যথাযোগ্য মর্যাদা, গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালোবাসায় গণমানুষের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উদযাপন করল জাতি। নজরুলের বৈচিত্র্যময় সুর-ঐশ্বর্যের সম্মোহন আর অসামপ্রদায়িক মানবতার বাণী উচ্চারণে মুখরিত ছিল প্রতিটি অনুষ্ঠান মঞ্চ।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল গান, নৃত্য পরিবেশনা, আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য মঞ্চায়ন, নজরুল বিষয়ক আলোচনা, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান প্রভৃতি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিল। অনুষ্ঠান শুরু হয় গতকাল ভোরে কবির মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। রাজধানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা ছাড়াও কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুরে, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদা, উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কবির জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বিশেষ অতিথি ছিলেন। এবার কবির ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী সৈনিক নজরুল’। অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে স্মারক বক্তৃতা দেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল ইন্সটিটিউট যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীরা কলাভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হন এবং সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবি’র সমাধিস্থলে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপিসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জাতীয় কবির পৌত্রী খিলখিল কাজীর নেতৃত্বে পরিবারের সদস্যরা তাঁর সমাধিতে পুষ্পমাল্য ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে সকালেই দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ কেন্দ্র (সিআইআইডি) এবং বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গতকাল অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে জাতীয় কবির সমাধি প্রাঙ্গণ পর্যন্ত আরেকটি র্যালি বের করা হয়। বাংলা একাডেমি জাতীয় কবি কাজী নজরুলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিকালে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে নজরুল বিষয়ক একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।