ঢাকা ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

রমজানে যুবকদের প্রতি দরদি বার্তা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭
  • ৫৩০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গেল বছর রমজানে কয়েকজন যুবক এসেছিল আমার কাছে। তারা এসে অনুযোগ করল শায়খ, রমজান আসে আমাদের কাছে; কিন্তু নেক আমলের হিম্মত পাই না। রমজান আসে; কিন্তু আমলের মধ্যে স্বাদ পাই না। রমজান আসে; কিন্তু অন্তরটা শক্তই থাকে, নরম হয় না। চোখে পানি আসে না, অন্তর ভয়ে কম্পিত হয় না। শরীর উন্নতির দিকে ধাবিত হয় না। নফস আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করে না। এর কারণ কী শায়খ?
এভাবেই আমাদের রমজান কেটে যায়, এমনকি যখন ঈদের রাত চলে আসে, চেহারা আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। জানো ভাই, এর কারণ কী? রমজান আসার পরও আমাদের হৃদয়গুলো শক্ত থাকার কারণ হলো আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাঁর সঙ্গে গোপন মোনাজাতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করে রাখেন। তাঁর দরবারে নত হওয়ায় স্বাদ থেকে মাহরুম রাখেন। তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করে আনন্দ পাওয়ায় দৌলত থেকে দূরে রাখেন। তাঁর সান্নিধ্যে ধন্য হওয়া থেকেও দূরে ঠেলে দেন।
এসবের একমাত্র কারণ হলো গোনাহ। গোনাহ এবং খোদার অবাধ্যতাই এর একমাত্র কারণ। কিন্তু খুব কম মানুষই আছে, যারা এটা টের পায়; বুঝতে পারে। আল্লাহ রহম করুন যেসব আলেমকে, যাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল রমজানকে কীভাবে স্বাগত জানাব? তারা জবাব দিয়েছিলেন, একে স্বাগত জানাও তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে। তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে রমজানকে সম্ভাষণ জানাও। কেননা বান্দা গোনাহের কারণে আল্লাহর রহমতের দুয়ার থেকে দূরে ছিটকে পড়ে।
সুতরাং সৌভাগ্যবান সে ভাই, যারা শাবান মাসেই আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে আবদার জানায়, হে আমার খোদা, আমার সামনের রমজানকে তুমি তোমার খায়র, রবকত এবং অন্যান্য দিয়ে ভরে দাও। হে আল্লাহ লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হওয়া থেকে তোমার কাছে পানা চাই। হে আল্লাহ যত গোনাহ করেছি এবং যা অপকর্ম করেছি, তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ তোমার আশ্রয় চাই, আমাদের গোনাহগুলো   যেন নামাজে আমাদের চোখে পানি আসার পথে অন্তরায় না হয়। তোমার দরবারে মোনাজাতের স্বাদপ্রাপ্তির পথেও যেন বাধা না হয়। আসমান-জমিনের রবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যেন বাধা না হয়। হে আল্লাহ তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি; হে আমাদের রব, আমাদের মনের কুপ্রবৃৃত্তি আমাদের পরাজিত করে দিচ্ছে। আমাদের অন্তরের কুবাসনা আমাদের ওপর প্রবল হয়ে গেছে। ওহ্ আল্লাহ, আমাদের অন্তর তো শক্ত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং হে আল্লাহ, আমাদের তোমার রহমতের চাদরে আবৃত করে নাও। রমজান মাসে আমাদের তোমার নৈকট্যভাজনদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও। তোমার প্রিয় বান্দার কাতারে শামিল করে নাও।
রমজান। রমজান তো সেই মহান মাস, যা আমাদের কাছে এসেছে রহমত-বরকতের পাথেয় নিয়ে। অথচ এ মাসে আমরা কী করি? আমাদের আগেরকার ঝগড়া-বিবাদ অব্যাহত থাকে। আমাদের খারাপ অভ্যাসগুলো অব্যাহত থাকে। অবৈধ মেলামেশা ও সম্পর্কগুলো আগের মতোই থাকে। হারাম কাজগুলোও চলতে থাকে। হে আল্লাহ, হেফাজত করো, তোমার ক্ষমা ও মাগফেরাত ভিক্ষা দাও। হেফাজত করো, তোমার ক্ষমা ও মাগফেরাত ভিক্ষা দাও।
হে আল্লাহর বান্দা! আপনাদের প্রতি এবং আমার নিজের প্রতিও আমার একটি আহ্বানÑ আল্লাহর দোহাই দিয়ে আপনাদের কাছে নিবেদন করছি, যে ব্যক্তি আল্লাহকে পেতে চায়, আল্লাহর দিদার লাভে ধন্য হতে চায়, আল্লাহর রহমত কামনা করে, আল্লাহর দিকে অভিমুখী হতে চায়, সে যেন আজ থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়। এখন থেকেই যেন প্রস্তুত হয়ে যায়। কী দিয়ে শুরু করবে? কীসের প্রস্তুতি নেবে? প্রস্তুতি নেবে এই বিষয়ে যে, রহমান-রহিম দয়ালু রবের কাছে তওবা করবে। আল্লাহর কাছে ফিরে আসবে। প্রিয় বন্ধুরা, তওবা হলো সেই জিনিস, যার মাধ্যমে বান্দা রমজান মাসে আল্লাহর সান্নিধ্য ও নৈকট্য অর্জন করতে পারবে।
হে যুবক ভাইয়েরা! যে মোবাইলে হারাম জিনিস দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, মন্দ জিনিস দেখার অভ্যাস গড়ে তুলেছে, তোমাদের মধ্যে যারা হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছ, গোপন বার্তা পাঠাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছ, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছ, তোমাদের মধ্যে যারা এমনভাবে রাত কাটাও, যা আল্লাহর ক্রোধকে ডেকে আনে, তোমাদের মধ্যে যারা নামাজ পড়ো না, তোমাদের মধ্যে যারা মা-বাবাকে কষ্ট দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করো, হারাম উপার্জন করো। ওহে, তোমাদের মধ্যে যারা হারাম জিনিস দেখে মজা পাও, ওহে যুবক ভাইয়েরা, এই মুহূর্তগুলো হলো সততা অর্জনের এবং আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশের।
ওহে যুবক ভাই, নিরাশ হয়ো না, আশা রাখ তাঁর দরবারে। আল্লাহ তো তোমাকেই বলছেন, হে আদম সন্তান, হে আদম সন্তান, তুমি যখনই আমাকে ডাকবে আর আমার কাছে আশা পোষণ করবে, আমি তখনই তোমাকে মাফ করে দেব। তোমার যত গোনাহ আছে ক্ষমা করে দেব। একটুও পরোয়া করব না, হে আদম সন্তান, তুমি যখনই আমাকে ডাকবে, আমার কাছে আশা করবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, তোমার যত গোনাহ আছে মোচন করে দেব। একটুও পরোয়া করব না, হে আদম সন্তান, তোমার গোনাহ যদি আকাশের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এরপরও যদি তুমি আমার কাছে তওবা করতে আস, ক্ষমা চাও; আমি তোমাকে মাফ করে দেব। একটুও পরোয়া করব না, হে আদম সন্তান, তুমি যদি জমিনভরা পাপ নিয়ে আমার কাছে আস, শুধু শিরকের অপরাধে দোষী না হও, আমি কিন্তু তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করব জমিনভরা মাগফেরাত নিয়ে।

পবিত্র মক্কা-মদিনা কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান ইমাম শায়খ সুদাইসের বক্তব্যটি অনুবাদ করেছেন মুফতি রাসেদুর রহমান

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এবিসির বিশ্লেষণ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যেভাবে ফাটল

রমজানে যুবকদের প্রতি দরদি বার্তা

আপডেট টাইম : ১১:৪৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গেল বছর রমজানে কয়েকজন যুবক এসেছিল আমার কাছে। তারা এসে অনুযোগ করল শায়খ, রমজান আসে আমাদের কাছে; কিন্তু নেক আমলের হিম্মত পাই না। রমজান আসে; কিন্তু আমলের মধ্যে স্বাদ পাই না। রমজান আসে; কিন্তু অন্তরটা শক্তই থাকে, নরম হয় না। চোখে পানি আসে না, অন্তর ভয়ে কম্পিত হয় না। শরীর উন্নতির দিকে ধাবিত হয় না। নফস আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করে না। এর কারণ কী শায়খ?
এভাবেই আমাদের রমজান কেটে যায়, এমনকি যখন ঈদের রাত চলে আসে, চেহারা আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। জানো ভাই, এর কারণ কী? রমজান আসার পরও আমাদের হৃদয়গুলো শক্ত থাকার কারণ হলো আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাঁর সঙ্গে গোপন মোনাজাতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করে রাখেন। তাঁর দরবারে নত হওয়ায় স্বাদ থেকে মাহরুম রাখেন। তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করে আনন্দ পাওয়ায় দৌলত থেকে দূরে রাখেন। তাঁর সান্নিধ্যে ধন্য হওয়া থেকেও দূরে ঠেলে দেন।
এসবের একমাত্র কারণ হলো গোনাহ। গোনাহ এবং খোদার অবাধ্যতাই এর একমাত্র কারণ। কিন্তু খুব কম মানুষই আছে, যারা এটা টের পায়; বুঝতে পারে। আল্লাহ রহম করুন যেসব আলেমকে, যাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল রমজানকে কীভাবে স্বাগত জানাব? তারা জবাব দিয়েছিলেন, একে স্বাগত জানাও তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে। তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে রমজানকে সম্ভাষণ জানাও। কেননা বান্দা গোনাহের কারণে আল্লাহর রহমতের দুয়ার থেকে দূরে ছিটকে পড়ে।
সুতরাং সৌভাগ্যবান সে ভাই, যারা শাবান মাসেই আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে আবদার জানায়, হে আমার খোদা, আমার সামনের রমজানকে তুমি তোমার খায়র, রবকত এবং অন্যান্য দিয়ে ভরে দাও। হে আল্লাহ লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হওয়া থেকে তোমার কাছে পানা চাই। হে আল্লাহ যত গোনাহ করেছি এবং যা অপকর্ম করেছি, তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ তোমার আশ্রয় চাই, আমাদের গোনাহগুলো   যেন নামাজে আমাদের চোখে পানি আসার পথে অন্তরায় না হয়। তোমার দরবারে মোনাজাতের স্বাদপ্রাপ্তির পথেও যেন বাধা না হয়। আসমান-জমিনের রবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যেন বাধা না হয়। হে আল্লাহ তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি; হে আমাদের রব, আমাদের মনের কুপ্রবৃৃত্তি আমাদের পরাজিত করে দিচ্ছে। আমাদের অন্তরের কুবাসনা আমাদের ওপর প্রবল হয়ে গেছে। ওহ্ আল্লাহ, আমাদের অন্তর তো শক্ত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং হে আল্লাহ, আমাদের তোমার রহমতের চাদরে আবৃত করে নাও। রমজান মাসে আমাদের তোমার নৈকট্যভাজনদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও। তোমার প্রিয় বান্দার কাতারে শামিল করে নাও।
রমজান। রমজান তো সেই মহান মাস, যা আমাদের কাছে এসেছে রহমত-বরকতের পাথেয় নিয়ে। অথচ এ মাসে আমরা কী করি? আমাদের আগেরকার ঝগড়া-বিবাদ অব্যাহত থাকে। আমাদের খারাপ অভ্যাসগুলো অব্যাহত থাকে। অবৈধ মেলামেশা ও সম্পর্কগুলো আগের মতোই থাকে। হারাম কাজগুলোও চলতে থাকে। হে আল্লাহ, হেফাজত করো, তোমার ক্ষমা ও মাগফেরাত ভিক্ষা দাও। হেফাজত করো, তোমার ক্ষমা ও মাগফেরাত ভিক্ষা দাও।
হে আল্লাহর বান্দা! আপনাদের প্রতি এবং আমার নিজের প্রতিও আমার একটি আহ্বানÑ আল্লাহর দোহাই দিয়ে আপনাদের কাছে নিবেদন করছি, যে ব্যক্তি আল্লাহকে পেতে চায়, আল্লাহর দিদার লাভে ধন্য হতে চায়, আল্লাহর রহমত কামনা করে, আল্লাহর দিকে অভিমুখী হতে চায়, সে যেন আজ থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়। এখন থেকেই যেন প্রস্তুত হয়ে যায়। কী দিয়ে শুরু করবে? কীসের প্রস্তুতি নেবে? প্রস্তুতি নেবে এই বিষয়ে যে, রহমান-রহিম দয়ালু রবের কাছে তওবা করবে। আল্লাহর কাছে ফিরে আসবে। প্রিয় বন্ধুরা, তওবা হলো সেই জিনিস, যার মাধ্যমে বান্দা রমজান মাসে আল্লাহর সান্নিধ্য ও নৈকট্য অর্জন করতে পারবে।
হে যুবক ভাইয়েরা! যে মোবাইলে হারাম জিনিস দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, মন্দ জিনিস দেখার অভ্যাস গড়ে তুলেছে, তোমাদের মধ্যে যারা হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছ, গোপন বার্তা পাঠাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছ, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছ, তোমাদের মধ্যে যারা এমনভাবে রাত কাটাও, যা আল্লাহর ক্রোধকে ডেকে আনে, তোমাদের মধ্যে যারা নামাজ পড়ো না, তোমাদের মধ্যে যারা মা-বাবাকে কষ্ট দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করো, হারাম উপার্জন করো। ওহে, তোমাদের মধ্যে যারা হারাম জিনিস দেখে মজা পাও, ওহে যুবক ভাইয়েরা, এই মুহূর্তগুলো হলো সততা অর্জনের এবং আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশের।
ওহে যুবক ভাই, নিরাশ হয়ো না, আশা রাখ তাঁর দরবারে। আল্লাহ তো তোমাকেই বলছেন, হে আদম সন্তান, হে আদম সন্তান, তুমি যখনই আমাকে ডাকবে আর আমার কাছে আশা পোষণ করবে, আমি তখনই তোমাকে মাফ করে দেব। তোমার যত গোনাহ আছে ক্ষমা করে দেব। একটুও পরোয়া করব না, হে আদম সন্তান, তুমি যখনই আমাকে ডাকবে, আমার কাছে আশা করবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, তোমার যত গোনাহ আছে মোচন করে দেব। একটুও পরোয়া করব না, হে আদম সন্তান, তোমার গোনাহ যদি আকাশের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এরপরও যদি তুমি আমার কাছে তওবা করতে আস, ক্ষমা চাও; আমি তোমাকে মাফ করে দেব। একটুও পরোয়া করব না, হে আদম সন্তান, তুমি যদি জমিনভরা পাপ নিয়ে আমার কাছে আস, শুধু শিরকের অপরাধে দোষী না হও, আমি কিন্তু তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করব জমিনভরা মাগফেরাত নিয়ে।

পবিত্র মক্কা-মদিনা কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান ইমাম শায়খ সুদাইসের বক্তব্যটি অনুবাদ করেছেন মুফতি রাসেদুর রহমান