ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতার মতামত জরিপ জানুয়ারিতে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ আসামি রিমান্ডে বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা: আবারও অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৩৯৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পোশাকধারী শাখার সদস্যরা যখন মাঠ পর্যায়ে সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে অভিভূত করার চেষ্টা করে, তখন তা সাধারণত লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ হয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যখন বিশ্বকে বোঝাতে চেয়েছে যে সাম্প্রতিক বিশৃঙ্খলার জন্য মুসলিম-বাঙালি রোহিঙ্গারাই দায়ী, তখন তাতে ভালো কিছু হয়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সুনামে ক্ষতি হলেও তাদের পাশে যতক্ষণ চীন ও ভারত থাকবে, ততক্ষণ তা কোনো ব্যাপারই নয়। বাংলাদেশের জন্য ভালো হয় আরো বেশি জাতিসঙ্ঘ সরবরাহ চাওয়া। মনে হচ্ছে, উদ্বাস্তুরা অনেক দিনই এখানে থাকবে।

অস্বীকৃতি জ্ঞাপনের মানসিকতার শিকার বাংলাদেশ

বাংলাদেশ তার নিজের দুর্বলতার শিকার হয়েছে। সেই ১৯৭০-এর দশক থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যাকে এড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, মনে করেছে, একসময় এটা এমনিতেই থাকবে না। কিন্তু তা হয়নি এবং এখন তা বহুগুণে বেড়ে গেছে। আলোচনা ও শান্তির জন্য বাংলাদেশের আবেদন উড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু মিয়ানমার ও ভারত যে সন্ত্রাসী গ্রুপকে সর্বশেষ এই সঙ্কটের উস্কানিদাতা হিসেবে অভিহিত করে শায়েস্তা করার চেষ্টা করছে, তাদের তেমন সন্ধান মেলেনি।

অবশ্য ‘মানবিক’ হওয়া ছাড়া সম্ভবত তেমন কিছু করার ছিল না বাংলাদেশের সামনে। ১৯৭১ সালে ভারত সমস্যাটির সমাধান করেছিল সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। কিন্তু ২০১৭ সালে তা অসম্ভব। আর এ ব্যাপারে কোনো অভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু বা জনমতও নেই। বাংলাদেশের ভেতরেই চীন ও ভারতের শক্তিশালী লবি রয়েছে, তারা ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ উদ্বাস্তুরা থাকবে, কিছু কিছু সাহায্যও আসবে। কিন্তু অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করে এমন কোনো কথা বা কাজ করা যাবে না। মিয়ানমারের উদ্বাস্তুদের জন্য বাংলাদেশ হতাশাজনক ডাম্পিং গ্রাউন্ড হিসেবেই বিরাজ করবে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার কিংবা আক্রমণ চালানোর নৈতিক সমর্থন ব্যক্ত করার মতো বড় ধরনের ঝুঁকি নেবে না ভারত ও চীন। এই ইস্যুতে চীন কোনো মন্তব্য না করলেও ভারত বেশ জোরালোভাবে তার অবস্থান ব্যক্ত করেছে ‘সন্ত্রাসীদেরই দায়ী’ করার মাধ্যমে।

সন্ত্রাসীদের সাথে আইএসআইয়ের সম্পৃক্ততা আছে বলেও বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সিনিয়র এক আইনপ্রণেতা সম্প্রতি টিভিতে বলেছেন, চট্টগ্রামের পাহাড়ি জেলাগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘স্বাধীন ইসলামি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় অতীতে বিরোধী বিএনপি প্রতিবেশী দেশের সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

বাংলাদেশ ছাড়া সবারই মিয়ানমারে স্বার্থ রয়েছে?

পাকিস্তান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে চীন তার ৭৫ ভাগ অস্ত্র বিক্রি করে। অর্থাৎ এই তিনটি দেশ তার প্রধান ক্রেতার তালিকায় রয়েছে। চীন পাকিস্তানের সাথে যৌথভাবে তৈরী বিমান মিয়ানমারের কাছে বিক্রির চেষ্টা করছে। এর মানে হলো, মিয়ানমার ও চীন ক্রুদ্ধ হতে পারে ভেবে পাকিস্তান কিছুই করবে না। এ বিষয়টি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি আইএসআইয়ের সমর্থনের তত্ত্বটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

অর্থাৎ মিয়ানমার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক একটি ঘটনা। এখানে জড়িত সব বড় খেলোয়াড়ই হয় বাংলাদেশের বন্ধু বা শত্রু। এই শত্রু-মিত্র সবাই একই অবস্থান গ্রহণ করেছে নিজ নিজ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। প্রত্যেকের উদ্দেশ্যও ভিন্ন। সম্পর্কের প্রকৃতির কারণে ভারতকে বেশি কিছু বলতে পারবে না বাংলাদেশ। চীনের অ্যাজেন্ডা অর্থনৈতিককেন্দ্রিক। এই দেশে তার বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ রয়েছে। এর মানে হলো, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করা। যারা মিয়ানমারের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, তারাই দেশটির সেনাবাহিনী চালাচ্ছে। বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় শত্রু’ পাকিস্তান রয়েছে মিয়ানমারের পক্ষে।

ফলে বাংলাদেশের হাতে তেমন বিকল্প নেই। পিছু হটার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির করার সময়ও শেষ হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই সঙ্কটে একমাত্র অসম্পৃক্ত শক্তি হলো পাশ্চাত্য/যুক্তরাষ্ট্র। তারা কী করবে বা কী চায়, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিশ্চিত বিষয় হলো, সম্ভাব্য শূন্যতায় তারা আঙুল বা পা না ঢুকিয়ে অলস বসে থাকবে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী লবির সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছে।

অনেকে যেভাবে বলছে, সেভাবে বাংলাদেশ ইসলামি ভাবাবেগেরও আশ্রয় নিতে পারছে না। কারণ সেক্ষেত্রে  যে সন্ত্রাসবাদকে শক্ত হাতে দমন করা হয়েছিল, সেটাই দেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে পারে। বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছে যে ওআইসি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ইত্যাদি একটি মাত্রার পর আগে বাড়বে না। ইসলামি কার্ড খেলতে সবসময় আগ্রহী প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যাতে কোনো ধরনের ফায়দা হাসিল করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক ক্ষমতাসীন দল। এর মানে হচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা আরো বেশি রুদ্ধদ্বারে থাকবে।

আন্তর্জাতিক মিত্রতার সঙ্ঘাত?

এটা আসলে শেখ হাসিনা সরকারের জন্য একটি পরীক্ষা। কারণ বাংলাদেশ নিজের ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তারা বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বরং সমস্যার কারণে রোহিঙ্গারা এখানে এসে পড়েছে। ভারত ও চীনকে যে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে মিয়ানমারে নিয়ে গেছে, সেখানে বাংলাদেশের সে ধরনের কিছুই নেই। ফলে আন্তর্জাতিক জনমত এবং দন্তনখরহীন জাতিসঙ্ঘের সমালোচনায় তেমন কিছুই হবে না জেনে বৃহৎ শক্তিগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ব্যাপারে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে মিয়ানমার।

সম্ভবত এখন সময় এসেছে এই ধারণা উপলব্ধি করার যে চীন, ভারত বা পাশ্চাত্য আসলে কারোরই বন্ধু নয় এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এটা সুদূরের ধারণা। বাংলাদেশ মনে হচ্ছে, অন্য সবকিছু ভুলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেই চরম গুরুত্ব দিচ্ছে। বুঝে ওঠার আগেই স্বাস্থ্য সঙ্কট, দুটি বন্যা এবং তারপর গত অর্ধ বছরের মধ্যে উদ্বাস্তু ঢলে আক্রান্ত হয়েছে। এটা কাউকে ভালোভাবে উপস্থাপন করে না।

আমাদের দুর্যোগগুলো একইসাথে প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট। আর মনে হচ্ছে, উভয় বিপর্যয়ই আমাদের ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল

বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা: আবারও অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়া

আপডেট টাইম : ০৮:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পোশাকধারী শাখার সদস্যরা যখন মাঠ পর্যায়ে সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে অভিভূত করার চেষ্টা করে, তখন তা সাধারণত লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ হয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যখন বিশ্বকে বোঝাতে চেয়েছে যে সাম্প্রতিক বিশৃঙ্খলার জন্য মুসলিম-বাঙালি রোহিঙ্গারাই দায়ী, তখন তাতে ভালো কিছু হয়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সুনামে ক্ষতি হলেও তাদের পাশে যতক্ষণ চীন ও ভারত থাকবে, ততক্ষণ তা কোনো ব্যাপারই নয়। বাংলাদেশের জন্য ভালো হয় আরো বেশি জাতিসঙ্ঘ সরবরাহ চাওয়া। মনে হচ্ছে, উদ্বাস্তুরা অনেক দিনই এখানে থাকবে।

অস্বীকৃতি জ্ঞাপনের মানসিকতার শিকার বাংলাদেশ

বাংলাদেশ তার নিজের দুর্বলতার শিকার হয়েছে। সেই ১৯৭০-এর দশক থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যাকে এড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, মনে করেছে, একসময় এটা এমনিতেই থাকবে না। কিন্তু তা হয়নি এবং এখন তা বহুগুণে বেড়ে গেছে। আলোচনা ও শান্তির জন্য বাংলাদেশের আবেদন উড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু মিয়ানমার ও ভারত যে সন্ত্রাসী গ্রুপকে সর্বশেষ এই সঙ্কটের উস্কানিদাতা হিসেবে অভিহিত করে শায়েস্তা করার চেষ্টা করছে, তাদের তেমন সন্ধান মেলেনি।

অবশ্য ‘মানবিক’ হওয়া ছাড়া সম্ভবত তেমন কিছু করার ছিল না বাংলাদেশের সামনে। ১৯৭১ সালে ভারত সমস্যাটির সমাধান করেছিল সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। কিন্তু ২০১৭ সালে তা অসম্ভব। আর এ ব্যাপারে কোনো অভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু বা জনমতও নেই। বাংলাদেশের ভেতরেই চীন ও ভারতের শক্তিশালী লবি রয়েছে, তারা ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ উদ্বাস্তুরা থাকবে, কিছু কিছু সাহায্যও আসবে। কিন্তু অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করে এমন কোনো কথা বা কাজ করা যাবে না। মিয়ানমারের উদ্বাস্তুদের জন্য বাংলাদেশ হতাশাজনক ডাম্পিং গ্রাউন্ড হিসেবেই বিরাজ করবে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার কিংবা আক্রমণ চালানোর নৈতিক সমর্থন ব্যক্ত করার মতো বড় ধরনের ঝুঁকি নেবে না ভারত ও চীন। এই ইস্যুতে চীন কোনো মন্তব্য না করলেও ভারত বেশ জোরালোভাবে তার অবস্থান ব্যক্ত করেছে ‘সন্ত্রাসীদেরই দায়ী’ করার মাধ্যমে।

সন্ত্রাসীদের সাথে আইএসআইয়ের সম্পৃক্ততা আছে বলেও বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সিনিয়র এক আইনপ্রণেতা সম্প্রতি টিভিতে বলেছেন, চট্টগ্রামের পাহাড়ি জেলাগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘স্বাধীন ইসলামি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় অতীতে বিরোধী বিএনপি প্রতিবেশী দেশের সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

বাংলাদেশ ছাড়া সবারই মিয়ানমারে স্বার্থ রয়েছে?

পাকিস্তান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে চীন তার ৭৫ ভাগ অস্ত্র বিক্রি করে। অর্থাৎ এই তিনটি দেশ তার প্রধান ক্রেতার তালিকায় রয়েছে। চীন পাকিস্তানের সাথে যৌথভাবে তৈরী বিমান মিয়ানমারের কাছে বিক্রির চেষ্টা করছে। এর মানে হলো, মিয়ানমার ও চীন ক্রুদ্ধ হতে পারে ভেবে পাকিস্তান কিছুই করবে না। এ বিষয়টি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি আইএসআইয়ের সমর্থনের তত্ত্বটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

অর্থাৎ মিয়ানমার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক একটি ঘটনা। এখানে জড়িত সব বড় খেলোয়াড়ই হয় বাংলাদেশের বন্ধু বা শত্রু। এই শত্রু-মিত্র সবাই একই অবস্থান গ্রহণ করেছে নিজ নিজ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। প্রত্যেকের উদ্দেশ্যও ভিন্ন। সম্পর্কের প্রকৃতির কারণে ভারতকে বেশি কিছু বলতে পারবে না বাংলাদেশ। চীনের অ্যাজেন্ডা অর্থনৈতিককেন্দ্রিক। এই দেশে তার বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ রয়েছে। এর মানে হলো, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করা। যারা মিয়ানমারের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, তারাই দেশটির সেনাবাহিনী চালাচ্ছে। বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় শত্রু’ পাকিস্তান রয়েছে মিয়ানমারের পক্ষে।

ফলে বাংলাদেশের হাতে তেমন বিকল্প নেই। পিছু হটার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির করার সময়ও শেষ হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই সঙ্কটে একমাত্র অসম্পৃক্ত শক্তি হলো পাশ্চাত্য/যুক্তরাষ্ট্র। তারা কী করবে বা কী চায়, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিশ্চিত বিষয় হলো, সম্ভাব্য শূন্যতায় তারা আঙুল বা পা না ঢুকিয়ে অলস বসে থাকবে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী লবির সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছে।

অনেকে যেভাবে বলছে, সেভাবে বাংলাদেশ ইসলামি ভাবাবেগেরও আশ্রয় নিতে পারছে না। কারণ সেক্ষেত্রে  যে সন্ত্রাসবাদকে শক্ত হাতে দমন করা হয়েছিল, সেটাই দেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে পারে। বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছে যে ওআইসি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ইত্যাদি একটি মাত্রার পর আগে বাড়বে না। ইসলামি কার্ড খেলতে সবসময় আগ্রহী প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যাতে কোনো ধরনের ফায়দা হাসিল করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক ক্ষমতাসীন দল। এর মানে হচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা আরো বেশি রুদ্ধদ্বারে থাকবে।

আন্তর্জাতিক মিত্রতার সঙ্ঘাত?

এটা আসলে শেখ হাসিনা সরকারের জন্য একটি পরীক্ষা। কারণ বাংলাদেশ নিজের ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তারা বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বরং সমস্যার কারণে রোহিঙ্গারা এখানে এসে পড়েছে। ভারত ও চীনকে যে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে মিয়ানমারে নিয়ে গেছে, সেখানে বাংলাদেশের সে ধরনের কিছুই নেই। ফলে আন্তর্জাতিক জনমত এবং দন্তনখরহীন জাতিসঙ্ঘের সমালোচনায় তেমন কিছুই হবে না জেনে বৃহৎ শক্তিগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ব্যাপারে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে মিয়ানমার।

সম্ভবত এখন সময় এসেছে এই ধারণা উপলব্ধি করার যে চীন, ভারত বা পাশ্চাত্য আসলে কারোরই বন্ধু নয় এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এটা সুদূরের ধারণা। বাংলাদেশ মনে হচ্ছে, অন্য সবকিছু ভুলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেই চরম গুরুত্ব দিচ্ছে। বুঝে ওঠার আগেই স্বাস্থ্য সঙ্কট, দুটি বন্যা এবং তারপর গত অর্ধ বছরের মধ্যে উদ্বাস্তু ঢলে আক্রান্ত হয়েছে। এটা কাউকে ভালোভাবে উপস্থাপন করে না।

আমাদের দুর্যোগগুলো একইসাথে প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট। আর মনে হচ্ছে, উভয় বিপর্যয়ই আমাদের ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।