চ্যালেঞ্জ দলীয় সরকারের অধীনে

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। এ অবস্থায় সৎ, সাহসী ও চাপে মাথা নত করবেন না— এমন ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিশিষ্টজনরা। তা ছাড়া যাচাই-বাছাই শেষে সার্চ কমিটি নতুন যাদের নাম সুপারিশ করবে রাষ্ট্রপতি তার বাইরে যাবেন না বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সঙ্গে চার বিশিষ্টজনের মতবিনিময় বেলা ১১টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত চলে। কমিটির আমন্ত্রণে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ আলোচনায় অংশ নেন। আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির সবাই এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নাম থেকে ২০ জনের যে সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার জন?্য আজ বিকালে আবার বসবেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। এ ছাড়া কমিটি যে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে সেই প্রাথমিক তালিকায় আরও সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে বলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ।

চার বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া : দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করাটাই নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সার্চ কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ের পর চার বিশিষ্ট ব্যক্তি নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। এ সময় ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, যোগ্যতার মাপকাঠি অনুযায়ী কাউকে বাছাই করে দায়িত্ব দেওয়ার পর তিনি যদি হতাশ করেন, সেজন্য সার্চ কমিটিকে দোষারোপ করা যায় না। বিগত কিছু জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখানে মনে রাখতে হবে, ১৯৯৬ সালে আবু হেনা একটি প্রশংসনীয় নির্বাচন করেছেন। পরে ২০০১ সালে এম এ সাঈদ ও ২০০৮ সালে এ টি এম শামসুল হুদাও দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন করেছেন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে যিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন তার সঙ্গে বিগতদের একটা বিশাল তফাত আছে। বিগত নির্বাচন কমিশনগুলো নির্বাচন করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ওই সরকারগুলো নির্বাচন কমিশনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। নির্বাচন কমিশনার ছিলেন একেবারে চাপমুক্ত। আর আগামী নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের অধীনে। ফলে এ নির্বাচন কমিশনের একটা চ্যালেঞ্জ থাকবে। যেটা আগের কমিশনের মোকাবিলা করতে হয়নি। এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘আমরা ধরেই নিচ্ছি সার্চ কমিটি যে নামের প্রস্তাব করবে তার বাইরে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি যাবেন না। যদি যান তখন কী হবে। এটা একটা প্রশ্ন। আমরা প্রত্যাশা করছি এই সার্চ কমিটি সফল হবে। তারা যে নাম সুপারিশ করবে, ওই নামের বাইরে কেউ সিলেক্ট হবেন না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে হবেন এটাই বড় কথা। কেননা তিনিই হলেন মুখ্য এবং তার ওপরই সবকিছু নির্ভর করবে। ’ সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান, সাহসী, চাপে মাথা নত করবেন না এমন ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ঐতিহাসিকভাবে এই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব অনেক বড়। যেহেতু আমাদের দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অধিকাংশ নির্ভর করবে আগামী সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের ওপর। ’ সার্চ কমিটির প্রস্তাবের পাশাপাশি একটা লক্ষ্য থাকা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সার্চ কমিটি নিজেদের প্রজ্ঞা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে কিছু পরামর্শ দিয়ে যাবে। আমরা আশা করব গতবারের মতো এবারও সার্চ কমিটির প্রস্তাব যেন প্রকাশ করা হয়। একজন নির্বাচন কমিশনার সৎ হবেন, যোগ্য হবেন, চাপে মাথা নত করবেন না— এসবের ভিত্তিতেই সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশনার বাছাই করবে। কিন্তু এগুলোর প্রতিটিই ব্যক্তিগত বিষয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর যদি তারা নিরাশ করেন তাহলে সে দায় সার্চ কমিটির ওপর বর্তায় না। ’ তিনি বলেন, ‘উনারা পলিটিক্যাল পার্টির কাছে নাম চেয়েছেন। সিভিল সোসাইটি আমরা কোনো নাম দিইনি। উনাদের নামের ওপর বিতর্ক করা আমার মনে হয় সমীচীন হবে না। ’ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চারজনই একমত যে, নির্বাচন কমিশনে যারা নেতৃত্ব দেবেন তাদের দলনিরপেক্ষ, বিবেকবান, প্রজ্ঞাবান, সাহসী এবং পরিশ্রমী হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনকে যদি আমরা কার্যকর ও স্বাধীন দেখতে চাই, আমাদের দরকার অত্যন্ত যোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সার্চ কমিটির কাছে এটিই আমাদের পরামর্শ। ’ এক প্রশ্নের জবাবে আবু হেনা জানান, পুনরায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব পেলে তিনি তা নাকচ করবেন। সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘আমি দুটি মতামত দিয়েছি, একটি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যার সামান্যতম বিরোধ আছে তাকে প্রধান নির্বাচন করা যাবে না। আরেকটা পরামর্শ হলো, আমরা যে পরামর্শগুলো দিলাম তা যেন লিপিবদ্ধ থাকে এবং তা যেন নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর