বিএনপির ছয় দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগ যা বলল

আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে ছয়টি শর্তের কথা বলেছেন সেগুলোর বিষয়ে সরকারের কিছু করণীয় নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা। তারা এসব শর্ত না দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে তিন বছর পূর্তির দিন বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে সব দলই। এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এ সময় ছয়টি শর্তের কথা বলেন তিনি।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তাদের এই দাবি এখনও পূরণ হয়নি। এই অবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান কী হবে এ নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা ফারুক খান মনে করেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের শর্তের কারণে বিএনপির নির্বাচনে না আসার সুযোগ নেই। কারণ, এই আইন অনুযায়ী পরপর দুই বার কোনো দল নির্বাচনে না এলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে বিএনপি তুলে ধরছে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রসঙ্গ। মির্জা ফখরুল তার শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনেও এই বিষয়টিই সবার আগে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তিনি আরও পাঁচটি প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এগুলো হলো ‘১. বিরোধী দল নির্মূল করার যে প্রক্রিয়া চলছে তা বন্ধ করতে হবে। ২. সকল রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তি দিতে হবে। ৩.মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৪. সভা, মিছিল, সমাবেশ করার সমান সুযোগ দিতে হবে। ৫. গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিতে হবে।’

বিএনপির এই ছয় শর্তের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া জানতে দলের অন্যতম মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিটি শর্তের বিষয়েই আলাদা বক্তব্য তুলে ধরেন। বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন তো রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরাও একইভাবে কথা বলেছি। আমরা বলেছি রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেবো। তার প্রতি সম্মান রেখে বিএনপিকেও একই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বিরোধী দলকে নির্মূলের প্রসঙ্গ তুললেও এমন কোনো ঘটনা ঘটছে না বলে দাবি করেন হানিফ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলকে কেন নির্মুল করতে যাবো। আওয়ামী লীগ এই রাজনীতি করে না। তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও নাশকতা করে নিজেরাই বিপদে পড়েছে। এখন নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে কাল্পনিক অভিযোগ তুলছে।’

‘রাজনৈতিক নেতাদের’কে মুক্তির দাবির প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, ‘যারা আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার কি বিচার পাবে না? বিএনপিকেই প্রমাণ করতে হবে তারা এসব অপকর্ম করেনি।’

ফখরুলের তোলা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবির বিষয়ে হানিফ বলেন, ‘কোন মামলাটি মিথ্যা সেটা তো প্রমাণের বিষয়। তারা হয়ত খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার কথা বলছে। কিন্তু আমরা তো এই মামলা করিনি। এগুলো দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আইনের মাধ্যমে আদালতেই তারা প্রমাণ করুক এগুলো মিথ্যা মামলা।’

সব দলের সভা-সমাবেশের অধিকারে সরকার কোনো বাধা দিচ্ছে না বলেও দাবি করেন হানিফ। তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই সব রাজনৈতিক দল সভা সমাবেশ করুক। কিন্তু অতীতে সমাবেশের নামে তারা (বিএনপি) নৈরাজ্য করেছে। এ কারণেই হয়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে সম্প্রতি সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। এটা আমাদের বিষয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিএনপিকে প্রমাণ করতে হবে তারা সহিংসতা করবে না।’

মির্জা ফখরুল গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে দাবি করেছেন সেটি নিরর্থক বলে মনে করেন হানিফ। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম তো স্বাধীনই। তারা স্বাধীনভাবেই সব কিছু লিখছে, প্রকাশ করছে। গণমাধ্যমে কি সরকারের সমালোচনা হচ্ছে না? মির্জা ফখরুলদের বক্তব্য প্রকাশ হচ্ছে না? বরং কখনও কখনও ভুল বা মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে সরকারের সম্মানহানিরও চেষ্টা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে এটা কীভাবে হয়?’।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শর্ত মেনে নয়, নির্বাচন হবে সংবিধান মেনে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা দেইনি। তারা সহিংসতা করেছে এর ফলে মামলা হয়েছে।’

ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, ‘আমরা আশা করবো আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করবে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর