ঢাকা ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতার মতামত জরিপ জানুয়ারিতে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ আসামি রিমান্ডে বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

আসিয়ানে অনৈক্যের সুর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৮:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ অক্টোবর ২০১৭
  • ৩৯৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আসিয়ান কিছু করতে পারছে না, তারা একরকম অচল হয়ে গেছে। ব্যাপারটা পরিহাসেরও বাইরে চলে গেছে। কারণ, ১০ জাতির এই জোটটি জাতিসংঘের চেয়েও বেশি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা ও সংকট অনুমিতভাবেই মিয়ানমারকে আসিয়ান কেন্দ্র এবং এই অঞ্চলের জনমত থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ এটা বুঝতে পারেনি যে মালয়েশিয়া একইভাবে অনেক দূরে এমন নীতিনিষ্ঠ অবস্থান নেবে। আসিয়ানে এতটাই অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে যে তারা সুন্দর একটি বিবৃতিও দিতে পারছে না।

সে কারণে রোহিঙ্গা প্রশ্নে মালয়েশিয়া আসিয়ান থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে সক্ষম না হওয়ায় বা সে ব্যাপারে অনিচ্ছুক হওয়ায় আসিয়ান মৌনব্রত পালন করছে। সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালান পিটার গায়েতানো এরপর নিজেই কিছু বলার দায়িত্ব কাঁধে নেন। তিনি খুবই মৃদু ও উদ্যোগহীন এমন এক বিবৃতি দিয়ে ভেবেছিলেন, এতে কারও আপত্তি থাকবে না।

সেখানেই তিনি ভুলটা করেছেন। তাঁর বিবৃতিতে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বর্তমান ঘটনাবলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মালয়েশিয়া সঙ্গে সঙ্গে জোটের বাইরে গিয়ে তাঁর বিবৃতির সমালোচনা করে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফা আমান যে বিবৃতি দিলেন, সেখানে তিনি ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করেন এই বলে যে তাঁর বিবৃতিতে ‘বাস্তব পরিস্থিতির ভুল উপস্থাপন রয়েছে’।

আমান ভুল বলেননি। আসিয়ান চেয়ারম্যানের কিছু না করে উদ্বেগ প্রকাশ করাটা কাজের কিছু হয়নি। আমান যা বলেছেন, তার চেয়ে ভালো কিছু আর কেউ বলতে পারেন না। চেয়ারম্যান মিয়ানমারের নাম মুখে না এনে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ এড়িয়ে গেছেন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে শোচনীয় ভূমিকা পালন করছে এবং রোহিঙ্গা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে নারকীয় সহিংসতা চালাচ্ছে—এসব বিষয় চেয়ারম্যানের বিবৃতিতে আসেনি। এ ছাড়া গায়েতানো নির্লজ্জভাবে মিয়ানমার সরকারের ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার না করার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমান বলেছেন, ফিলিপিনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মতির ভিত্তিতে কাজ না করে আসিয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়মটি ভেঙেছেন। আসিয়ানের চেয়ারম্যান অর্থহীন একটি বিবৃতি দিয়ে সবাইকে খুশি করতে চাইলেও বাস্তবে তিনি সবাইকে অখুশি করেছেন। এর মধ্যে থাইল্যান্ডসহ আরও আধা ডজন আসিয়ান সদস্য আছে, যারা নীরব থাকতে বাধ্য হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকটে আসিয়ান বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, আরেক দিকে অং সান সু চির নেতৃত্বহীনতা, আর এখন তো এই তালিকায় অনিবার্যভাবে আরসা যুক্ত হয়েছে, যাদের আবার বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতা আছে। গায়েতানো যে ‘মতৈক্যের’ কথা বলেছেন, তাতে উল্লিখিত কারণের প্রথম দুটি অগ্রাহ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে আমান পরবর্তী সমস্যাটি অগ্রাহ্য করেছেন। এ অবস্থায় জাতিসংঘ, সৌদি আরব ও তুরস্ক যেখানে এই মানবিক সংকটে সাড়া দিয়েছে, সেখানে আসিয়ান হাত মোচড়াচ্ছে।

