তানোরে বোরো ধান নিয়ে কৃষকের হাহাকার

বিলকুমারী বিলে বোরো ধান চাষ করে সারা বছরের ভাতের চাল ঘরে তোলে রাজশাহীর তানোর উপজেলার শত শত কৃষক। এবার আর সেই ধান ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। এলাকায় জোরালো বৃষ্টি নেই, তারপরও দেখা দিয়েছে অকাল বন্যা। রাতারাতি শিব নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় বিল ভরে গেছে পানিতে। ডুবে গেছে বোরো ধান। এর মাঝেই পরপর দু’দিন কালবৈশাখী। লণ্ডভণ্ড বাড়ি-ঘর। ফলে এলাকার কৃষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। গতকাল সকালে আধা কাঁচা, আধা পাকা ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসেন গুবিরপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক এন্তাজ আলী। সপ্তাহ খানেক আগেও বিলে ধান দেখে খুশিতে মন আনচান করছিল তার। সেই মুখ থেকে এখন হাসি উধাও। তিনি বলেন, দেড় বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ধানে পাক ধরেছে। আবার অনেক ধান কাঁচা আছে। এর মাঝে কোথা থেকে এলো যে সর্বনাশা বান। আধা পাকা ধান কেটে রশি দিয়ে বেঁধে জমি থেকে পানিতে ভাসিয়ে আনছেন শুকনো জায়গায়। সেখান থেকে স্বামী-স্ত্রী মিলে নিয়ে আসছেন বাড়ির আঙিনায়। বিলকুমারী বিলে একই গ্রামের আফসার আলী আবুর প্রায় সাত বিঘা বোরো ধানের জমি পানিতে ডুবেছে। সাত বিঘা জমিতে যে পরিমাণ ধান হবে, তার অর্ধেক শ্রমিককে দেওয়ার চুক্তিতে ধান কেটে নিচ্ছেন। একই এলাকার শাওন ও আরশাদের ধান পানিতে ডুবেছে। মাত্র কয়েক দিন খরতাপ হলে ধানগুলো পাকত। কিন্তু বাধ্য হয়ে আধা কাঁচা-আধা পাকা ধান পানির ভেতর থেকে কেটে নৌকায় করে নিয়ে আসছেন শুকনো জায়গায়। সেখান থেকে রাস্তায় এনে হপার মেশিনে মাড়াই করছেন ধান। হপার মেশিনে এক বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে কৃষককে গুনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা। আবার অনেক কৃষক পানির নিচে থেকে একেবারেই কাঁচা ধান নৌকায় করে নিয়ে আসছেন। কৃষকরা জানান, স্থানীয় শ্রমিকরা পানিতে ভিজে ধান কাটতে কোনোক্রমেই রাজি না। বহিরাগত শ্রমিকরাই তানোরের কৃষকের এ দুর্যোগের সময় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক চাষি জমির অর্ধেক ধান কিংবা তিন ভাগের দুই ভাগ ধান শ্রমিককে দিয়ে ধান কেটে নিচ্ছেন। এভাবেই মহাদুর্যোগে দিন অতিবাহিত করছেন তানোরের কৃষকরা। তানোর পৌর সদরের কৃষক মফিজ উদ্দীন জানান, ধানের আবাদ ছেড়ে পোল্ট্রির ব্যবসা শুরু করেছি। কিন্তু বিলকুমারী বিলে রয়েছে ৪ বিঘার মতো জমি। সেই জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলেন তিনি। পানিতে ডুবে যাওয়ায় তার ভাগ্যে জুটবে না কাঙ্ক্ষিত ফলন। তানোর পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান জানান, পৌরসভার কৃষকদের অন্যতম ভরসা বিলকুমারী বিলের বোরো ধান। এই ধান দিয়ে তারা সারা বছরের ভাতের চাল সংগ্রহ করে। কিন্তু হঠাত্ উজান থেকে আসা পানিতে শত শত কৃষকের ধান ডুবে গেছে পানিতে। তিনি পৌর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বিনামূল্যের কৃষি প্রণোদনার দাবি জানান। এদিকে, বিলকুমারী বিলে অকাল বন্যায় শত শত কৃষকের ধান পানিতে ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি তানোরের শুকনো এলাকার কৃষকরাও বোরো ধান নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। পরপর দু’দিনের কালবৈশাখী ঝড়ে বোরো ধানের গাছ শুয়ে পড়েছে মাটির সঙ্গে। ফলনেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। তারপরও থেমে নেই কৃষক। মাটিতে শুয়ে পড়া আধা কাঁচা-আধা পাকা ধান কেটে মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন সবাই। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে উপজেলায় বোরো ধান চাষ হয়েছিল সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে। উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে ডুবেছে। আমরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা এলে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর