দুই মেয়রের ১০০ দিন দৃশ্যমান কাজ কম

ঢাকার দুই মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন পূর্ণ হলো আজ। এ সময়ে তারা নগরবাসীর প্রত্যাশা কতখানি পূরণ করতে পেরেছেন, আদৌ পেরেছেন কি-না এ নিয়ে অনেকেই হিসাব-নিকাশ করছেন। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন নির্বাচনী ইশতেহারে জনদুর্ভোগ মোচনে কম প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে গত ১০০ দিনে দৃশ্যমান কাজ খুবই কম পড়েছে নগরবাসীর চোখে।

নগরীতে উন্মুক্ত ডাস্টবিন এবং আবর্জনামুক্ত নগরী, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং যানজট কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ থাকলেও তেমন সাফল্য নেই। তবে নগর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলাবদ্ধতা কিংবা যানজট কমিয়ে আনার বিষয়গুলো এককভাবে সিটি করপোরেশনের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। এই ১০০ দিনে আগামী পাঁচ বছরে নগর উন্নয়নে দুই মেয়র কী ধরনের পরিকল্পনা নেবেন, তার একটা রূপরেখা তৈরি করেছেন। এ মাসের শেষ সপ্তাহেই এ পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে।

দুই মেয়রই দাবি করেছেন, তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর দুটি সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ডে গতি এসেছে। সমস্যা সমাধানের উদ্যোগও নিয়েছেন। গঠন করেছেন পৃথক কমিটি। তবে বহু সমস্যা সমাধানে তাদের উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার পুঞ্জীভূত সমস্যার কোনোটির সমাধান ১০০ দিনে দৃশ্যমান হওয়া দুরূহ। তবে এ সময়ের মধ্যে সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সমাধানের জন্য দুই মেয়রকে আরও বেশি জনসম্পৃক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। উভয় মেয়রই সমকালকে বলেছেন, তাদের হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই যে সমস্যা-জর্জরিত ঢাকা শহরকে রাতারাতি বদলে দেবেন। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন। তবে তারা সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক সমকালকে বলেন, এক বছর পর তিনি নগরবাসীকে জানাবেন, কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আর্থিক দৈন্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হিমশিম খাচ্ছে। সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

উত্তর সিটি করপোরেশন :মেয়র আনিসুল হক মনে করেন, প্রতিদিন দুই হাজার ৫০০ টন বর্জ্য অপসারণ এ সময়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে দুটি করে ট্রান্সফার স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। বর্জ্যবাহী গাড়িচালকদের ট্রিপ ফাঁকি রোধে ল্যান্ডফিলে সিসিটিভি বসানো হয়েছে। শিগগিরই সব গাড়িতে ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমও (ভিটিএস) বসানো হবে। বর্জ্য পরিবহন সহজ করতে আগামী বছরের মধ্যেই ২৭৬টি গাড়ি কেনা হবে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য বছরে দুটি উৎসব বোনাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের পেনশনের জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য এরই মধ্যে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন, মশক নিধনের জন্য ২০০টি হস্তচালিত স্প্রে মেশিন, ১০০টি ফগার মেশিন, সড়কবাতি লাগানোর জন্য ছয়টি হাইড্রোলিক ল্যাডার কেনা হয়েছে। আরও ছয়টি ল্যাডার চলতি অর্থবছরের মধ্যে কেনা হবে।

ফুটপাত হকার ও দখলমুক্ত করার জন্য মেয়র মনে করেন, একটি সিটি এনফোর্সমেন্ট সংস্থা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে সার্বক্ষণিক ফুটপাতকে দখলমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। আপাতত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার চেষ্টা হচ্ছে। কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এরই মধ্যে বিশেষ জীবন বীমা চালু হয়েছে। কারও আকস্মিক মৃত্যু হলে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে; আহত হলে দুই লাখ টাকা। অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৈধ বিলবোর্ডের মেয়াদ না বাড়িয়ে পুরো নগরীকে বিলবোর্ডমুক্ত করে স্বল্পসংখ্যক এলইডি বোর্ড সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ কাজটি যে সহজসাধ্য নয়, তা তিনি স্বীকার করেছেন।

টেন্ডারবাজি বন্ধ করতে চালু হয়েছে ই-টেন্ডারিং। ডিএনসিসির প্রধান দুটি কার্যালয়সহ সব আঞ্চলিক কার্যালয়ে ওয়াই-ফাই চালু হয়েছে। অফিস ফাঁকি ঠেকাতে বিশেষ স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ট্যাক্স আদায়ে জালিয়াতি রোধে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হবে শিগগিরই। তিনটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। দুর্নীতি রোধে এরই মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কয়েকজনকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ফরমালিন বা রাসায়নিকযুক্ত পণ্য বিক্রি বন্ধে প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে আহ্বায়ক করে বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর