ঢাকা ১০:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রিটেনের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ১৪ জন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৬:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০১৭
  • ২৬২ বার

যুক্তরাজ্যে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থী ছিলেন ১১ জন। আর এবারে প্রার্থী ১৪ জন। তবে এই সংখ্যা স্থানীয়ভাবে জানা গেছে। বুধবার পর্যন্ত ইলেকটোরাল কমিশনের কাছে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য নাই বলে ইত্তেফাককে জানিয়েছে কমিশনের মিডিয়া সেল।

এসব প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে মিস টিউলিপ লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। এই আসনে এবারেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ব্রেক্সিট প্রশ্নে তাঁর দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুধ্যে মিস টিউলিপ ছায়ামন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন।এছাড়াও দুবছরেই পার্লামেন্টে নানা ইস্যুতে সরব থেকে মূলধারার গণমাধ্যমের নজর এসেছিলেন। হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্নে একদিকে যেমন উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের বাস, অন্যদিকে অনেক দরিদ্র মানুষও রয়েছেন অনেক।এই আসনে বাংলাদেশি ভোটার প্রায় হাজারখানেক। তার আসনের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ ব্রেক্সিটের বিপক্ষে। তাই মিস টিউলিপ এই বিপুলসংখ্যক ভোটারদের টার্গেট করে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পদত্যাগ করেন।

হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন আসনটি বার বার হাত বদল হয়েছে লেবার এবং কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে। গতবছর টিউলিপ সিদ্দিক জিতেছিলেন মাত্র এক হাজার ১৩৮ ভোটে। এই আসনে ব্রিটিশ কট্টর জাতীয়তাবাদী দল ইউকিপ গত বছর ভোট পেয়েছিলো প্রায় দেড় হাজার। এবার তাদের কোনো প্রার্থী নাই। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে এই দেড় হাজার ভোট ইউকিপের বিকল্প হিসাবে কনজারভেটিভ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।এনিয়ে তার সমর্থকরা কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন।

লেবার পার্টির দুর্গ হিসাবে পরিচিত বাঙালি অধ্যুষিত বেথনালগ্রীন অ্যান্ড বো আসন। এখন থেকে দুবার এমপি নির্বাচিত হন রুশনারা আলী। ২০১৫ সালে ২৪ হাজার ৩শ ১৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। রুশনারার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩২ হাজার ৩শ ৮৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির মেথিউ স্মিথ পেয়েছিলেন ৮ হাজার ৭০ ভোট।

এবার এই আসনে একটি মসজিদের ইমাম আজমল মাশরুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।তিনিও বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত। ২০১০ সালের নির্বাচনে তিনি লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০ হাজার ২১০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। আর তখন রুশানারা আলী পেয়েছিলেন ২১ হাজার ৭৮৪ ভোট। এবারে নির্বাচনে আজমল মশরুরকে তার সাবেক দল লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার কারণে রুশানারা আবারও আসনটি ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ড. রূপা আশা হক ২০১৫ সালের নির্বাচনে রুশনারা ও টিউলিপ সিদ্দিকের সাথে ৩য় বাংলাদেশী হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যোগ দেন। রুপা পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওলজির শিক্ষক। শিক্ষকতা করছেন লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে। পিএইচডি করেছেন কালচারাল স্টাডিজের উপর। রূপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন। তখন থেকে তিনি বিভিন্ন নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থীদের জন্য ক্যাম্পেইন করে আসছেন। ২০১০ সালে তিনি লন্ডন বার অব ইলিংয়ের ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

ওয়েলিং এন্ড হার্টফিলড কনজারভেটিভ পার্টির নিরাপদ আসন। এই আসনের এমপি হচ্ছেন টরি পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান গ্র্যান্ড শ্যাপস। গতবার এই আসনে নির্বাচন করে আনোয়ার বাবুল পান ১৩ হাজার ১২৮ ভোট। বিজয়ী প্রার্থী গ্র্যান্ড শ্যাপস পান ২৫ হাজার ২৮১ ভোট। তার সংখ্যাগরিষ্টতা ছিলো ১২ হাজার ১৫৩ ভোট।

বেকেনহামও কনজারভেটিভ পার্টির নিরাপদ আসন। নারায়ণগঞ্জের মেয়ে মেরিনা আহমেদ গত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ভোট পান ৯ হাজার ৪৮৪। আর বিজয়ী প্রার্থী বব স্টুয়ার্ট পান ২৭ হাজার ৯৫৫ ভোট। এবারেও মিস মেরিনার সাথে আসা করা হচ্ছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

স্কটল্যান্ডের এডিনবারা সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে লেবার প্রার্থী পার্টি থেকে প্রার্থী বাংলাদেশি-ব্রিটিশ ফয়সল চৌধুরী। তিনিও এখানে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। লুটন সাউথ আসনটি মুলত লেবারের নিরাপদ আসন। এখানে লিবারেল ডেমোক্রেট থেকে প্রার্থী হয়ে আশুক আহমদ এমবিই ৩ হাজার ১৮৩ ভোট পান। এবারেও তিনি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে এলাকার জানিয়েছে। পপলার এন্ড লাইম হাউজ লেবারের নিরাপদ আসন। এখানে লেবারের সাবেক এমপি রয়েছেন জীম ফিটজপ্রেট্রিক। এই আসনে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা ১৬ হাজার ৯২৪ ভোট।এই আসনেও রয়েছে বিপুলসংখক বাঙালি ভোট।এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওলিউর রহমান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রিটেনের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ১৪ জন

আপডেট টাইম : ১০:৫৬:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০১৭

যুক্তরাজ্যে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থী ছিলেন ১১ জন। আর এবারে প্রার্থী ১৪ জন। তবে এই সংখ্যা স্থানীয়ভাবে জানা গেছে। বুধবার পর্যন্ত ইলেকটোরাল কমিশনের কাছে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য নাই বলে ইত্তেফাককে জানিয়েছে কমিশনের মিডিয়া সেল।

এসব প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে মিস টিউলিপ লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। এই আসনে এবারেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ব্রেক্সিট প্রশ্নে তাঁর দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুধ্যে মিস টিউলিপ ছায়ামন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন।এছাড়াও দুবছরেই পার্লামেন্টে নানা ইস্যুতে সরব থেকে মূলধারার গণমাধ্যমের নজর এসেছিলেন। হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্নে একদিকে যেমন উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের বাস, অন্যদিকে অনেক দরিদ্র মানুষও রয়েছেন অনেক।এই আসনে বাংলাদেশি ভোটার প্রায় হাজারখানেক। তার আসনের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ ব্রেক্সিটের বিপক্ষে। তাই মিস টিউলিপ এই বিপুলসংখ্যক ভোটারদের টার্গেট করে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পদত্যাগ করেন।

হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন আসনটি বার বার হাত বদল হয়েছে লেবার এবং কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে। গতবছর টিউলিপ সিদ্দিক জিতেছিলেন মাত্র এক হাজার ১৩৮ ভোটে। এই আসনে ব্রিটিশ কট্টর জাতীয়তাবাদী দল ইউকিপ গত বছর ভোট পেয়েছিলো প্রায় দেড় হাজার। এবার তাদের কোনো প্রার্থী নাই। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে এই দেড় হাজার ভোট ইউকিপের বিকল্প হিসাবে কনজারভেটিভ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।এনিয়ে তার সমর্থকরা কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন।

লেবার পার্টির দুর্গ হিসাবে পরিচিত বাঙালি অধ্যুষিত বেথনালগ্রীন অ্যান্ড বো আসন। এখন থেকে দুবার এমপি নির্বাচিত হন রুশনারা আলী। ২০১৫ সালে ২৪ হাজার ৩শ ১৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। রুশনারার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩২ হাজার ৩শ ৮৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির মেথিউ স্মিথ পেয়েছিলেন ৮ হাজার ৭০ ভোট।

এবার এই আসনে একটি মসজিদের ইমাম আজমল মাশরুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।তিনিও বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত। ২০১০ সালের নির্বাচনে তিনি লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০ হাজার ২১০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। আর তখন রুশানারা আলী পেয়েছিলেন ২১ হাজার ৭৮৪ ভোট। এবারে নির্বাচনে আজমল মশরুরকে তার সাবেক দল লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার কারণে রুশানারা আবারও আসনটি ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ড. রূপা আশা হক ২০১৫ সালের নির্বাচনে রুশনারা ও টিউলিপ সিদ্দিকের সাথে ৩য় বাংলাদেশী হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যোগ দেন। রুপা পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওলজির শিক্ষক। শিক্ষকতা করছেন লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে। পিএইচডি করেছেন কালচারাল স্টাডিজের উপর। রূপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন। তখন থেকে তিনি বিভিন্ন নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থীদের জন্য ক্যাম্পেইন করে আসছেন। ২০১০ সালে তিনি লন্ডন বার অব ইলিংয়ের ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

ওয়েলিং এন্ড হার্টফিলড কনজারভেটিভ পার্টির নিরাপদ আসন। এই আসনের এমপি হচ্ছেন টরি পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান গ্র্যান্ড শ্যাপস। গতবার এই আসনে নির্বাচন করে আনোয়ার বাবুল পান ১৩ হাজার ১২৮ ভোট। বিজয়ী প্রার্থী গ্র্যান্ড শ্যাপস পান ২৫ হাজার ২৮১ ভোট। তার সংখ্যাগরিষ্টতা ছিলো ১২ হাজার ১৫৩ ভোট।

বেকেনহামও কনজারভেটিভ পার্টির নিরাপদ আসন। নারায়ণগঞ্জের মেয়ে মেরিনা আহমেদ গত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ভোট পান ৯ হাজার ৪৮৪। আর বিজয়ী প্রার্থী বব স্টুয়ার্ট পান ২৭ হাজার ৯৫৫ ভোট। এবারেও মিস মেরিনার সাথে আসা করা হচ্ছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

স্কটল্যান্ডের এডিনবারা সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে লেবার প্রার্থী পার্টি থেকে প্রার্থী বাংলাদেশি-ব্রিটিশ ফয়সল চৌধুরী। তিনিও এখানে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। লুটন সাউথ আসনটি মুলত লেবারের নিরাপদ আসন। এখানে লিবারেল ডেমোক্রেট থেকে প্রার্থী হয়ে আশুক আহমদ এমবিই ৩ হাজার ১৮৩ ভোট পান। এবারেও তিনি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে এলাকার জানিয়েছে। পপলার এন্ড লাইম হাউজ লেবারের নিরাপদ আসন। এখানে লেবারের সাবেক এমপি রয়েছেন জীম ফিটজপ্রেট্রিক। এই আসনে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা ১৬ হাজার ৯২৪ ভোট।এই আসনেও রয়েছে বিপুলসংখক বাঙালি ভোট।এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওলিউর রহমান।