ঢাকা ১২:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশু আলিমুন, সুচিকিৎসার আকুতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩৩:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
  • ৩১২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে দরিদ্র আলিমুন শেখ নামে নয় বছর বয়সী এক শিশু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে বসে রোগে ভুগছে শিশুটি। দিনদিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। দরিদ্র আলিমুনের স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তার সুচিৎসার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন ছোট্ট শিশু আলিমুন সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরুক।  মো. জাহিদুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক শৈল্য চিকিৎসক আলিমুনের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিলে তা ভাইরাল হয়। ওই সোসাল মিডিয়ার কল্যাণে তা জানতে পেরে গণমাধ্যম কর্মীরা তার পাশে দাঁড়িয়েছে।

রবিবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট্ট শিশু আলিমুন ঘরের বারান্দায় বসে খাবার খাচ্ছে। মাথাটা ফোলা। হঠাৎ কেউ দেখলে আঁৎকে উঠবে। তার মাথার বিভিন্ন স্থানে একাধিক টিউমার সাদৃশ্য। যা দেখতে অনেকটা টিউমারের মতোই। মাথা থেকে এখন পিঠে ও হাঁটুতেও উঠতে শুরু করেছে। তবে ছোট্ট এই শিশুর শরীরে কী রোগের কারণে মাথা ও শরীরে গোটাগোটা দেখা দিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগ সম্পর্কে বলতে পারবে বাগেরহাটের চিকিৎসকরা। তারা শিশুটিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর গ্রাম। এই গ্রামে এক শতক জমির উপর কুঁড়েঘরে আলিমুন মা সখিনা বেগম, দাদি কুলসুম বেগম, বড় ভাই শুকুর আলী শেখ বসবাস করেন। বাবা আজাহার শেখ তিন বছর আগেই মারা গেছেন। মা সখিনা বেগম দিনমজুর। রাস্তা ও পরের বাড়িতে কাজ যে টাকা রোজগার করেন তা দিয়েই কোনো রকমে চলে সংসার। অভাবের সংসার চালাতেই মা সখিনাকে হিমশিম খেতে হয়। এই অভাবের মধ্যে কীভাবে তিনি অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাবেন।

আলিমুনের বড় চাচি শরীফা বেগম হাওর বার্তাকে বলেন, চার থেকে পাঁচ বছর আগে আলিমুনের মাথায় টিউমারের মতো দেখা দেয়। তখন ওর বাবা আজাহার বেঁচে ছিলেন। সে সময়ে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছিল। ধারদেনা করে সে সময়ে আলিমুলকে কিছুদিন ওষুধ খাওয়ানো হয়। খুলনা মেডিকেলের চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তা আর করা হয়নি। আমাদের পরিবারের আর্থিক অসংগতির কারণে তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে এমটাই চান আলিমুনের এই আত্মীয়।

স্থানীয় শৈল্য চিকিৎসক মো. জাহিদুল ইসলাম হাওর বার্তাকে বলেন, আমি চিকিৎসকের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত গণশিক্ষা কার্যক্রমে শিশুদের প্রাক শিক্ষা দিয়ে থাকি। এখানে আলিমুন নামে ওই শিশুটি পড়তে আসে। ওর মাথায় ছোট ছোট টিউমারের মতো দেখতে পাই। ওর যে রোগ তা আমার মতো চিকিৎসক তার চিকিৎসা করতে পারব না। আমি শিশুটির সুচিৎসার জন্য কিছু করতে চাই। তাই আমি তার ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে দিই। সরকার তার সুচিৎসার জন্য এগিয়ে আসবে বলে আশা তার।

গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. নাসির হাওর বার্তাকে বলেন, আমরা এই শিশুটির অসুস্থতা জানতাম না। এখন জানতে পেরেছি। তাই এখন তার সুচিকিৎসার জন্য বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি। বিত্তবান ও সরকার এগিয়ে এলে শিশুটি আবার সুস্থ হয়ে উঠবে এটা আশা তাদের।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অরুণ চন্দ্র মন্ডল  হাওর বার্তাকে বলেন, সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে শিশুটির অসুস্থতার কথা জানতে পেরেছি। তার শরীরে কী রোগ হয়েছে তা পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে বলা যাবে না। আমরা শিশুটিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। তাকে এনে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করব। এখানে যদি তার চিকিৎসা সম্ভব না হয় তাহলে তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশু আলিমুন, সুচিকিৎসার আকুতি

আপডেট টাইম : ০৩:৩৩:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে দরিদ্র আলিমুন শেখ নামে নয় বছর বয়সী এক শিশু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে বসে রোগে ভুগছে শিশুটি। দিনদিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। দরিদ্র আলিমুনের স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তার সুচিৎসার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন ছোট্ট শিশু আলিমুন সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরুক।  মো. জাহিদুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক শৈল্য চিকিৎসক আলিমুনের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিলে তা ভাইরাল হয়। ওই সোসাল মিডিয়ার কল্যাণে তা জানতে পেরে গণমাধ্যম কর্মীরা তার পাশে দাঁড়িয়েছে।

রবিবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট্ট শিশু আলিমুন ঘরের বারান্দায় বসে খাবার খাচ্ছে। মাথাটা ফোলা। হঠাৎ কেউ দেখলে আঁৎকে উঠবে। তার মাথার বিভিন্ন স্থানে একাধিক টিউমার সাদৃশ্য। যা দেখতে অনেকটা টিউমারের মতোই। মাথা থেকে এখন পিঠে ও হাঁটুতেও উঠতে শুরু করেছে। তবে ছোট্ট এই শিশুর শরীরে কী রোগের কারণে মাথা ও শরীরে গোটাগোটা দেখা দিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগ সম্পর্কে বলতে পারবে বাগেরহাটের চিকিৎসকরা। তারা শিশুটিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর গ্রাম। এই গ্রামে এক শতক জমির উপর কুঁড়েঘরে আলিমুন মা সখিনা বেগম, দাদি কুলসুম বেগম, বড় ভাই শুকুর আলী শেখ বসবাস করেন। বাবা আজাহার শেখ তিন বছর আগেই মারা গেছেন। মা সখিনা বেগম দিনমজুর। রাস্তা ও পরের বাড়িতে কাজ যে টাকা রোজগার করেন তা দিয়েই কোনো রকমে চলে সংসার। অভাবের সংসার চালাতেই মা সখিনাকে হিমশিম খেতে হয়। এই অভাবের মধ্যে কীভাবে তিনি অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাবেন।

আলিমুনের বড় চাচি শরীফা বেগম হাওর বার্তাকে বলেন, চার থেকে পাঁচ বছর আগে আলিমুনের মাথায় টিউমারের মতো দেখা দেয়। তখন ওর বাবা আজাহার বেঁচে ছিলেন। সে সময়ে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছিল। ধারদেনা করে সে সময়ে আলিমুলকে কিছুদিন ওষুধ খাওয়ানো হয়। খুলনা মেডিকেলের চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তা আর করা হয়নি। আমাদের পরিবারের আর্থিক অসংগতির কারণে তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে এমটাই চান আলিমুনের এই আত্মীয়।

স্থানীয় শৈল্য চিকিৎসক মো. জাহিদুল ইসলাম হাওর বার্তাকে বলেন, আমি চিকিৎসকের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত গণশিক্ষা কার্যক্রমে শিশুদের প্রাক শিক্ষা দিয়ে থাকি। এখানে আলিমুন নামে ওই শিশুটি পড়তে আসে। ওর মাথায় ছোট ছোট টিউমারের মতো দেখতে পাই। ওর যে রোগ তা আমার মতো চিকিৎসক তার চিকিৎসা করতে পারব না। আমি শিশুটির সুচিৎসার জন্য কিছু করতে চাই। তাই আমি তার ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে দিই। সরকার তার সুচিৎসার জন্য এগিয়ে আসবে বলে আশা তার।

গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. নাসির হাওর বার্তাকে বলেন, আমরা এই শিশুটির অসুস্থতা জানতাম না। এখন জানতে পেরেছি। তাই এখন তার সুচিকিৎসার জন্য বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি। বিত্তবান ও সরকার এগিয়ে এলে শিশুটি আবার সুস্থ হয়ে উঠবে এটা আশা তাদের।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অরুণ চন্দ্র মন্ডল  হাওর বার্তাকে বলেন, সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে শিশুটির অসুস্থতার কথা জানতে পেরেছি। তার শরীরে কী রোগ হয়েছে তা পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে বলা যাবে না। আমরা শিশুটিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। তাকে এনে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করব। এখানে যদি তার চিকিৎসা সম্ভব না হয় তাহলে তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।