ঢাকা ০৩:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘লাশের শহর’ ছাড়ছে নিরুপায় বাসিন্দারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • ১৩ বার

গাজার পর এবার মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশার। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাশ। শিশু, বয়স্ক মানুষ ও নারীদেরও নির্বিচারে হত্যা করেছে সুদানের আধা সামরিক বাহিনী (আরএসএফ)। ২৬ অক্টোবর শহরটি দখল করার পর থেকে নৃশংসতার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে তারা। অনাহার, আতঙ্কে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে নিরুপায় বাসিন্দারা। হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন মাইলের পর মাইল। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, শহরটি দখলের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেছেন। পালানোর পর লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে ফেরা মানুষরা। আলজাজিরা, বিবিসি।

এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদান সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভয়াবহ অনাহার, গোলাবর্ষণ ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ থাকা এই শহরটি দখল করে আরএসএফ বাহিনী। এরপর থেকে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা চালিয়েছে ওই বাহিনী। আরএসএফের হামলায় এখন পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে নারী নির্যাতনের মতো নৃশংস ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে। আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, এশহর থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তার সঙ্গে থাকা সব তরুণদের হত্যা করা হয় বলে জানান তিনি। ফাতিমা আবদুল রহিম তার নাতি-নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছান তারা। অন্য একজন ২৬ বছর বয়সী নারী জানান, তার স্বামী সন্তানদের বাঁচাতে মুক্তিপণ দেন। কিন্তু পরে তার সামনেই তাকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে, তাহানি হাসান নামের এক নারী বলেন, ‘হঠাৎ করেই তারা হাজির হয়। আরএসএফের পোশাকে তিন তরুণ এসে আকাশে গুলি ছুড়ে বলে ‘থামো’। এরপর তারা আমাদের বেধড়ক মারধর করে এবং পোশাক ছুড়ে ফেলে দেয়। আমি নারী হয়েও তল্লাশির শিকার হই।’ একজন বেঁচে থাকা ব্যক্তি বলেন, আরএসএফের সেনারা বন্দিদের গাড়িচাপা দিয়েও হত্যা করেছে।

এছাড়াও, আরএসএফ শহরের চারপাশে এমনভাবে পরিখা খনন করেছে যাতে কেউ পালাতে না পারে। প্রসঙ্গত, ২৬ অক্টোবর উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহরটি সুদানি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখলে নেয় আরএসএফ। শহর দখলের পরপরই বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ধর্ষণ, মুক্তিপণ আদায় ও গণহত্যার মতো ভয়াবহ নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়। হাজারো মানুষ এখনো নিখোঁজ, আর যারা পালাতে পেরেছেন, তারা মানবিক সাহায্যের আশায় আশ্রয় নিয়েছেন তাবিলা এলাকায়। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঘটনাটিকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

‘লাশের শহর’ ছাড়ছে নিরুপায় বাসিন্দারা

আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

গাজার পর এবার মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশার। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাশ। শিশু, বয়স্ক মানুষ ও নারীদেরও নির্বিচারে হত্যা করেছে সুদানের আধা সামরিক বাহিনী (আরএসএফ)। ২৬ অক্টোবর শহরটি দখল করার পর থেকে নৃশংসতার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে তারা। অনাহার, আতঙ্কে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে নিরুপায় বাসিন্দারা। হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন মাইলের পর মাইল। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, শহরটি দখলের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেছেন। পালানোর পর লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে ফেরা মানুষরা। আলজাজিরা, বিবিসি।

এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদান সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভয়াবহ অনাহার, গোলাবর্ষণ ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ থাকা এই শহরটি দখল করে আরএসএফ বাহিনী। এরপর থেকে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা চালিয়েছে ওই বাহিনী। আরএসএফের হামলায় এখন পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে নারী নির্যাতনের মতো নৃশংস ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে। আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, এশহর থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তার সঙ্গে থাকা সব তরুণদের হত্যা করা হয় বলে জানান তিনি। ফাতিমা আবদুল রহিম তার নাতি-নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছান তারা। অন্য একজন ২৬ বছর বয়সী নারী জানান, তার স্বামী সন্তানদের বাঁচাতে মুক্তিপণ দেন। কিন্তু পরে তার সামনেই তাকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে, তাহানি হাসান নামের এক নারী বলেন, ‘হঠাৎ করেই তারা হাজির হয়। আরএসএফের পোশাকে তিন তরুণ এসে আকাশে গুলি ছুড়ে বলে ‘থামো’। এরপর তারা আমাদের বেধড়ক মারধর করে এবং পোশাক ছুড়ে ফেলে দেয়। আমি নারী হয়েও তল্লাশির শিকার হই।’ একজন বেঁচে থাকা ব্যক্তি বলেন, আরএসএফের সেনারা বন্দিদের গাড়িচাপা দিয়েও হত্যা করেছে।

এছাড়াও, আরএসএফ শহরের চারপাশে এমনভাবে পরিখা খনন করেছে যাতে কেউ পালাতে না পারে। প্রসঙ্গত, ২৬ অক্টোবর উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহরটি সুদানি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখলে নেয় আরএসএফ। শহর দখলের পরপরই বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ধর্ষণ, মুক্তিপণ আদায় ও গণহত্যার মতো ভয়াবহ নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়। হাজারো মানুষ এখনো নিখোঁজ, আর যারা পালাতে পেরেছেন, তারা মানবিক সাহায্যের আশায় আশ্রয় নিয়েছেন তাবিলা এলাকায়। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঘটনাটিকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।