তৃণমূলে দ্রোহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হালচাল

দ্রোহের আগুনে পুড়ছে বড় দুই দল। একাদশ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রকাশ্য রুপ নিচ্ছে দল দুটির নেতাদের মধ্যেকার অভ্যন্তরীণ বিরোধ। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সফরে গেলে সেই আগুনের বহিপ্রকাশও ঘটছে। তৃর্ণমূলের এই দ্রোহ আগামী নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন এবং নির্বাচনী প্রচারণা পর্যন্ত গড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের দাবি বড় দলে অনেক যোগ্য নেতা থাকেন। সবাইকে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র গত তিন বছরে রাজনৈতিক কোন্দল ও অন্যান্য ঘটনা নিয়ে হত্যাকান্ডের যে বার্ষিক রিপোর্ট তৈরি করেছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালে রাজনৈতিক সংঘাতে দেশে ১৭৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ জন আওয়ামী লীগের। ২০১৫ সালে রাজনৈতিক সংঘাতে নিহত ১৫৩ জনের মধ্যে ৩৩ জন এবং ২০১৪ সালে নিহত ১৪৭ জনের মধ্যে ৩৪ জন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী। তাদের বেশিরভাগই দলীয় কোন্দলে নিহত হয়েছেন বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে দল পুর্নগঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপির তৃণমূলে ঘরের বিরোধ চলে এসেছে মাঠ পর্যায়ে। তাদের নেতাদের চোখে ক্ষমতা সন্নিকটে। নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার জন্য নেতৃত্বও জরুরী। এজন্যই অসুস্থ্য প্রতিযোগীতা। তবে তৃণমুলে দ্রোহের নেপথ্যে দায়ী করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। দলের প্রভাবশালীদের ‘মাইম্যান’-কে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ন পদে বসানো নিয়েই যতো অপ্রীতিকর ঘটনা। ওইসব সামাল দিতে গলঘর্ম হচ্ছে কেন্দ্র। তাদের সাংগঠনিক ৭৭ জেলার মধ্যে অন্ত:ত ১৫টিতেই দ্ব›দ্ব-কো›দ্বল বিরাজ করছে। পক্ষকালের সাংগঠনিক সফর ও কর্মী সমাবেশ ঘিরে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হামলা, ভাংচুর, পুলিশের ফাকাগুলিসহ বহু সংখ্যক আহতের ঘটনা ঘটেছে।
আওয়ামী লীগ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু যতই এ চেষ্টা চলছে ততই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে শাসক দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নিজেদের আখের গোছাতে যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন নেতারা। এর মধ্যে কেউ কারও নিয়ন্ত্রিত রাজ্যে হাত বাড়ালে নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এ সংঘর্ষে নিজেরাই নিজেদের কর্মীদের রক্ত ও প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, আওয়ামী লীগের মুখোমুখি এখন আওয়ামী লীগ। তৃণমূল কোন্দলের প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন দলের হাইকমান্ড। আগামী নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সামনের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে দলটি। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জে প্রতিপক্ষের তুলনায় নিজেদের দ্ব›দ্ব-কোন্দলকেই বড় বাধা ভাবছে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনকে সামনে রেখেও এই চলমান মতবিরোধ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে দলটিতে। তৃণমূলের কোন্দল সামলাতে তাই কঠোর হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, যতই দিন যাচ্ছে, ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠনগুলো। জেলা, উপজেলা ও থানায় দলীয় কোন্দলে মারামারি, হানাহানি ও সংঘর্ষের ঘটনা এখন নিয়মিত। স¤প্রতি অন্তত ২২ জেলায় দলীয় কোন্দল গড়িয়েছে মারামারি-প্রাণহানির পর্যায়ে। এ কারণে তৃণমূলের সাংগঠনিক রাজনীতি অনেকটাই নাজুক হয়ে পড়েছে। তৃণমূলের এমন নাজুক পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা বিরোধপূর্ণ জেলাগুলোয় স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকেও বসতে শুরু করেছেন।
দলের তৃণমূলের এ বেপরোয়া অবস্থান অনেকটা স্বীকার করে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার নেতাকর্মীদের সাবধান করছেন; সংশোধিত হতে হুঁশিয়ার করছেন। গত ১৯ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দলের মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা আছে। তা সমাধান করতে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা তা শুরুও করেছি।
