হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং তাদের দ্রুততম সময়ে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা। দুটি কাজই অত্যন্ত কঠিন। তদুপরি রয়েছে আরো কিছু সমস্যা। আগত রোহিঙ্গারা যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে ব্যবস্থা করা, তাদের দ্রুত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন সম্পন্ন করা, যত্রযত্র বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আসা এবং কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা—এ কাজগুলোও সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এখন পর্যন্ত এসব কাজে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। দ্রুত সেই ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
বাংলাদেশে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। এরপর সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ ঘটে ১৯৯২ সালে। তা ছাড়া ছোটখাটো অনুপ্রবেশের অনেক ঘটনা ঘটেছে। সেই থেকে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ করা হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে আসে আরো প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা।
গত মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ অমানবিক নির্যাতন শুরু করায় আরো চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে এসেছে। সাকল্যে বাংলাদেশকে এখন প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এ বছর ব্যাপক বন্যার কারণে বাংলাদেশেও খাদ্য সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণ অত্যন্ত কঠিন কাজ। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কত দিন তা সম্ভব হবে? তাই রোহিঙ্গা সংকটের আশু সমাধান প্রয়োজন। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এ সমস্যার সমাধান যে সম্ভব নয়, তা এখন স্পষ্ট। এখানে বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং একটি যৌক্তিক সমাধানে বাধ্য করতে হবে। বিশ্বসম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব গণমাধ্যমেও মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশন। অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন। এ ইস্যুতে অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন আরো অনেক বিশ্বনেতা। আমরা আশা করি, বিশ্বনেতারা মিয়ানমারে জাতিগত নিধন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দুর্গত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াবেন এবং অবিলম্বে তাদের সম্মানজনক পুনর্বাসনের মাধ্যমে এই সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান দিতে সক্ষম হবেন।