এই সংকটের বহুবিধ কারণ আছে, যার মধ্যে কিছু সম্প্রতি উদ্ভূত হয়েছে আর বাকিগুলোর উদ্ভব অনেক আগে। অভিযোগের আঙুলটা মূলত মিয়ানমার সরকারের দিকে। এমনকি এরা এটাও স্বীকার করে না যে এই পাঁচ লাখ শরণার্থীর জন্য দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করা দরকার। তবে সবাইকে সন্তুষ্ট করার মতো অনেক কিছুই আছে। ম্যানিলার কর্মকাণ্ডে মালয়েশিয়ার হঠাৎ ও ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় আসিয়ানের ভূমিকা আরও খর্ব হয়েছে। এদিকে থাইল্যান্ড শেষ পর্যায়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। এ ছাড়া তারা হয়তো ‘নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করত’। বাকি দেশগুলোর মধ্যে অধিকাংশই কিছু করতে রাজি নয়, পাছে বিভাজন আরও বাড়ে এই আশঙ্কায়।

গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী পরিচালনা করা এবং তার সঙ্গে আবার শ্রদ্ধা পাওয়া—এ দুটো সম্ভব নয়। শরণার্থীদের ত্রাণ দিতে আসিয়ানের শক্তিশালী ঐক্য দরকার ছিল। বস্তুত, নিজের স্বার্থেই আসিয়ানের উচিত পলায়নরত রোহিঙ্গাদের সাহায্য করা। আরেক দফা বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় ফিলিপাইনসহ প্রতিবেশীদের যাতে শরণার্থী আশ্রয় দিতে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে আসিয়ানের বাস্তুচ্যুতি ঠেকাতে হবে, যেটা তার গুরুত্বপূর্ণ নীতি হওয়া উচিত। মনে হচ্ছে সংস্থাটি শুধু দোনোমনা করছে তা নয়, তারা যেন হিমায়িত হয়ে গেছে। আর এটা এমন সময় ঘটছে, যখন কূটনৈতিক নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল

আসিয়ানে অনৈক্যের সুর

আপডেট টাইম : ১১:৪৮:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আসিয়ান কিছু করতে পারছে না, তারা একরকম অচল হয়ে গেছে। ব্যাপারটা পরিহাসেরও বাইরে চলে গেছে। কারণ, ১০ জাতির এই জোটটি জাতিসংঘের চেয়েও বেশি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা ও সংকট অনুমিতভাবেই মিয়ানমারকে আসিয়ান কেন্দ্র এবং এই অঞ্চলের জনমত থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ এটা বুঝতে পারেনি যে মালয়েশিয়া একইভাবে অনেক দূরে এমন নীতিনিষ্ঠ অবস্থান নেবে। আসিয়ানে এতটাই অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে যে তারা সুন্দর একটি বিবৃতিও দিতে পারছে না।

সে কারণে রোহিঙ্গা প্রশ্নে মালয়েশিয়া আসিয়ান থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে সক্ষম না হওয়ায় বা সে ব্যাপারে অনিচ্ছুক হওয়ায় আসিয়ান মৌনব্রত পালন করছে। সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালান পিটার গায়েতানো এরপর নিজেই কিছু বলার দায়িত্ব কাঁধে নেন। তিনি খুবই মৃদু ও উদ্যোগহীন এমন এক বিবৃতি দিয়ে ভেবেছিলেন, এতে কারও আপত্তি থাকবে না।

সেখানেই তিনি ভুলটা করেছেন। তাঁর বিবৃতিতে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বর্তমান ঘটনাবলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মালয়েশিয়া সঙ্গে সঙ্গে জোটের বাইরে গিয়ে তাঁর বিবৃতির সমালোচনা করে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফা আমান যে বিবৃতি দিলেন, সেখানে তিনি ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করেন এই বলে যে তাঁর বিবৃতিতে ‘বাস্তব পরিস্থিতির ভুল উপস্থাপন রয়েছে’।

আমান ভুল বলেননি। আসিয়ান চেয়ারম্যানের কিছু না করে উদ্বেগ প্রকাশ করাটা কাজের কিছু হয়নি। আমান যা বলেছেন, তার চেয়ে ভালো কিছু আর কেউ বলতে পারেন না। চেয়ারম্যান মিয়ানমারের নাম মুখে না এনে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ এড়িয়ে গেছেন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে শোচনীয় ভূমিকা পালন করছে এবং রোহিঙ্গা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে নারকীয় সহিংসতা চালাচ্ছে—এসব বিষয় চেয়ারম্যানের বিবৃতিতে আসেনি। এ ছাড়া গায়েতানো নির্লজ্জভাবে মিয়ানমার সরকারের ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার না করার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমান বলেছেন, ফিলিপিনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মতির ভিত্তিতে কাজ না করে আসিয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়মটি ভেঙেছেন। আসিয়ানের চেয়ারম্যান অর্থহীন একটি বিবৃতি দিয়ে সবাইকে খুশি করতে চাইলেও বাস্তবে তিনি সবাইকে অখুশি করেছেন। এর মধ্যে থাইল্যান্ডসহ আরও আধা ডজন আসিয়ান সদস্য আছে, যারা নীরব থাকতে বাধ্য হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকটে আসিয়ান বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, আরেক দিকে অং সান সু চির নেতৃত্বহীনতা, আর এখন তো এই তালিকায় অনিবার্যভাবে আরসা যুক্ত হয়েছে, যাদের আবার বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতা আছে। গায়েতানো যে ‘মতৈক্যের’ কথা বলেছেন, তাতে উল্লিখিত কারণের প্রথম দুটি অগ্রাহ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে আমান পরবর্তী সমস্যাটি অগ্রাহ্য করেছেন। এ অবস্থায় জাতিসংঘ, সৌদি আরব ও তুরস্ক যেখানে এই মানবিক সংকটে সাড়া দিয়েছে, সেখানে আসিয়ান হাত মোচড়াচ্ছে।

এই সংকটের বহুবিধ কারণ আছে, যার মধ্যে কিছু সম্প্রতি উদ্ভূত হয়েছে আর বাকিগুলোর উদ্ভব অনেক আগে। অভিযোগের আঙুলটা মূলত মিয়ানমার সরকারের দিকে। এমনকি এরা এটাও স্বীকার করে না যে এই পাঁচ লাখ শরণার্থীর জন্য দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করা দরকার। তবে সবাইকে সন্তুষ্ট করার মতো অনেক কিছুই আছে। ম্যানিলার কর্মকাণ্ডে মালয়েশিয়ার হঠাৎ ও ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় আসিয়ানের ভূমিকা আরও খর্ব হয়েছে। এদিকে থাইল্যান্ড শেষ পর্যায়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। এ ছাড়া তারা হয়তো ‘নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করত’। বাকি দেশগুলোর মধ্যে অধিকাংশই কিছু করতে রাজি নয়, পাছে বিভাজন আরও বাড়ে এই আশঙ্কায়।

গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী পরিচালনা করা এবং তার সঙ্গে আবার শ্রদ্ধা পাওয়া—এ দুটো সম্ভব নয়। শরণার্থীদের ত্রাণ দিতে আসিয়ানের শক্তিশালী ঐক্য দরকার ছিল। বস্তুত, নিজের স্বার্থেই আসিয়ানের উচিত পলায়নরত রোহিঙ্গাদের সাহায্য করা। আরেক দফা বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় ফিলিপাইনসহ প্রতিবেশীদের যাতে শরণার্থী আশ্রয় দিতে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে আসিয়ানের বাস্তুচ্যুতি ঠেকাতে হবে, যেটা তার গুরুত্বপূর্ণ নীতি হওয়া উচিত। মনে হচ্ছে সংস্থাটি শুধু দোনোমনা করছে তা নয়, তারা যেন হিমায়িত হয়ে গেছে। আর এটা এমন সময় ঘটছে, যখন কূটনৈতিক নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।