গত বছরের অক্টোবর মাসে দুইদিন ব্যাপী জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের বিশেষ করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংশোধিত হতে বারবার সাবধান ও হুঁশিয়ারী দিয়ে আসছেন। কিন্তু দলের শীর্ষ পর্যায়ের এই হুঁশিয়ারী সত্তে¡ও থামানো যাচ্ছে না তৃণমূলের হানাহানি। বরং দিনদিন তা বেড়েই চলেছে। টানা দুই মেয়াদে প্রায় সাড়ে ৮ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক মাঠে শক্ত কোনো প্রতিপক্ষ দল না থাকায় প্রায়ই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েক ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগ। কোথাও আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ বনাম যুবলীগ, ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ বনাম আওয়ামী লীগ- এভাবে নিজেদের মধ্যে রক্তারক্তিতে লিপ্ত ক্ষমতাসীন দলটি।
গত ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দেন। তিনি দলের জন্য ক্ষতির কারণ হয় এমন কোনো বেসামাল কথাবার্তা না বলতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ক্ষমতার শেষ সময়ে সবাই বেশি বেসামাল হয়ে পড়ে। কথাও বেসামাল হয়ে যায়, কাজেও বেসামাল হয়ে যায়। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে, তৃণমূল আওয়ামী লীগের মধ্যে বিদ্যমান দ্ব›দ্ব-কোন্দল-সংঘাত নিরসনে নিয়মিত বৈঠক করতে শুরু করেছে দলটি। গেল সপ্তাহে যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা নীলফামারী, ঢাকা, মানিকগঞ্জ জেলার নেতাদের ডাকা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বৈঠক করছেন। তবে যশোর জেলার নেতারা দলের সাধারণ সম্পাদকের সামনেই অশোভন আচরণ এমনকি এক পক্ষ আরেক পক্ষকে যশোর গিয়ে দেখে নেয়ার হুমকিরও ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলীয় সূত্র জানায়, ধারাবাহিকভাবে কোন্দলপূর্ণ মোট ২২ টি জেলার সঙ্গে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে দলের মতবিরোধ কমাতে না পারলে তা নির্বাচনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেজন্যই দলের শীর্ষ নেতারা তৃণমূলের দ্ব›দ্ব কমানোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতারা কোন্দল প্রবণ জেলায় ছুটে যাচ্ছেন, আবার বিভিন্ন জেলার নেতাদেরও কেন্দ্রে ডেকে এনে বৈঠক করছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এরমধ্যে নেতা-কর্মীর সংখ্যাও বেশি। আর আওয়ামী লীগের মত বড় দলে কমবেশি মত-পার্থক্য স্থানীয়ভাবে কিছুটা থাকতেই পারে।
তিনি বলেন, মত পার্থক্যটা যাতে সাংঘর্ষিক রূপ না নেয় সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি। আমরা সুস্থ প্রতিযোগিতাটাকে প্রমোট করি কিন্তু অসুস্থ প্রতিযোগিতাটাকে নিরুৎসাহিত করছি। সা¤প্রতিক সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে কিন্তু এসব একেবারে নতুন নয়। সব দলেই এমন হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে যেমন আছে, ভারতসহ অন্যান্য দেশের ইতিহাসেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
তৃণমূলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টার বিষয়ে আহমদ হোসেন বলেন, আমরা তাদের ডাকছি। আমাদের সাধারণ সম্পাদক পার্টির কার্যালয়ে তাদের ডেকে এনে কথা বলছেন, উপদেশ দিচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই বার্তাই আমরা দিচ্ছি।
এদিকে, বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে চলা কোন্দলের মধ্যে স¤প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের ঘটনা।
স্থানীয় সংসদ সদস্যকে এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না করা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। জেলার বিজয়নগরে নবনির্মিত উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধনের পূর্ব-নির্ধারিত তারিখ ছিল ২৩ এপ্রিল। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের বিজয়নগর সফর কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয় আগেই। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ তুলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এই সফরের বিরোধিতা করে। তারা কর্মসূচি বর্জনের পাশাপাশি মন্ত্রীর সফর ঠেকাতে হরতালের ডাক দেয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
অপরদিকে, চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে ঘেরাও কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ২৫ নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সূত্রমতে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির সুইমিংপুল নির্মাণের পক্ষে। অন্যদিকে, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী বিপক্ষে। দুই শীর্ষ নেতার বিরোধিতার জের ধরেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরেছে।
