আগাম বন্যায় বরাদ্দের ত্রাণের চাল থেকে ৫ মেট্রিকটন চাল জালিয়াতির অভিযোগে আটক হওয়া জেলার ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হরনাথ দাস (৩৯) জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
সোমবার কিশোরগঞ্জের জি.আর আদালত নং-৪ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম আনিসুল ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে রোববার বিকালে আটকের পর রাতে ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাসকে একমাত্র আসামি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাসান আহমেদ বাদী হয়ে ইটনা থানায় মামলা করেন।
দ-বিধির ৪০৯/৪১১ ধারায় দায়ের করা মামলায় (নং-৩) ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮৫ টাকা মূল্যের ৫ মেট্রিকটন চাল আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়কে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাসকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
আদালতে ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে শুনানি শেষে কিশোরগঞ্জের জি.আর আদালত নং-৪ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম আনিসুল ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাস ধনপুর ইউনিয়নের কাঠুইর গ্রামের দুর্গাচরণ দাসের ছেলে এবং ধনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
মামলা ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য ধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাস গত ৩০শে এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে পাঁচ মেট্রিকটন জিআর চাল উত্তোলন করেন।
গত ১লা মে এসব চাল বিতরণ করার কথা ছিল। কিন্ত ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাস চাল বিতরণ না করে পুরো ৫ মেট্রিক টন চালই কালোবাজারে বিক্রি করে দেন।
জিআর চাল বিতরণ না করেই ইউপি চেয়ারম্যান বিতরণ দেখিয়েছেন, এমন অভিযোগ ওঠার পর ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাসকে রোববার বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান খান জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তার স্বাক্ষর এবং চাল বিতরণের মাস্টাররোল দেখতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ধরা পড়ে যান। এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাস আত্মসাতের জন্য এই পাঁচ মেট্রিক টন চাল বিতরণ না করে নিজের কাছে রেখে দেয়ার কথা স্বীকার করেন।
পরে ইউপি চেয়ারম্যানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ইটনা বাজারের আওয়ামী লীগ অফিসের কাছের একটি ঘর থেকে কালোবাজারে বিক্রি করা ১১০ বস্তায় পাঁচ মেট্রিক টন চাল উদ্ধার করা হয়।
এর আগে চাল আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাস উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী বদরুজ্জামানকে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য চাপ দেন। এজন্যে তিনি খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বদরুজ্জামানকে মারধরও করেন।
এ পরিস্থিতিতে রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান ইউএনও মশিউর রহমান খান। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিকট চাল আত্মসাত এবং ঘটনা আড়াল করতে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী বদরুজ্জামানকে হুমকি ও ভয়ভীতির দেখানোর কথা স্বীকার করে লিখিত দেন ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাস।
খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মারধর করার অপরাধে ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাসকে ইউএনও মশিউর রহমান খান ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এছাড়া সরকারি বরাদ্দকৃত ত্রাণের চাল আত্মসাত করার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাসান আহমেদ বাদী হয়ে দ-বিধির ৪০৯/৪১১ ধারায় ইটনা থানায় মামলা করেন।
রোববার রাত পৌন ১২টায় মামলা দায়েরের পর সোমবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাসের জামিন মঞ্জুর করেন।
এ ব্যাপারে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আদালতে মূল মামলার এফআইআর উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ইউপি চেয়ারম্যানের জামিন দিয়েছেন আদালত।
তবে ইটনা থানার ওসি মো. আবদুল মালেক জানান, দ-বিধির ৪০৯ ধারা দুদক আইনের আওতাভুক্ত হওয়ায় এই মামলায় আসামিকে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করতে পারে না। ফলে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হরনাথ দাসকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।