ঢাকা ০৩:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাইলেই কি রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব?

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫১:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • ১৪ বার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই তার বিদায় চাইলেও আইন ও সংবিধান অনুযায়ী তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে পারে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সংসদ বাতিল করে দেওয়ার সেই সুযোগ আর নেই। আবার রাষ্ট্রপতি চাইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করতে পারেন।

কিন্তু স্পিকার পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকার কারাগারে থাকায় সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি উঠলেও সেটি সংবিধান অনুযায়ী হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে সংসদ। কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়েছে। আবার তার পদত্যাগেরও সুযোগ নেই । সে কারণে সংবিধান ও আইনগতভাবে তাকে সরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তবে স্বৈরাচারী সরকারের বিদায়ের পর সবকিছু তো সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই নিয়ম বা সংবিধানের প্রশ্ন অবান্তর। বরং জন আকাঙ্ক্ষার আলোকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকার চাইলে করতেই পারে।

তিনি আরও বলেন, এখানে বলে রাখা ভালো যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন না কিংবা বিদায়ী সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে অনেককেই তো সরকার সরে যেতে বলেছে। সেসব ক্ষেত্রে তো সংবিধান দেখা হয়নি। সুতরাং রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও তা হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর সবকিছুই বাতিল করা যেত কিন্তু তা না করে কোনটি বাদ দেওয়া হয়েছে- আবার কোনটি রাখা হয়েছে বলেই এই জটিল পরিস্থিতি সামনে এসেছে। সংবিধান স্থগিত করা হয়নি। কিন্তু আবার সেটি পুরোপুরি অনুসরণও করা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে একটি লিগ্যাল অ্যানার্কি বা আইনি নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে। এর ফলে হয়তো অনেক কিছুই করতে হচ্ছে, যা নিয়ম মেনে হবে না।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট নিজেই বর্তমান সরকারকে শপথ করিয়েছেন। সরকার তাকে সংসদ ছাড়া অভিশংসন করলে বা বাদ দিলে এখন হয়ত কেউ কিছু বলবে না কিন্তু ভবিষ্যতে তো আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা উঠতে পারে। আর অভ্যুত্থানের পরপরই আন্দোলনকারী সব দল, শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধি নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে আগের সব বাতিল করলে এখনকার সংকটের তৈরি হতো না। তখন রাষ্ট্রপতিকে পরিবর্তন করলেও বলা যেতো যে জরুরি পরিস্থিতিতে জনগণের ম্যান্ডেট অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ও সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলছিলেন, এখন অস্বাভাবিক সরকার কাজ করছে, তাই সংবিধানের মাঝ দিয়ে বৈধতা-অবৈধতা সাংবিধানিক পদ্ধতিতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে সেটাও তারা কাভার করার জন্য আপিল বিভাগ থেকে একটি রেফারেন্স(প্রাসঙ্গিক মতামত বা সুপারিশ) করে নিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত তারা সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে চলার চেষ্টা করছেন। যা সঙ্গতিপূর্ণ না, সেগুলো রেফারেন্সের মাধ্যমে। তাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে, সেটার জন্য তাদেরকে এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে রেফারেন্স নিতে হবে।

“সেই রেফারেন্স অনুয়ায়ী তারা একজনকে বাদ বা নতুন একজনকে নিয়োগ দিতে পারেন। বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় এছাড়া আর কোনও ব্যবস্থা নাই,” তিনি যোগ করেন।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

চাইলেই কি রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব?

আপডেট টাইম : ১০:৫১:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই তার বিদায় চাইলেও আইন ও সংবিধান অনুযায়ী তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে পারে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সংসদ বাতিল করে দেওয়ার সেই সুযোগ আর নেই। আবার রাষ্ট্রপতি চাইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করতে পারেন।

কিন্তু স্পিকার পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকার কারাগারে থাকায় সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি উঠলেও সেটি সংবিধান অনুযায়ী হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে সংসদ। কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়েছে। আবার তার পদত্যাগেরও সুযোগ নেই । সে কারণে সংবিধান ও আইনগতভাবে তাকে সরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তবে স্বৈরাচারী সরকারের বিদায়ের পর সবকিছু তো সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই নিয়ম বা সংবিধানের প্রশ্ন অবান্তর। বরং জন আকাঙ্ক্ষার আলোকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকার চাইলে করতেই পারে।

তিনি আরও বলেন, এখানে বলে রাখা ভালো যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন না কিংবা বিদায়ী সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে অনেককেই তো সরকার সরে যেতে বলেছে। সেসব ক্ষেত্রে তো সংবিধান দেখা হয়নি। সুতরাং রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও তা হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর সবকিছুই বাতিল করা যেত কিন্তু তা না করে কোনটি বাদ দেওয়া হয়েছে- আবার কোনটি রাখা হয়েছে বলেই এই জটিল পরিস্থিতি সামনে এসেছে। সংবিধান স্থগিত করা হয়নি। কিন্তু আবার সেটি পুরোপুরি অনুসরণও করা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে একটি লিগ্যাল অ্যানার্কি বা আইনি নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে। এর ফলে হয়তো অনেক কিছুই করতে হচ্ছে, যা নিয়ম মেনে হবে না।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট নিজেই বর্তমান সরকারকে শপথ করিয়েছেন। সরকার তাকে সংসদ ছাড়া অভিশংসন করলে বা বাদ দিলে এখন হয়ত কেউ কিছু বলবে না কিন্তু ভবিষ্যতে তো আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা উঠতে পারে। আর অভ্যুত্থানের পরপরই আন্দোলনকারী সব দল, শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধি নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে আগের সব বাতিল করলে এখনকার সংকটের তৈরি হতো না। তখন রাষ্ট্রপতিকে পরিবর্তন করলেও বলা যেতো যে জরুরি পরিস্থিতিতে জনগণের ম্যান্ডেট অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ও সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলছিলেন, এখন অস্বাভাবিক সরকার কাজ করছে, তাই সংবিধানের মাঝ দিয়ে বৈধতা-অবৈধতা সাংবিধানিক পদ্ধতিতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে সেটাও তারা কাভার করার জন্য আপিল বিভাগ থেকে একটি রেফারেন্স(প্রাসঙ্গিক মতামত বা সুপারিশ) করে নিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত তারা সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে চলার চেষ্টা করছেন। যা সঙ্গতিপূর্ণ না, সেগুলো রেফারেন্সের মাধ্যমে। তাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে, সেটার জন্য তাদেরকে এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে রেফারেন্স নিতে হবে।

“সেই রেফারেন্স অনুয়ায়ী তারা একজনকে বাদ বা নতুন একজনকে নিয়োগ দিতে পারেন। বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় এছাড়া আর কোনও ব্যবস্থা নাই,” তিনি যোগ করেন।

সূত্র : বিবিসি বাংলা