ঢাকা ০১:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিটিং সার্ভিস বন্ধ ভাড়া নিয়ে হট্টগোল, ভোগান্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২১:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৭
  • ৩৬৮ বার

তবে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ রয়েই গেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে ভোগান্তি।

সকাল থেকে বেশিরভাগ রুটেই যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে। ফলে দীর্ঘক্ষণ যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পরিবহন কর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা হচ্ছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, কিলোমিটার নয়, নিজস্ব চেক পয়েন্ট হিসাব করে আর মালিক সমিতির চার্ট দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ, ক্ষেত্রবিশেষে তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে পরিবহণগুলো।

সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে বাসে যাত্রীদের সঙ্গে স্টাফদের বাকবিতণ্ডা দেখা গেছে। এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।

সদরঘাট থেকে গাজীপুরগামী সু-প্রভাত পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৭ টাকা। অথচ মিনিবাসগুলেতে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৫ টাকা।

এছাড়া আগে সদরঘাট থেকে রামপুরায় এই বাসের ভাড়া ১০ টাকা ছিল, সেখানে আজ থেকে তারা ১৫ টাকা করে নিচ্ছে। এভাবে দূরত্ব ভাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি হারে ভাড়া আদায় করছে সু-প্রভাত সার্ভিসের বাসগুলো।

প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিজীবী আদনান নোমান জানান, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা হলেও ভাড়া তো নামমাত্র কমলো। এগুলো দেখবে কে? মাস শেষে পরিবহন ভাড়া খাতে আমাদের পকেট থেকে বাড়তি ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা চলে যায়।

একই অবস্থা পোস্তগোলা থেকে ছেড়ে আসা ছালছাবিল ও রাইদা পরিবহনে। সিটিং সার্ভিস বন্ধ করলেও সিটিংয়ে ভাড়া যেখানে তারা সর্বনিম্ন ১০/১৫ টাকা নিতো। সেখানে এখন ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৮/১২ টাকা।

একই অবস্থা সাইনবোর্ড থেকে ছেড়ে আসা অনাবিল সার্ভিসের।

যাত্রী দোকান কর্মচারী রফিকুলের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান বাস স্টাফ আনিস। রফিকুল জানান, সিটিং সার্ভিস বন্ধ। তারপরও তারা ভাড়া বেশি আদায় করছে।

রফিকুলের অভিযোগ, ভাড়া বেশি আদায়ের জন্য ক’দিন সিটিং সার্ভিস করে এরপর লোকাল চালিয়ে সেই সিটিংয়ের ভাড়াই আদায় করে তারা।

গাবতলী থেকে নূর-ই মক্কা, অছিম, রবরব, আনছার ক্যাম্প থেকে ছেড়ে আসা জাবালে নূর পরিবহনগুলো সিটিং সার্ভিস বন্ধ করলেও ভাড়া প্রায় আগের মতোই রেখেছে। সিটিং সার্ভিসের তুলনায় এই পরিবহনগুলো মাত্র ২০/৩০ ভাগ ভাড়া কমিয়েছে।

এ নিয়ে যাত্রী আনিকা ফেরদৌসের অভিযোগ, সরকার সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে মনিটরিং করা উচিৎ। যাত্রীরা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি থাকতে পারে না।

এদিকে যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে আসা মনজিল পরিবহন, বলাকা, মতিঝিল-গুলিস্তান থেকে শতাব্দী, আজমেরী এবং সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রভাতী বনশ্রী, গাজীপুর পরিবহন সার্ভিসগুলোও তাদের সিটিং সার্ভিস বন্ধ করেছে। তবে তারা সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা থেকে ১০/১৫ টাকা করে নিচ্ছে।

এছাড়া সরকার নির্ধারিত কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা হিসেবে ভাড়া না আদায় করে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া বেশি নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শতাব্দী পরিবহনের এক স্টাফ জানান, মালিক সমিতি বিআরটিসি থেকে ভাড়ার তালিকা এনে আমাদের দিয়েছেন, আমরা সেভাবেই কাজ করছি। এটিকে আপনারা বেশি ভাড়া বললে বেশিই নিচ্ছি, আমাদের কিছু বলার নেই।

এদিকে সকাল ৯টার দিকে তেজগাঁও সাত রাস্তার মোড়ে অভিযানে এসে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধে রাজধানীতে বিআরটিএ’র অভিযান শুরু হয়েছে।

যাত্রী হয়রানি ও তাদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবহনখাতে শৃংখলা না ফেরা পর্যন্ত বিআরটিএ’ র এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেই। অননুমোদিত যানবাহনের বিরুদ্ধে তারা অভিযান শুরু করছেন।

তিনি বলেন, শুধু সিটিং সার্ভিস বন্ধ নয়, যাত্রী হয়রানি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রোববার রাজধানীর পাঁচটি স্থানে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান।

রাজধানীর আসাদগেট, বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডে সড়কের পশ্চিম পাশে, রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সামনে, আগারগাঁওয়ে (আইডিবি ভবন), যাত্রাবাড়ী চাইপাই রেস্টুরেন্টের সামনে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। সপ্তাহে তিন দিন এই অভিযান চলবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সিটিং সার্ভিস বন্ধ ভাড়া নিয়ে হট্টগোল, ভোগান্তি

