ্ছি, সেখানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন এনজিও এবং সংগঠন এখানে উপস্থিত হয়েছে। এদের সমন্বয় করার জন্য খুব কার্যক্রম আমরা নিয়েছি বলেও মনে হচ্ছে না। তারা প্রায় স্বাধীনভাবে এখানে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা কে কী করছে, কী ধরনের মতবাদ নিয়ে এসেছে, ত্রাণের সঙ্গে অন্য কোনো মতবাদ নিয়ে এসেছে কিনা, আমরা জানি না। তাই এ ধরনের আশঙ্কা আমাদের সবসময় থেকেই যাবে।

সূত্র : বিবিসি