এছাড়া, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কোন্দলে জর্জরিত সাংগঠনিক জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, খুলনা, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, বরিশাল মহানগর, ভোলা, পিরোজপুর, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলা।
বিএনপি : আন্দোলন এবং নির্বাচনের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি তৃণমুলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ করছে। ইতোমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সাড়ে চারশ’ নেতার সমন্বয়ে ৫১টি টিম গঠন করেছেন। তারা মাঠে কাজ করছেন। টিম লিড়ার স্থানীয় শীর্ষ নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা এবং কর্মীসভা করছেন। সংগঠনের সার্বিক চিত্র আগামী দুইদিনের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে উপস্থাপন করবেন।
দলীয় দফতর সূত্রমতে, সংগঠন পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্ত:ত ১৫টি জেলায় তৃণমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, মৌলভী বাজার, ময়মনসিংহ উত্তর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণের সাংগঠনিক অবস্থা খারাপ। ইতোমধ্যে ঝিনাইদহে বিএনপির দুই গ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে ১০/১৫ জন। বিরোধের নেপথ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গায় দলীয় দ্বন্দ বিরাজ করছে কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদুর কারণে তিনি তার স্বজনদের দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করতে চান। তাতে বাদ সেধেছেন ওহিদুল হক। দফায় দফায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে সেখানে। পটুয়াখালীতে বিরোধের নেপথ্যে দায়ী করা হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ারভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে। তার বিপরীতে স্থানীয় নেতা বাহারসহ অধিকাংশই। তাদের অভিযোগ আলতাফ চৌধুরী তার পছন্দের লোকদের হাতে কমিটি তুলে দিতে চান যারা কর্মীদের কাছে অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। পিরোজপুরে বিরোধ গাজী বাবুল ও আলমগীর হোসেনের দুই গ্রæপের মধ্যে। বরগুনার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে নিতে চান চেয়ারপার্ননের উপদেষ্টা এডভোকেট খন্দকার মাহবুবু হোসেন। মৌলভী বাজারে দীর্ঘ দিনের দ্ব›দ্ব চলছে সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান এবং সাবেক এমপি খালেদা রাব্বানীর মধ্যে। ময়মনসিংহ উত্তরে বিরোধ থানায় থানায়। চট্টগ্রাম উত্তরের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া গিয়াস কাদের চৌধুরী এবং আসলাম চৌধুরী। প্রবীণ নেতা গিকা চৌধুরী এবং উদীয়মান নেতা আসলাম চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে চাপাক্ষোভ বিরাজহ করছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণের গাজী শাহজাহান জুয়েল ও এনামুল হক এনাম গ্রæপের মধ্যে চরম দ্ব›দ্ব রয়েছে। গত ৩ মে প্রতিনিধি সম্মেলন ঘিরে দুই নেতার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অন্ত:ত ২০ জন আহত হয়। ঘটনা সাংঘর্ষিক হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
তবে এসব দ্ব›দ্বকে আমলে নিতে নারাজ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দল পূর্নগঠনে সারাদেশে ঘোষিত ‘কর্মী সভা’য় কয়েকটি জায়গায় বিভক্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সারা দেশের নেতাদের রাজনৈতিক সফর চলছে। বিএনপির একটা বৃহৎ রাজণৈতিক দল। গত কাল (বৃহস্পতিবার) গাজীপুরে কর্মীসভা হয়েছে, কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলো। ঢাকার বাইরে অন্যান্য জায়গায়ও কর্মী সভা হচ্ছে। দুই-একটা জায়গা ছোট-খাটো সমস্যা হয়- বিএনপির মতো বড় দলে এটা স্বাভাবিক। অন্যান্য দলেও এটা হয়।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দেশের রাজনীতিতে একটা অবক্ষয় দেখা দিয়েছে বিএনপি নেতারা তা থেকে দূরে নয়। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। নেতাকর্মীরা মনে করছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দলটি ক্ষমতায় যাবে। তাই নেতৃতবেÍ প্রতিযোগীতা রয়েছে। তবে এটা সুস্থ্য প্রতিযোগীতা হলে ভালো হতো। কিছু কিছু স্থানে সমস্যা রয়েছে। আমাদের নেতারা সফর করছেন তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর