ঢাকা ১০:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:১৪:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুন ২০১৫
  • ৩৩৩ বার

দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় সিলেটে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থাকে। এর কারণ চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে এ বিভাগে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

 

এছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ বিভাগে শস্যের নিবিড়তা কম। এ নিবিড়তা বৃদ্ধি করতে ‘সিলেট অঞ্চলে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় সিলেট বিভাগের ৩০ উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার যুগ্মপ্রধান মো. মনজুরুল আনোয়ার  বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেট বিভাগে শস্যের নিবিড়তা কম। এ নিবিড়তা বৃদ্ধি করতে ৭৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

 

টেকসই প্রযুক্তি অভিযোজনের মাধ্যমে কৃষিজমি কাজে লাগানোই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।

 

প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বর্তমানে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) কার্যসূচিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য একনেক সভায় এটি অনুমোদন পেতে পারে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (বিএই) হিসাব মতে, সিলেট অঞ্চলের মোট আবাদযোগ্য জমির প্রায় ২০ শতাংশই অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। সেচ সংকট, পাহাড়ি ঢল, আগাম বন্যা, প্রবাসীবহুলতা, শ্রমবিমুখতা, শ্রমিক সংকটসহ নানা কারণে এখানকার জমিগুলো পতিত পড়ে থাকে।

 

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত সেচের অভাবেই সিলেটে বিশাল অংশ জমি পতিত থাকে। এখানকার বেশির ভাগ এলাকার মাটির নিচে গ্যাস ও পাথর। তাই পানি পাওয়া যায় না। সরকারি উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা করলে অনেক জমিই চাষের আওতায় চলে আসত। এছাড়া নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকার কারণে আউশ মৌসুমে অনেক জমি অনাবাদি থাকে।

 

বিএই কর্তৃক সম্পাদিত জরিপ অনুযায়ী, সিলেট অঞ্চলে রবি মৌসুমে ১ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর, খরিফ-১ মৌসুমে ১ লাখ ৮২ হাজার এবং খরিফ-২ মৌসুমে প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকে।

 

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এসব জমি চাষাবাদের আওতায় এনে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে কৃষি বিপণন অধিদßর (ড্যাম) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।

 

প্রকল্পের পটভূমি থেকে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ৩০ উপজেলায় প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়, টেকসই কৃষি প্রযুক্তি অভিযোজনের মাধ্যমে কৃষিজমি কাজে লাগিয়ে শস্যের নিবিড়তা ও শস্য উৎপাদন ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানো।

 

এছাড়াও আরো কিছু উদ্দেশ্যে রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের। এর মধ্যে রয়েছে, দক্ষ ব্যবস্থাপনা কৌশল সম্প্রসারণের মাধ্যমে বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি ও উদ্যান ফসল চাষাবাদ করে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো; উন্নত জাত, মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার, বালাই ব্যবস্থাপনা, কৃষিভিত্তিক পরিচর্যা ও সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ফসল ব্যবধান কমানো।

 

এছাড়া প্রধান কার্যক্রম হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ২ হাজার ৪৫০ ব্যাচ কৃষক প্রশিক্ষণ, ২ হাজার ব্যাচ উপকারভোগী কৃষক প্রশিক্ষণ, ৫০০টি মাঠ দিবস, কৃষকদের জন্য ১৬০টি উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, ৪০ ব্যাচ এসএসও প্রশিক্ষণ ও চার ব্যাচ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

 

এছাড়া কমলা, মসলা, সবজি, ধান, গম, ভুট্টা, ডাল ইত্যাদি ফসলের ওপর ১৪ হাজার ১১২টি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এর বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি মেলার আয়োজন করা হবে।

 

এদিকে প্রকল্প প্রণয়নের আগে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএই কর্তৃক ২০১১ সালে পরিচালিত একটি জরিপের ভিত্তিতে অনাবাদি থাকা জমি আবাদের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সিলেটে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা

আপডেট টাইম : ০৪:১৪:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুন ২০১৫

দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় সিলেটে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থাকে। এর কারণ চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে এ বিভাগে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

 

এছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ বিভাগে শস্যের নিবিড়তা কম। এ নিবিড়তা বৃদ্ধি করতে ‘সিলেট অঞ্চলে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় সিলেট বিভাগের ৩০ উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার যুগ্মপ্রধান মো. মনজুরুল আনোয়ার  বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেট বিভাগে শস্যের নিবিড়তা কম। এ নিবিড়তা বৃদ্ধি করতে ৭৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

 

টেকসই প্রযুক্তি অভিযোজনের মাধ্যমে কৃষিজমি কাজে লাগানোই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।

 

প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বর্তমানে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) কার্যসূচিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য একনেক সভায় এটি অনুমোদন পেতে পারে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (বিএই) হিসাব মতে, সিলেট অঞ্চলের মোট আবাদযোগ্য জমির প্রায় ২০ শতাংশই অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। সেচ সংকট, পাহাড়ি ঢল, আগাম বন্যা, প্রবাসীবহুলতা, শ্রমবিমুখতা, শ্রমিক সংকটসহ নানা কারণে এখানকার জমিগুলো পতিত পড়ে থাকে।

 

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত সেচের অভাবেই সিলেটে বিশাল অংশ জমি পতিত থাকে। এখানকার বেশির ভাগ এলাকার মাটির নিচে গ্যাস ও পাথর। তাই পানি পাওয়া যায় না। সরকারি উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা করলে অনেক জমিই চাষের আওতায় চলে আসত। এছাড়া নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকার কারণে আউশ মৌসুমে অনেক জমি অনাবাদি থাকে।

 

বিএই কর্তৃক সম্পাদিত জরিপ অনুযায়ী, সিলেট অঞ্চলে রবি মৌসুমে ১ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর, খরিফ-১ মৌসুমে ১ লাখ ৮২ হাজার এবং খরিফ-২ মৌসুমে প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকে।

 

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এসব জমি চাষাবাদের আওতায় এনে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে কৃষি বিপণন অধিদßর (ড্যাম) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।

 

প্রকল্পের পটভূমি থেকে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ৩০ উপজেলায় প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়, টেকসই কৃষি প্রযুক্তি অভিযোজনের মাধ্যমে কৃষিজমি কাজে লাগিয়ে শস্যের নিবিড়তা ও শস্য উৎপাদন ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানো।

 

এছাড়াও আরো কিছু উদ্দেশ্যে রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের। এর মধ্যে রয়েছে, দক্ষ ব্যবস্থাপনা কৌশল সম্প্রসারণের মাধ্যমে বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি ও উদ্যান ফসল চাষাবাদ করে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো; উন্নত জাত, মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার, বালাই ব্যবস্থাপনা, কৃষিভিত্তিক পরিচর্যা ও সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ফসল ব্যবধান কমানো।

 

এছাড়া প্রধান কার্যক্রম হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ২ হাজার ৪৫০ ব্যাচ কৃষক প্রশিক্ষণ, ২ হাজার ব্যাচ উপকারভোগী কৃষক প্রশিক্ষণ, ৫০০টি মাঠ দিবস, কৃষকদের জন্য ১৬০টি উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, ৪০ ব্যাচ এসএসও প্রশিক্ষণ ও চার ব্যাচ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

 

এছাড়া কমলা, মসলা, সবজি, ধান, গম, ভুট্টা, ডাল ইত্যাদি ফসলের ওপর ১৪ হাজার ১১২টি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এর বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি মেলার আয়োজন করা হবে।

 

এদিকে প্রকল্প প্রণয়নের আগে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএই কর্তৃক ২০১১ সালে পরিচালিত একটি জরিপের ভিত্তিতে অনাবাদি থাকা জমি আবাদের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।