বিকল্প ব্যবস্থায় বিরোধ নিষ্পত্তি একটি অভিনব উদ্যোগ। যার মাধ্যমে অপরাধী ও অভিযোগকারীর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তবে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।” আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
স্পিকার বলেন, “হাঙ্গেরি ও ফিলিপাইনের মিন্দানাও এ শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং কানাডার সংশোধন কেন্দ্রে এই প্রক্রিয়ায় সুফল পাওয়া গেছে। এটি প্রয়োগের ফলে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যাও হ্রাস পাবে। ফৌজদারি অপরাধসহ অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।” রেস্টোরেটিভ জাস্টিস : ফোরাম ক্রাইম প্রিভেনশন টু কনফ্লিক্ট ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জিআইজেড এবং ডিএফআইডি। স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেসল হক খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশস্থ জার্মান অ্যাম্বাসির চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. ফেরদিনানদ ভোন উয়েহি, ডিএফআডি’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সারাহ কুক, জিআইজেড’র কান্ট্রি ডিরেক্টর তোবিয়াস বেককার প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের কারাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি রয়েছে। আদালতগুলোতে লাখ লাখ মামলার জট। এক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থায় বিরোধ নিষ্পত্তি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, আদালতে মামলা দীর্ঘ দিন ধরে চলার কারণে গরীব মানুষকে নানাভাবে হয়রানি হতে হয়। অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু আদালতের বাইরে সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করা গেলে মামলার সংখ্যা ও কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমে আসবে। সরকারও বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। এ ব্যবস্থাকে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধীদের সংশোধনের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সম্মেলনে উত্থাপিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিকল্প ব্যবস্থায় বিরোধ নিষ্পত্তি একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিস্থাপনমূলক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় সমাজে সংঘটিত ক্ষতিকর ঘটনা নিষ্পত্তিতে সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত, অভিযুক্ত ও কমিউনিটির সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ক্ষতিকর ঘটনার ন্যায্য নিষ্পত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান। এই বিচারের লক্ষ্য অপরাধ প্রতিরোধ, পারস্পরিক যোগযোগ স্থাপন, ক্ষতিগ্রস্তকে সহায়তা প্রদান এবং সমাজে পুনর্ভুক্তকরণ।