ঢাকা ১১:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিএসসি পাস করলেন ৬৩ বছর বয়সী বাসিরন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:২০:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৩১৮ বার

জেলার গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া গ্রামে ৬৩ বছর বয়সে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছেন বাসিরন খাতুন।তিনি একই গ্রামের মৃত রহিল উদ্দিনের স্ত্রী।৩৫ বছর আগে স্বামীহারা হয়েছেন।এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। একমাত্র ছেলে মহির উদ্দিনের সঙ্গে থাকেন তিনি।ছেলে-মেয়েদের সন্তানরাও বড় হয়েছে।তারা এখন বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। লেখাপড়ার প্রচণ্ড আগ্রহ থেকে তিনি নতুন করে আবার লেখাপড়া শুরু করেন।বাড়ি থেকে প্রতিদিন এক কিলোমিটার মেঠোপথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সারাদেশের ন্যায় তার স্কুল হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করলে তিনি জিপিএ-৩ পয়েন্ট নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। তার সঙ্গে পরীক্ষা অংশ নেওয়া এ স্কুলের আরও ছয়জন এবছর পাশ করে স্কুলটি শতভাগ পাশের রেকর্ড করেছে।

বাসিরনএদিকে ৬৩ বছরে পিএসসি পরীক্ষায় পাশ করে তিনি সারা দেশের বয়স্ক মানুষের জন্য উদাহরণ হয়ে গেছেন বাসিরন। তার পাশ করার খবর এলাকায় পৌঁছার পরপরই তার পরিবারের পাশিপাশি গ্রামের লোকজনের মধ্যে আনন্দর বন্য বয়ে গেছে।তার পাসের খবর শুনে গ্রামের লোকজন তাকে একনজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় করছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সকলকে মিষ্টি মুখ করানো হচ্ছে। এ খবর পেয়ে মেহেরপুরের মহিলা সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার বানুও তার বাড়িতে ছুটে যান। তিনি বাসিরনকে মিষ্টি মুখ করান ও নিজে বাসিরনের হাতে মিষ্টি খান।

পাশ করার পর বাসিরন তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমি আমার ৫ বছরের কষ্টের পুরস্কার পেলাম। এতকাল সবার পাশ করার খবর শুনে খুশি হতাম আজ নিজে পাশ করে বুঝতে পারছি পরীক্ষা পাশ করলে মানুষ কত খুশি হয়। তিনি বলেন, আমি থেমে থাকতে চাইনা এ বছর আমি৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে আরও বেশি পড়ালেখা করতে চাই।এবার আমার লক্ষ্য এসএসসি পাশ করা।এসময় তিনি তার স্কুলের ভবন তৈরিসহ স্কুলের উন্নয়নের দাবি করেন।

বাসিরনবাসিরনের স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, বাসিরন খাতুন ২০১০ সালে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য কয়েকবার এসেছিলেন। বয়স্ক মানুষ মনের বাসনায় ভর্তি হতে এসেছেন। পরে ক্লাস করবে কি না এভেবে সে বছর তাকে ভর্তি করানো হয়নি। পরবর্তীতে যখন সে আবার আসে ২০১১ সালে তাকে ভর্তি করি। ভর্তি করার পর থেকে তার আগ্রহ দেখে অবাক হয়েছি। আজ তার কারণে আমার স্কুলের মুখ উজ্জ্বল হলো। তিনি বাসিরনের আরও সফলতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুরের মহিলা সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার বানু বলেন, বাসিরন শুধু মেহেরপুরের না সে এখন বাংলাদেশের গর্ব। তার দেখাদেখি এখন অনেক বয়স্ক মানুষ পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হবেন। বাসিরন এখন সারা দেশের বয়স্ক শিক্ষার উদাহরণ হবে। বয়স্ক শিক্ষার বিস্তারে বাসিরনের অর্জন দেশের জন্যও ভালো খবর। এসময় তিনি বাসিরনের স্কুল হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন নির্মানসহ নানা উন্নয়নের আশ্বাস দেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পিএসসি পাস করলেন ৬৩ বছর বয়সী বাসিরন

আপডেট টাইম : ০১:২০:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

জেলার গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া গ্রামে ৬৩ বছর বয়সে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছেন বাসিরন খাতুন।তিনি একই গ্রামের মৃত রহিল উদ্দিনের স্ত্রী।৩৫ বছর আগে স্বামীহারা হয়েছেন।এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। একমাত্র ছেলে মহির উদ্দিনের সঙ্গে থাকেন তিনি।ছেলে-মেয়েদের সন্তানরাও বড় হয়েছে।তারা এখন বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। লেখাপড়ার প্রচণ্ড আগ্রহ থেকে তিনি নতুন করে আবার লেখাপড়া শুরু করেন।বাড়ি থেকে প্রতিদিন এক কিলোমিটার মেঠোপথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সারাদেশের ন্যায় তার স্কুল হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করলে তিনি জিপিএ-৩ পয়েন্ট নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। তার সঙ্গে পরীক্ষা অংশ নেওয়া এ স্কুলের আরও ছয়জন এবছর পাশ করে স্কুলটি শতভাগ পাশের রেকর্ড করেছে।

বাসিরনএদিকে ৬৩ বছরে পিএসসি পরীক্ষায় পাশ করে তিনি সারা দেশের বয়স্ক মানুষের জন্য উদাহরণ হয়ে গেছেন বাসিরন। তার পাশ করার খবর এলাকায় পৌঁছার পরপরই তার পরিবারের পাশিপাশি গ্রামের লোকজনের মধ্যে আনন্দর বন্য বয়ে গেছে।তার পাসের খবর শুনে গ্রামের লোকজন তাকে একনজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় করছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সকলকে মিষ্টি মুখ করানো হচ্ছে। এ খবর পেয়ে মেহেরপুরের মহিলা সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার বানুও তার বাড়িতে ছুটে যান। তিনি বাসিরনকে মিষ্টি মুখ করান ও নিজে বাসিরনের হাতে মিষ্টি খান।

পাশ করার পর বাসিরন তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমি আমার ৫ বছরের কষ্টের পুরস্কার পেলাম। এতকাল সবার পাশ করার খবর শুনে খুশি হতাম আজ নিজে পাশ করে বুঝতে পারছি পরীক্ষা পাশ করলে মানুষ কত খুশি হয়। তিনি বলেন, আমি থেমে থাকতে চাইনা এ বছর আমি৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে আরও বেশি পড়ালেখা করতে চাই।এবার আমার লক্ষ্য এসএসসি পাশ করা।এসময় তিনি তার স্কুলের ভবন তৈরিসহ স্কুলের উন্নয়নের দাবি করেন।

বাসিরনবাসিরনের স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, বাসিরন খাতুন ২০১০ সালে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য কয়েকবার এসেছিলেন। বয়স্ক মানুষ মনের বাসনায় ভর্তি হতে এসেছেন। পরে ক্লাস করবে কি না এভেবে সে বছর তাকে ভর্তি করানো হয়নি। পরবর্তীতে যখন সে আবার আসে ২০১১ সালে তাকে ভর্তি করি। ভর্তি করার পর থেকে তার আগ্রহ দেখে অবাক হয়েছি। আজ তার কারণে আমার স্কুলের মুখ উজ্জ্বল হলো। তিনি বাসিরনের আরও সফলতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুরের মহিলা সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার বানু বলেন, বাসিরন শুধু মেহেরপুরের না সে এখন বাংলাদেশের গর্ব। তার দেখাদেখি এখন অনেক বয়স্ক মানুষ পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হবেন। বাসিরন এখন সারা দেশের বয়স্ক শিক্ষার উদাহরণ হবে। বয়স্ক শিক্ষার বিস্তারে বাসিরনের অর্জন দেশের জন্যও ভালো খবর। এসময় তিনি বাসিরনের স্কুল হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন নির্মানসহ নানা উন্নয়নের আশ্বাস দেন।