মন্ত্রী-এমপি দ্বন্দ্বে বিজয়নগরে হরতালের ডাক, উত্তেজনা

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সাংসদ ছায়েদুল হক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে এসেছে। জেলার বিজয়নগর উপজেলায় পশুসম্পদ কার্যালয় ভবন উদ্বোধনের জন্য আগামীকাল রবিবার মন্ত্রী ছায়েদুলের আগমন ঠেকাতে হরতাল ডেকেছে এমপি অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগ। মন্ত্রীও ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ওই কার্যালয় উদ্বোধন করতে কাল বিজয়নগর যাবেন। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বিজয়নগরে।

রবিবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সামনে রেখে এবং দুই পক্ষের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামলাতে বিজিবি, র‌্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ পুলিশ মোতায়েন করছে প্রশাসন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভুইয়া জানান, মন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। অন্তত ২০ হাজার মানুষ মন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে রাজপথে অবস্থান নেবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে সরকারি অনুষ্ঠান যেকোনো মূল্যে সম্পন্ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রী ছায়েদুলের অনুগত লোকজন। দলের একটি সূত্র জানায়, মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুল হক নির্ধারিত অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, দলের স্বার্থে সেখানে যাবেন তিনি।

বিজয়নগরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি বৈঠক হয়েছে। এতে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তানভীর ভুইয়াসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, হরতালের দিন পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবকিছুই করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, হরতালের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ। তিনি জানান, ২ প্লাটুন বিজিবি, ৫ সেকশন র‌্যাব, এপিবিএন সদস্যসহ বাড়তি দেড় শ পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

মন্ত্রী ছায়েদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে নবনিমির্তি পশুসম্পদ কার্যালয় (ইউএলডিসি) ভবন রবিবার সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন বলে কর্মসূচি রয়েছে। তার আগমন ঠেকাতে আগামীকাল রবিবার উপজেলা আওয়ামী লীগ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে। এর আগে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সম্মেলন করে মন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন।

বৃহস্পতিবার রাতে ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সুধি সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বিজয়নগরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। হরতালের প্রসঙ্গ টেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, ‘ওনার বোঝা উচিত আমি পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কোনো কাজ করছি না। মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য বিল্ডিং (প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল) উদ্বোধন করব।’

মন্ত্রীর সফরের দুই দিন আগে গতকাল শুক্রবার বিজয়নগরে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায় তারা। অফিস কক্ষ তছনছ করে। পরে অফিস থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নামফলক গুঁড়িয়ে দেয়। শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিস সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুরে শতাধিক লোকের একটি দল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে জোর করে ঢুুকে পড়ে। তারা প্রাণিসম্পদ অফিসে প্রবেশ করে অশ্রাব্য ভাষায় তাকে গালিগালাজ করে। তারা ওই কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। একপর্যায়ে মাথায় আঘাত করে।
এ ঘটনার পর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. লুৎফুর রহমান অফিস থেকে চলে যান। তিনি তার ওপর হামলার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে থানায় মামলা হবে।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আরশাদ জানান, হামলাকারীরা কয়েকটা ফুলের টব ভেঙে ফেলেছে। মন্ত্রী মহোদয়ের উদ্বোধনের ফলকটিও তারা ভেঙেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে ওই ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি বলে জানান তিনি।

স্থানীয় লোকজন বিজয়নগরে হরতাল আহ্বানের ঘটনাকে নাসিরনগর-কা-ের জের বলছেন। গত বছরের ৩০ অক্টোবর ফেসবুকে পবিত্র কাবা শরিফের ছবি বিকৃত করে পোস্ট দেয়ার এক ঘটনায় নাসিরনগরে হিন্দু বাড়িঘর ও ১৫ মন্দির ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। সে সময় প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক ও উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসে। নাসিরনগরে এক সুধী সমাবেশে মন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘নাসিরনগরকে বিশ্বসংবাদে পরিণত করার নায়ক মোক্তাদির চৌধুরী। হিন্দুপল্লীতে হামলার দায় মোক্তাদির চৌধুরীকেই নিতে হবে।’

তাদের দুজনের দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে এল বিজয়নগরে। আগামীকাল রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন নবনির্মিত পশুসম্পদ কার্যালয় ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাখা হয়নি স্থানীয় সাংসদ উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীকে। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে হরতালের কর্মসূচি দিয়েছেন তার অনুসারীরা। তারা মন্ত্রী ছায়েদুলকে বিজয়নগরে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর