ঢাকা ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতার মতামত জরিপ জানুয়ারিতে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ আসামি রিমান্ডে বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

রমজানের ফকির রমিজ, আলেয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭
  • ২৮৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফরিদপুরের বাসিন্দা রমিজ মিয়া। ৫২ বছর বয়সী রমিজ পুরো পরিবার নিয়ে এখন ঢাকায়। উদ্দেশ্য চাঁদ রাতের আগ পর্যন্ত রাজধানীতে ভিক্ষা করবেন। যা আয় হবে সেটা দিয়ে আগামী কয়েক মাস নিশ্চিন্তে খেয়ে-পরে দিন পার করবেন। স্ত্রী দুই সন্তান মিলে একমাস ভিক্ষা করে তিনি প্রতি বছর লাখ টাকার উপরে আয় করতে পারেন। গতকাল রাজধানীর পান্থপথে রমিজ মিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য দেন। জানান, ভিটে-মাটি কিছুই নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন। পরিবার চালাতে দিনমজুরের কাজ করেন। গরিব এলাকায় থাকার কারণে সব সময় কাজ পাওয়া যায় না। আর দিনমজুরের কাজ তিনি ছাড়া পরিবারের আর কেউ পারেন না। তাই তিনি শবেবরাতের পরপরই ঢাকায় চলে আসেন। এ বছর তিনি উঠেছেন তেজগাঁও কলোনিতে। ২ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি রুম নিয়েছেন। সেই রুমেই পরিবারের সবাই একসঙ্গে থাকেন। সারা দিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করেন আর রাত হলে শুধু বাসায় গিয়ে ঘুমান। রমিজ মিয়া জানান, চারজন মিলে পুরো রমজান মাস ভিক্ষা করলে যা আয় হবে সেটা দিয়ে তিনি কয়েক মাস কাজকর্ম ছাড়াই চলতে পারবেন। প্রতি বছর এরকমই হয়। এবছরও মোটামুটি ভালো আয় হচ্ছে। তবে যেদিন বৃষ্টি হয় সেদিন তেমন আয় হয় না।
শেরপুরের বাসিন্দা আলেয়া বেগম। ষাটোর্ধ্ব এ নারী গত ৪০ বছর ধরে ঢাকায় আছেন। রিকশাচালক স্বামী আরো ১৭ বছর আগে মারা গেছেন। নেত্রকোনার এক পরিবারের সঙ্গে নাখালপাড়া কলোনিতেই থাকেন। স্বামী মারা যাবার পর কিছুদিন মানুষের বাসায় কাজ করেন। তারপরই থেকেই ভিক্ষা করে নিজের খরচ চালান নিঃসন্তান আলেয়া বেগম। গতকাল নগরীর মানিক মিয়া এভিনিউতে ভিক্ষা করার সময় আলেয়া জানান, বয়স হয়েছে, তাই তিনি অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। অনেক কষ্ট করে এখানে আসেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিক্ষা করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। নিজের খরচ চালিয়ে কিছু টাকা তিনি সঞ্চয় করতে পারেন। স্বপ্ন আছে সেই টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে জমি কিনবেন। সেখানে একটি ঘর তৈরি করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এমনিতে রাজধানীতে ৫০ হাজারের কাছাকাছি ভিক্ষুক আছে। রমজানকে সামনে রেখে তার পরিমাণ এক লাখের ওপরে চলে যায়। শবেবরাতের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি ভিক্ষুকরা রাজধানীতে আসতে শুরু করেন। চাঁদ রাত পর্যন্ত তারা ভিক্ষা করে আয় করেন। পরে তারা বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেন।
গত কয়েক দিন রাজধানীর ফার্মগেট, পান্থপথ, গ্রিনরোড, বসুন্ধরা সিটির সামনের ফটক, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, নিলক্ষেত, আজিমপুর, মৌচাক, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন, প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান, হাইকোর্ট, মতিঝিল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, কমলাপুর রেলস্ট্রেশন, টিকাটুলি, রাজধানী মার্কেট, মগবাজার, ইস্কাটন, বাংলামোটর, রামপুরা, বাড্ডা, বনানী, নতুনবাজার, শাহজাদপুর, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মানিকমিয়া এভিনিউ, আসাদগেট, কল্যাণপুর, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডসহ আরো কিছু এলাকায় ভিক্ষুকদের অবস্থান দেখা গেছে। এছাড়া নগরীর অলিগিলি থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, পার্ক, বস্ত্রমেলার এলাকায় ভিক্ষুকদের অবস্থান ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ভিক্ষুকের মধ্যে বেতনধারী ভিক্ষুকও আছেন। কিছু দালাল গ্রাম থেকে অসহায় গরিব দিনমজুরদের মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা বেতনে চুক্তি করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সারা মাসে যা আয় হবে তার পুরোটাই  ওই দালাল নিয়ে যাবে। নেত্রকোনার ফরহাদ মিয়া জানান, আলম নামের এক প্রতিবেশী দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় থাকেন। প্রতি বছর রমজান মাসে তিনি আমাকে ঢাকা নিয়ে আসেন। সারা মাস ভিক্ষা করে যা আয় হয় তার সবই তিনি আলমের হাতে তুলে দেন। বিনিময়ে মাস শেষে তিনি তাকে ১২ হাজার টাকা দেন। নিউ মার্কেটের সামনে ভিক্ষা করছিলেন নোমান মিয়া। তিনি জানান, প্রতিবছর রমজান মাসে ময়মনসিংহ থেকে রাজধানী আসেন। অভাবের সংসার। দিনমজুরের কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়েই টানাটানি করে সংসার চলে। রমজানের এক মাস ঢাকায় ভিক্ষে করে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করা যায়। পরিচিত এক ভাইয়ের বাসায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সারা দিন নিউমার্কেটে আসা ক্রেতাদের কাছে ভিক্ষা করেন। পুরো মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। সেই টাকা তুলে দেন ভাইকে। তাকে দেয়া হয় ১২ হাজার টাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল

রমজানের ফকির রমিজ, আলেয়া

আপডেট টাইম : ১২:১৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফরিদপুরের বাসিন্দা রমিজ মিয়া। ৫২ বছর বয়সী রমিজ পুরো পরিবার নিয়ে এখন ঢাকায়। উদ্দেশ্য চাঁদ রাতের আগ পর্যন্ত রাজধানীতে ভিক্ষা করবেন। যা আয় হবে সেটা দিয়ে আগামী কয়েক মাস নিশ্চিন্তে খেয়ে-পরে দিন পার করবেন। স্ত্রী দুই সন্তান মিলে একমাস ভিক্ষা করে তিনি প্রতি বছর লাখ টাকার উপরে আয় করতে পারেন। গতকাল রাজধানীর পান্থপথে রমিজ মিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য দেন। জানান, ভিটে-মাটি কিছুই নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন। পরিবার চালাতে দিনমজুরের কাজ করেন। গরিব এলাকায় থাকার কারণে সব সময় কাজ পাওয়া যায় না। আর দিনমজুরের কাজ তিনি ছাড়া পরিবারের আর কেউ পারেন না। তাই তিনি শবেবরাতের পরপরই ঢাকায় চলে আসেন। এ বছর তিনি উঠেছেন তেজগাঁও কলোনিতে। ২ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি রুম নিয়েছেন। সেই রুমেই পরিবারের সবাই একসঙ্গে থাকেন। সারা দিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করেন আর রাত হলে শুধু বাসায় গিয়ে ঘুমান। রমিজ মিয়া জানান, চারজন মিলে পুরো রমজান মাস ভিক্ষা করলে যা আয় হবে সেটা দিয়ে তিনি কয়েক মাস কাজকর্ম ছাড়াই চলতে পারবেন। প্রতি বছর এরকমই হয়। এবছরও মোটামুটি ভালো আয় হচ্ছে। তবে যেদিন বৃষ্টি হয় সেদিন তেমন আয় হয় না।
শেরপুরের বাসিন্দা আলেয়া বেগম। ষাটোর্ধ্ব এ নারী গত ৪০ বছর ধরে ঢাকায় আছেন। রিকশাচালক স্বামী আরো ১৭ বছর আগে মারা গেছেন। নেত্রকোনার এক পরিবারের সঙ্গে নাখালপাড়া কলোনিতেই থাকেন। স্বামী মারা যাবার পর কিছুদিন মানুষের বাসায় কাজ করেন। তারপরই থেকেই ভিক্ষা করে নিজের খরচ চালান নিঃসন্তান আলেয়া বেগম। গতকাল নগরীর মানিক মিয়া এভিনিউতে ভিক্ষা করার সময় আলেয়া জানান, বয়স হয়েছে, তাই তিনি অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। অনেক কষ্ট করে এখানে আসেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিক্ষা করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। নিজের খরচ চালিয়ে কিছু টাকা তিনি সঞ্চয় করতে পারেন। স্বপ্ন আছে সেই টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে জমি কিনবেন। সেখানে একটি ঘর তৈরি করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এমনিতে রাজধানীতে ৫০ হাজারের কাছাকাছি ভিক্ষুক আছে। রমজানকে সামনে রেখে তার পরিমাণ এক লাখের ওপরে চলে যায়। শবেবরাতের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি ভিক্ষুকরা রাজধানীতে আসতে শুরু করেন। চাঁদ রাত পর্যন্ত তারা ভিক্ষা করে আয় করেন। পরে তারা বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেন।
গত কয়েক দিন রাজধানীর ফার্মগেট, পান্থপথ, গ্রিনরোড, বসুন্ধরা সিটির সামনের ফটক, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, নিলক্ষেত, আজিমপুর, মৌচাক, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন, প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান, হাইকোর্ট, মতিঝিল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, কমলাপুর রেলস্ট্রেশন, টিকাটুলি, রাজধানী মার্কেট, মগবাজার, ইস্কাটন, বাংলামোটর, রামপুরা, বাড্ডা, বনানী, নতুনবাজার, শাহজাদপুর, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মানিকমিয়া এভিনিউ, আসাদগেট, কল্যাণপুর, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডসহ আরো কিছু এলাকায় ভিক্ষুকদের অবস্থান দেখা গেছে। এছাড়া নগরীর অলিগিলি থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, পার্ক, বস্ত্রমেলার এলাকায় ভিক্ষুকদের অবস্থান ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ভিক্ষুকের মধ্যে বেতনধারী ভিক্ষুকও আছেন। কিছু দালাল গ্রাম থেকে অসহায় গরিব দিনমজুরদের মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা বেতনে চুক্তি করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সারা মাসে যা আয় হবে তার পুরোটাই  ওই দালাল নিয়ে যাবে। নেত্রকোনার ফরহাদ মিয়া জানান, আলম নামের এক প্রতিবেশী দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় থাকেন। প্রতি বছর রমজান মাসে তিনি আমাকে ঢাকা নিয়ে আসেন। সারা মাস ভিক্ষা করে যা আয় হয় তার সবই তিনি আলমের হাতে তুলে দেন। বিনিময়ে মাস শেষে তিনি তাকে ১২ হাজার টাকা দেন। নিউ মার্কেটের সামনে ভিক্ষা করছিলেন নোমান মিয়া। তিনি জানান, প্রতিবছর রমজান মাসে ময়মনসিংহ থেকে রাজধানী আসেন। অভাবের সংসার। দিনমজুরের কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়েই টানাটানি করে সংসার চলে। রমজানের এক মাস ঢাকায় ভিক্ষে করে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করা যায়। পরিচিত এক ভাইয়ের বাসায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সারা দিন নিউমার্কেটে আসা ক্রেতাদের কাছে ভিক্ষা করেন। পুরো মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। সেই টাকা তুলে দেন ভাইকে। তাকে দেয়া হয় ১২ হাজার টাকা।