কাজ নেই পুলিশের ১১ শীর্ষ কর্মকর্তার

পুুলিশ সদরদপ্তরের ১১ জন শীর্ষ কর্মকর্তা দীর্ঘ সময় ধরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি হয়ে আছেন। এদের মধ্যে এদের মধ্যে দুইজন উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এবং নয়জন পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার কর্মকর্তা। অথচ তাদের থেকেও কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে ওএসডি কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। নিকটজন ও সহকর্মীদের কাছে প্রকাশ করলেও গণমাধ্যমের কাছে এ বিষয়ে তারা বক্তব্য দিতে অস্বস্তিবোধ করছেন।

ওএসডি কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন সাড়ে আট বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো দায়িত্ব পাচ্ছেন না। একজন আবার প্রায় আট বছর ধরেই কার্যত বসে আছেন।

প্রশাসনে প্রায়ই কর্মকর্তাদেরকে শাস্তি হিসেবে ওএসডি করে রাখার ঘটনা ঘটে। তবে কখনও কখনও এটা শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। আগের তুলনায় ওএসডির পরিমাণ কমলেও এই প্রবণতা শেষ হচ্ছে না।

পুুলিশের সাবেক আইজি (মহাপরিদর্শক) নুরুল হুদা বলেন, চাকরিতে রেখে অযথা বসিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না। তিনি বলেন, ‘এদেরকে অনেক ধরনের কাজ করানো যেতে পারে। বসিয়ে না গেলে গবেষণা বা আইন কানুন বিষয়ে সুপারিশ তৈরির কাজও দেয়া যেতে পারতো। সেটা না করে বসিয়ে রেখে রাষ্ট্রের টাকা অপচয়ের কোনো মানে হয় না।’

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শুধু পুলিশ কেন, প্রশাসনের সবক্ষেত্রেই ওএসডির সংস্কৃতি চলে আসছে। এতে যেমন রাষ্ট্রের অর্থের অপচয়, তেমনি ব্যক্তির কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা নষ্ট হয়ে যায়। এটা রাজনৈতিক ব্যাপার, এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসা দরকার।’

তবে পুলিশ সদর দপ্তরের সংস্থাপন শাখার অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক হাবিবুর রহমানের দাবি, ‘পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ওএসডি থাকার কারণে কার্যক্রমে কোন ধরনের অসুবিধা হচ্ছে না।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এই কর্মকর্তাদেরকে কোন নতুন দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না তা তার জানা নেই।

সম্প্রতি পুলিশ সদরদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদে কর্মরত সৈয়দ শাহ জামান রাজকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তিনি ২০১৩ সাল থেকেই ওএসডি ছিলেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, পুলিশের উপমহাপরিদর্শক বাহারুল আলম লিয়েন শেষে ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেন। এক বছর পার হয়ে গেলেও তাকে তাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

পুলিশের উপমহাপরিদর্শক মেজবাহুনন্নবী এনডিসি কোর্স শেষে ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেন।

পুলিশের অপরাধ বিভাগের সাবেক বিশেষ সুপার মাসুদ মিয়া অনেক দিন ধরেই পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্তি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

পুলিশ সুপার আলী আকবর খান ২০০৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জের কার্যালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট রংপুর ডিআইজি রেঞ্জের কার্যালয়ে সংযুক্ত করে রেখেছেন। তিনি এখন সাময়িকভাবে বরখাস্ত।

পুলিশ সুপার কাজী মো. ফজলুল করিম ২০০৯ সালের ১৪ মার্চ থেকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন।

সিআইডি পুলিশের বিশেষ সুপার মো. মুনির হোসেন ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত রয়েছেন।

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের পূর্ব বিভাগের সুপার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ২০০৮ সালের ১৬ জুন থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত রয়েছেন।

সিআইডি পুলিশের বিশেষ সুপার মো. মঞ্জুর মোর্শেদ আলম ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল থেকে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে ২০১৪ সালের এপ্রিলে। এতদিনেও তাকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

ঢাকা নৌ পুলিশের সুপার মো. শাহরিয়ার ২০১৬ সালের ১৩ জুন থেকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন।

সিআইডি পুলিশের বিশেষ সুপার নিহার রঞ্জন হালদার ২০১৬ সালের ১৩ জুন থেকে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন । ঢাকাটাইমস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর