রাজনীতিতে বিরল

অফিসে কাজ করছি। হঠাৎ বঙ্গভবন থেকে ফোন। মহামান্য প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন। বঙ্গবন্ধু কথা বলবেন? ফোন ধরতেই, তুই কি করছিস? একটু আমার অফিসে আয়। ফোন রেখেই ছুটলাম বঙ্গভবনের দিকে। বঙ্গবন্ধুর অফিস কক্ষের সামনে যেতেই ভেতর থেকে চিৎকার শুনছিলাম। ভয়ে ভয়ে পর্দা ঠেলতেই বঙ্গবন্ধু বললেন, তুই এসেছিস। আয়। ভেতরে প্রবেশ করেই দাঁড়িয়ে আছি। কিছু কথা বলার পর বঙ্গবন্ধু অন্যদের বিদায় দিয়ে আমাকে কাছে ডাকলেন। দুপুরে খেয়েছি কিনা জানতে চাইলেন। না বলতেই তিনি আমার হাত ধরে টান দিলেন। মুখে বললেন চল। আজ আমার সঙ্গে খাবি। বঙ্গবন্ধু তার গাড়ির সামনে গিয়ে বললেন, উঠ। গাড়ি চললো বত্রিশ নম্বরের দিকে। গাড়িতে বসে বঙ্গবন্ধু জানতে চাইলেন, মওলানা সাহেবের জনসভায় কত মানুষ হয়েছিল বলতো দেখি। আমি বললাম কমপক্ষে হাজার দশেক। সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বললেন, হ্যাঁ আমিও জানি মওলানা সাহেবের জনসভায় এর চেয়ে কম লোক হইতে পারে না। আর ওরা আমারে কয়, মওলানা সাহেবের জনসভায় নাকি ৫/৬শ’ লোক হইছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক আজিজ মিসির ভাইয়ের মুখে শোনা এ কথা। তখন আজিজ মিসির দৈনিক বাংলায় চাকরি করতেন। বঙ্গবন্ধু তাকে খুব স্নেহ করতেন। ওইদিন সকালে মওলানা ভাসানীর জনসভা ছিল পল্টন ময়দানে। জনসভা শেষ হয় দুপুরের দিকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আজিজ মিসিরকে ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘদিনের সহকর্মী আজিজ মিসির সময় পেলেই নানা স্মৃতি তুলে ধরতেন। বঙ্গবন্ধুর উদার মনের নানা স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলতেন, এমন একজন মানুষ বাংলার ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি হবে না। বঙ্গবন্ধুর আমলের সেই রিকশাওয়ালা নুরুর কথা কে না জানে। বঙ্গবন্ধু তখন রাষ্ট্রনায়ক। নুরু প্রায়ই বঙ্গবন্ধুর বাসভবন বত্রিশ নম্বরে রাস্তায় ঘুরাঘুরি করতেন।

একদিন বিষয়টি নজরে আসে বঙ্গবন্ধুর। লোক পাঠিয়ে তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যান। পাশে বসান। একসঙ্গে চা খান। নুরু সেদিন বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন রিকশা চালাই বলে আমাদের কোনো মূল্য নেই। মানুষজন কারণে অকারণে আমাদের মারতে আসে। গালাগাল দেয়। নুরুকে আশ্বস্ত করে বিদায় দেন বঙ্গবন্ধু। এর কয়েকদিন পর পল্টন ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর উদ্দেশে তার বক্তৃতায় বলেন, প্যান্ট-শার্ট পরা ভদ্রলোক ভাইয়েরা, রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে কেউ খারাপ ব্যবহার করবেন না। মনে রাখবেন- তারা আপনাদেরই কারও ভাই, কারও বাবা, কারও সন্তান। এই নুরুর রিকশায় বহুবার শেখ হাসিনা চড়েছেন। বর্তমানে নুরুকে টুঙ্গিপাড়া মাজার কমপ্লেক্সে চাকরি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি ফেসবুকের কল্যাণে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। খালি পায়ে প্রধানমন্ত্রী সমুদ্র সৈকতে। সরকার প্রধানের এমন ছবি আসলেই দুর্লভ। আর দুর্লভ বলেই ছবিটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সাধারণ মানুষ তা সানন্দে গ্রহণ করেছেন। শুধু এ ছবিই প্রথম নন। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে বেরিয়ে আসেন। ভ্যানে চড়ে গোপালগঞ্জের গ্রাম ঘুরে দেখা। আবার পুত্রের জন্মদিনে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ানো এ সবই প্রধানমন্ত্রীর চরিত্রের বাইরের খবর। আবার নাতনীকে কোলে নিয়ে আদর করার দৃশ্যও পুলকিত করে দেশবাসীকে। শুধু তা-ই নয়, পুরান ঢাকার নিমতলীতে আগুনে পুড়ে সব হারানো বিয়ে যোগ্য তিন মেয়েকে নিজের কন্যা হিসেবে বিয়ে দেয়ার ঘটনাও ব্যাপক আলোচিত। প্রধানমন্ত্রীর চরিত্রের বাইরের খবর হলেও আসলে শেখ হাসিনার চরিত্রই এমন। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের ঘটনা। কাহিনী সেই কক্সবাজারেরই। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সমুদ্র উপকূল। প্রায় আড়াই লাখ লোক মারা যায় সে ঘটনায়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ছুটে যান সেখানে। দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান। নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন উপকূলের দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে যেতে। শেখ হাসিনা সেদিন কক্সবাজার গিয়ে মর্মান্তিক এক দৃশ্য দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। এক পরিবারের ২২ জনের মধ্যে ২১ জনই মারা যান। একজন মাত্র তরুণ মোজাম্মেল এলাকায় না থাকায় বেঁচে যান।
মোজাম্মেলকে সেদিন শেখ হাসিনা মায়ের মমতায় কাছে টেনে নেন। তার সকল দায়িত্ব শেখ হাসিনা নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুধু তাই নয়, মোজাম্মেলকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। এই তো সেদিন হাওরের ফসল হারানোদের পাশে দাঁড়াতে ছুটে যান সুনামগঞ্জে। সেখানকার শাল্লায় এক অনুষ্ঠানে অনেকের হাতে তুলে দেন ত্রাণ সামগ্রী। অনুষ্ঠানে অসহায়দের জড়িয়ে ধরে তাদের সহমর্মিতা জানান। ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কথাই ধরা যাক। সে সময় রাজপথে জীবন্ত পোস্টার নূর হোসেনকে স্বৈরাচারের বুলেট কেড়ে নেয়। তার পরিবার হয়ে পড়ে অসহায়।
এ পরিবারের পাশেও গিয়ে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। নূর হোসেনের ভাই আলী হোসেনকে ড্রাইভিংয়ের কাজ শিখিয়ে নিজের গাড়ির চালক নিয়োগ করেন। অপর ভাইকে কুয়েত যাওয়ার সমস্ত ব্যয় বহন করেন শেখ হাসিনা। খুলনার সাংবাদিক দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হুমায়ুন কবীর বালুর পরিবারের দায়িত্বও নেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন আরো বহু ঘটনা রয়েছে। আসলেই শেখ হাসিনা একজন মমতাময়ী মা। একজন মমতাময়ী বোন। একজন সফল মানুষ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর