ঢাকা ০৮:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি-৩ পদস্ত প্রকৌশলী সাসপেন্ড

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫০:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০১৭
  • ২৬১ বার

হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ধীরগতিতে কাজ করায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) মো. আব্দুল হাইসহ ৩ প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখা¯ (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। অন্যরা হলেন- সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার ও সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন। পাউবো’র মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসচিব (প্রশাসন) ওবায়দুল ইসলাম মঙ্গলবার এই চিঠি (পাউবো, সচি/ প্রশাসন-৩, লুজ/২০১৭/৩৫৯, ৩৬০ ও ৩৬১) সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়েছেন। পাউবো সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে সোমবার বিকালে এই চিঠি ইস্যু করেন উপ-সচিব ওবায়দুল ইসলাম।
পাউবো’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয় আগাম বন্যায় প্লাবিত সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলার হাওর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ধীরগতি সংক্রান্ত গুরুতর অভিযোগ তদন্তের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এই ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৪২,০০,০০০০,০৩১,২৭,০২৯,১৬-৩৫৩ তারিখ ৩০ এপ্রিলের নির্দেশনা মোতাবেক বাপাউবো (কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকুরি প্রবিধানমালা-২০১৩’এর প্রবিধান ৫৫ অনুযায়ী চাকুরী হতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই (পরিচিতি নম্বর ৫৯০৫২৭০০১), সিলেটের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার (পরিচিতি নম্বর ৬৪০৬০১০০৩), সুনামগঞ্জের সেই সময়কার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দীন (পরিচিতি নম্বর ৬৫০৩০১০০৫) কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, সাময়িক বরখাস্তকালীন প্রচলিত বিধিমোতাবেক বেতনভাতা ও সুবিধাসমূহ প্রাপ্য হবেন তারা। সাময়িক বরখাস্থকালে মো. আব্দুল হাই ও নূরুল ইসলাম মহাপরিচালক, বাপাউবো’এর দপ্তে সংযুক্ত থাকবেন।
প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জের ৪২ টি বড় হাওরের সব কটি হাওরই এবার পানিতে ডুবেছে।
২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধর্মপাশার চন্দ্রসোনার থাল হাওর বাঁধ না হওয়া অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ডুবেছে। এরপর একে একে নলুয়ার হাওরসহ বড় বড় হাওর পাড়ের প্রায় ৫ লাখ কৃষকের কপাল ভেঙেছে। প্রায় এক মাস লড়াই করেও শেষ রক্ষা হয়নি শনি ও পাগনার হাওর। ২৩ এপ্রিল শনি এবং ২৪ এপ্রিল পাগনার হাওর ডুবেছে। এই দুই হাওরের জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ কৃষকেরা বলেছেন,‘হাওরের বাঁধ ঠিকভাবে হলে, তাঁরা যেভাবে সংগ্রাম করেছেন, এই দুই হাওরেই পানি ঢুকতো না।’
দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন প্রকৌশলীর সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ১১৬টি প্যাকেজে ৮২০ কিলোমিটার বাঁধের ঠিকাদারদের অনেকেই সর্বোচ্চ ২০ ভাগের বেশি কাজ করেননি। পাউবো নিজেরাই স্বীকার করেছে ১২ টি বাঁধে ঠিকাদার কাজই শুরু করেনি। ২৩৮ টি পিআইসি’র মধ্যে কোন কোন পিআইসিও ঠিকভাবে কাজ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে হাওর তলিয়ে যাওয়া শুরু হবার (অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারির পরও) পরেও ১০ শতাংশ টাকা ঘুষ নিয়ে বাঁধের কাজের কার্যাদেশ পেছনের তারিখে ঠিকাদারদের হাতে তুলে দিয়েছে পাউবো।
হাওর বাঁচাও – সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা-আইনজীবী বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন,‘হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে এবার ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, এটি হাওর পাড়ের কৃষকরা যেমন দেখেছেন, শহরবাসীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেরই জানা। সেহেতু জড়িতদের কেবল সাময়িক বহিস্কার নয়, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। না হয় এ ধরনের অপকর্ম হতেই থাকবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘হাওর তলিয়ে যাওয়ার শুরুতেই আমি দাবি করেছিলাম যেহেতু দুর্নীতির বিষয়টি অনেকটা প্রমাণিত সুতরাং জড়িতদের শাস্তি পেতে হবে। কেবল সাময়িক বরখাস্ত নয় তদন্তসাপেক্ষে কঠোর শাস্তি দিতে হবে দুর্নীতিবাজদের। এবার শাস্তি না পেলে পাউবোর দুর্নীতির মূল উৎপাটন হবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি-৩ পদস্ত প্রকৌশলী সাসপেন্ড

আপডেট টাইম : ০৯:৫০:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০১৭

হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ধীরগতিতে কাজ করায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) মো. আব্দুল হাইসহ ৩ প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখা¯ (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। অন্যরা হলেন- সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার ও সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন। পাউবো’র মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসচিব (প্রশাসন) ওবায়দুল ইসলাম মঙ্গলবার এই চিঠি (পাউবো, সচি/ প্রশাসন-৩, লুজ/২০১৭/৩৫৯, ৩৬০ ও ৩৬১) সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়েছেন। পাউবো সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে সোমবার বিকালে এই চিঠি ইস্যু করেন উপ-সচিব ওবায়দুল ইসলাম।
পাউবো’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয় আগাম বন্যায় প্লাবিত সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলার হাওর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ধীরগতি সংক্রান্ত গুরুতর অভিযোগ তদন্তের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এই ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৪২,০০,০০০০,০৩১,২৭,০২৯,১৬-৩৫৩ তারিখ ৩০ এপ্রিলের নির্দেশনা মোতাবেক বাপাউবো (কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকুরি প্রবিধানমালা-২০১৩’এর প্রবিধান ৫৫ অনুযায়ী চাকুরী হতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই (পরিচিতি নম্বর ৫৯০৫২৭০০১), সিলেটের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার (পরিচিতি নম্বর ৬৪০৬০১০০৩), সুনামগঞ্জের সেই সময়কার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দীন (পরিচিতি নম্বর ৬৫০৩০১০০৫) কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, সাময়িক বরখাস্তকালীন প্রচলিত বিধিমোতাবেক বেতনভাতা ও সুবিধাসমূহ প্রাপ্য হবেন তারা। সাময়িক বরখাস্থকালে মো. আব্দুল হাই ও নূরুল ইসলাম মহাপরিচালক, বাপাউবো’এর দপ্তে সংযুক্ত থাকবেন।
প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জের ৪২ টি বড় হাওরের সব কটি হাওরই এবার পানিতে ডুবেছে।
২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধর্মপাশার চন্দ্রসোনার থাল হাওর বাঁধ না হওয়া অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ডুবেছে। এরপর একে একে নলুয়ার হাওরসহ বড় বড় হাওর পাড়ের প্রায় ৫ লাখ কৃষকের কপাল ভেঙেছে। প্রায় এক মাস লড়াই করেও শেষ রক্ষা হয়নি শনি ও পাগনার হাওর। ২৩ এপ্রিল শনি এবং ২৪ এপ্রিল পাগনার হাওর ডুবেছে। এই দুই হাওরের জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ কৃষকেরা বলেছেন,‘হাওরের বাঁধ ঠিকভাবে হলে, তাঁরা যেভাবে সংগ্রাম করেছেন, এই দুই হাওরেই পানি ঢুকতো না।’
দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন প্রকৌশলীর সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ১১৬টি প্যাকেজে ৮২০ কিলোমিটার বাঁধের ঠিকাদারদের অনেকেই সর্বোচ্চ ২০ ভাগের বেশি কাজ করেননি। পাউবো নিজেরাই স্বীকার করেছে ১২ টি বাঁধে ঠিকাদার কাজই শুরু করেনি। ২৩৮ টি পিআইসি’র মধ্যে কোন কোন পিআইসিও ঠিকভাবে কাজ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে হাওর তলিয়ে যাওয়া শুরু হবার (অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারির পরও) পরেও ১০ শতাংশ টাকা ঘুষ নিয়ে বাঁধের কাজের কার্যাদেশ পেছনের তারিখে ঠিকাদারদের হাতে তুলে দিয়েছে পাউবো।
হাওর বাঁচাও – সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা-আইনজীবী বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন,‘হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে এবার ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, এটি হাওর পাড়ের কৃষকরা যেমন দেখেছেন, শহরবাসীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেরই জানা। সেহেতু জড়িতদের কেবল সাময়িক বহিস্কার নয়, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। না হয় এ ধরনের অপকর্ম হতেই থাকবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘হাওর তলিয়ে যাওয়ার শুরুতেই আমি দাবি করেছিলাম যেহেতু দুর্নীতির বিষয়টি অনেকটা প্রমাণিত সুতরাং জড়িতদের শাস্তি পেতে হবে। কেবল সাময়িক বরখাস্ত নয় তদন্তসাপেক্ষে কঠোর শাস্তি দিতে হবে দুর্নীতিবাজদের। এবার শাস্তি না পেলে পাউবোর দুর্নীতির মূল উৎপাটন হবে না।