আপডেট টাইম : ১১:২১:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

তবে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ রয়েই গেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে ভোগান্তি।

সকাল থেকে বেশিরভাগ রুটেই যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে। ফলে দীর্ঘক্ষণ যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পরিবহন কর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা হচ্ছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, কিলোমিটার নয়, নিজস্ব চেক পয়েন্ট হিসাব করে আর মালিক সমিতির চার্ট দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ, ক্ষেত্রবিশেষে তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে পরিবহণগুলো।

সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে বাসে যাত্রীদের সঙ্গে স্টাফদের বাকবিতণ্ডা দেখা গেছে। এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।

সদরঘাট থেকে গাজীপুরগামী সু-প্রভাত পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৭ টাকা। অথচ মিনিবাসগুলেতে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৫ টাকা।

এছাড়া আগে সদরঘাট থেকে রামপুরায় এই বাসের ভাড়া ১০ টাকা ছিল, সেখানে আজ থেকে তারা ১৫ টাকা করে নিচ্ছে। এভাবে দূরত্ব ভাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি হারে ভাড়া আদায় করছে সু-প্রভাত সার্ভিসের বাসগুলো।

প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিজীবী আদনান নোমান জানান, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা হলেও ভাড়া তো নামমাত্র কমলো। এগুলো দেখবে কে? মাস শেষে পরিবহন ভাড়া খাতে আমাদের পকেট থেকে বাড়তি ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা চলে যায়।

একই অবস্থা পোস্তগোলা থেকে ছেড়ে আসা ছালছাবিল ও রাইদা পরিবহনে। সিটিং সার্ভিস বন্ধ করলেও সিটিংয়ে ভাড়া যেখানে তারা সর্বনিম্ন ১০/১৫ টাকা নিতো। সেখানে এখন ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৮/১২ টাকা।

একই অবস্থা সাইনবোর্ড থেকে ছেড়ে আসা অনাবিল সার্ভিসের।

যাত্রী দোকান কর্মচারী রফিকুলের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান বাস স্টাফ আনিস। রফিকুল জানান, সিটিং সার্ভিস বন্ধ। তারপরও তারা ভাড়া বেশি আদায় করছে।

রফিকুলের অভিযোগ, ভাড়া বেশি আদায়ের জন্য ক’দিন সিটিং সার্ভিস করে এরপর লোকাল চালিয়ে সেই সিটিংয়ের ভাড়াই আদায় করে তারা।

গাবতলী থেকে নূর-ই মক্কা, অছিম, রবরব, আনছার ক্যাম্প থেকে ছেড়ে আসা জাবালে নূর পরিবহনগুলো সিটিং সার্ভিস বন্ধ করলেও ভাড়া প্রায় আগের মতোই রেখেছে। সিটিং সার্ভিসের তুলনায় এই পরিবহনগুলো মাত্র ২০/৩০ ভাগ ভাড়া কমিয়েছে।

এ নিয়ে যাত্রী আনিকা ফেরদৌসের অভিযোগ, সরকার সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে মনিটরিং করা উচিৎ। যাত্রীরা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি থাকতে পারে না।

এদিকে যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে আসা মনজিল পরিবহন, বলাকা, মতিঝিল-গুলিস্তান থেকে শতাব্দী, আজমেরী এবং সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রভাতী বনশ্রী, গাজীপুর পরিবহন সার্ভিসগুলোও তাদের সিটিং সার্ভিস বন্ধ করেছে। তবে তারা সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা থেকে ১০/১৫ টাকা করে নিচ্ছে।

এছাড়া সরকার নির্ধারিত কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা হিসেবে ভাড়া না আদায় করে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া বেশি নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শতাব্দী পরিবহনের এক স্টাফ জানান, মালিক সমিতি বিআরটিসি থেকে ভাড়ার তালিকা এনে আমাদের দিয়েছেন, আমরা সেভাবেই কাজ করছি। এটিকে আপনারা বেশি ভাড়া বললে বেশিই নিচ্ছি, আমাদের কিছু বলার নেই।

এদিকে সকাল ৯টার দিকে তেজগাঁও সাত রাস্তার মোড়ে অভিযানে এসে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধে রাজধানীতে বিআরটিএ’র অভিযান শুরু হয়েছে।

যাত্রী হয়রানি ও তাদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবহনখাতে শৃংখলা না ফেরা পর্যন্ত বিআরটিএ’ র এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেই। অননুমোদিত যানবাহনের বিরুদ্ধে তারা অভিযান শুরু করছেন।

তিনি বলেন, শুধু সিটিং সার্ভিস বন্ধ নয়, যাত্রী হয়রানি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রোববার রাজধানীর পাঁচটি স্থানে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান।

রাজধানীর আসাদগেট, বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডে সড়কের পশ্চিম পাশে, রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সামনে, আগারগাঁওয়ে (আইডিবি ভবন), যাত্রাবাড়ী চাইপাই রেস্টুরেন্টের সামনে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। সপ্তাহে তিন দিন এই অভিযান চলবে।