ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের ওয়েটিং রুমে বসেছিলেন মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা ও একজন তরুণী। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তারা। বসে থাকা ভদ্রলোক কিছুক্ষণ পর পর দেখা করার বিষয়ে পরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার (পিএ) কাছে জানতে চাইছিলেন। কিন্তু পিএ কখনও হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা বাইরের মেহমানদের সঙ্গে পরিচালক মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে অপেক্ষা করতে বলছিলেন।
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর বোরকা পরিহিত মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা বলছিলেন, ‘বিদেশের মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করাটা কি আমার মেয়ের অপরাধ? গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ঘুরে হয়রান হচ্ছি। ইন্টার্নি করার অনুমতি কেউ দিচ্ছে না। বাবা দয়া করে পরিচালকের সঙ্গে একটু দেখা করে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন।’
কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার মতলব থানার হরিণা নিশ্চিন্তপুরের বাসিন্দা সুলতানা আহমেদ ও খাদিজা বেগম দম্পত্তির মেয়ে সাইফুন্নাহার ২০১০-২০১১ সালে ইউক্রেনের একটি মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করতে যান। ছয় বছর পর ২০১৬ সালের জুনে সেখান থেকে এমডি কোর্স সম্পন্ন করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিয়মানুসারে কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিদেশের মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে দেশে ফিরলে বাধ্যতামূলকভাবে বিএমডিসির অধীনে যোগ্যতা নির্ধারণী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। যোগ্যতা নির্ধারণী পরীক্ষায় পাস না করলে দেশের কোথাও প্রাকটিস করার সুযোগ নেই।
সাইফুন্নাহার জানান, বিএমডিসির নিয়ম মেনে ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর যোগ্যতা নির্ধারণী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। এমনকি দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭তম হয়েছেন। কিন্তু পাস করার পর দেশের সরকারি কোনো মেডিকেল কলেজ থেকে এক বছরের ইন্টার্নি কোর্স করার সুযোগ পেতে বেশ কিছুদিন ধরে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
বিএমডিসি থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী যে মেডিকেল কলেজ থেকে ইন্টার্নি করতে চান সে মেডিকেলে আবেদন করতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরে জমা দিয়ে ইন্টার্নি করতে হবে।
সাইফুন্নাহার আরও জানান, ইতোমধ্যে তিনি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী, স্যার সলিমুল্লাহ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে যোগাযোগ করেছেন, তবে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি। পরিচিতদের মাধ্যমে ঢাকার বাইরেও সরকারি মেডিকেল কলেজে যোগাযোগ করেছেন। ঢাকার বাইরের একাধিক মেডিকেল কলেজে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দাবি করা হয়।
সাইফুন্নাহারের মা খোদেজা বেগম সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, আমার মেয়ে বিদেশের মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছে এটাই কি তার অপরাধ? তা না হলে তাকে কেন এক কলেজ থেকে আরেক কলেজে ছুটে বেড়াতে হবে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালাও নেই।
পরে অপেক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে সেখান থেকে চলে যান এবং এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে লেখার অনুরোধও করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া বলেন, ‘বিদেশে মেডিকেল কলেজ থেকে যারা পাস করেন তাদেরেকে বিএমডিসির অধীনে যোগ্যতা নির্ধারনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাদেরকে প্রভিশনাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সার্টিফিকেট সংগ্রহের পর শিক্ষার্থীকে নিজ উদ্যোগে সরকারি কিংবা বেসরকারি কলেজে আবেদন সাপেক্ষে ইন্টার্নি করতে হয়। তবে এ ব্যাপারে কোন নীতিমালা নেই। এছাড়া কোনো কলেজ তাদের ইন্টার্নি করতে দিতে বাধ্যও নয়।’