দিনক্ষণ চূড়ান্ত। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার পূর্বঘোষিত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজনে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রস্তুতি চলছে। ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। গত মঙ্গলবার রাতে সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু স্বাক্ষর নিয়ে হঠাৎ অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া নিয়ে শেষ মুহূর্তে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার বিষয়ে একমত হলেও ভোটের দিন ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর আছে মতভিন্নতা। কোনো কোনো দল সনদে সই করার আগে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে নিশ্চয়তা চায়। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘জরুরি বৈঠক’ আয়োজন করতে হয়। ‘চূড়ান্ত সনদে’ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সেভাবেই সনদে স্বাক্ষর হওয়ার কথা। হঠাৎ এই বৈঠক নিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়। বৈঠকে জুলাই সনদ নিয়ে দলগুলোর মধ্যেকার মতবিরোধ কি নিরসন হচ্ছে, নাকি নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসছে তা নিয়ে বেশ আগ্রহ রয়েছে দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে। প্রশ্ন হচ্ছে, দীর্ঘ দিনের পর দিন আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ চূড়ান্তের পর ঘোষণার আগে হঠাৎ কিছু রাজনৈতিক দল বেঁকে বসল কেন? জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলো কেন? কেউ কেউ বলছেন, এটা মূলত নির্বাচন পেছানোর চেষ্টার পরিকল্পিত পাঁয়তারা? জনসমর্থনহীন কয়েকটি ডান ও বাম দলের নেতারা সনদে স্বাক্ষর না করার কথা জানালেও যথারীতি জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরিত হবে।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, জুলাই সনদ সই হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যাবে না। এটি মস্ত বড় একটি অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু আরো বহু অধ্যায়ের সূত্রপাত শুরু করবে। কাজেই সেভাবে আমরা এগোবো, যাতে এটি কোথাও হারিয়ে না যায়। পাঠ্যবইসহ নান জায়গায় এটিকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করতে হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবেই। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। তার জন্য যা যা করতে হয়, সাধ্য অনুযায়ী আমরা সব কিছু করব। এর সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে সবাই মিলে জাতীয় সনদ তৈরি করেছেন। সরকারের দায়িত্ব হলো উৎসবমুখর নির্বাচন করে দেয়া।
সূত্র জানায়, জুলাই সনদ হাতে পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন এনসিপি নেতারা। সেখানে দলটির পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান তুলে ধরা হয়। ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে সংস্কার-প্রক্রিয়া আগানো না হলে এনসিপি সনদে সই করবে না বলে ওই বৈঠকে জানানো হয়। জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের কিছু ছাত্রের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত এনসিপি বলছে, তারা মনে করেÑ এর আগে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় তারা ছাড় দিয়েছে। এবার আর ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে নতুন করে পুরো আলোচনা শুরু করার পক্ষে। অন্যদিকে, পাঁচ দফা দাবির আন্দোলনরত জামায়াত চূড়ান্ত করা জুলাই সনদে বাস্তবায়নের পন্থা উল্লেখ না থাকায় এই সনদে স্বাক্ষর করবে কি-না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার সনদের চূড়ান্ত কপিটা পেয়েছে। যতটুকুতে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে, সেগুলো সনদে উল্লেখ থাকলে স্বাক্ষর করবেন তবে সনদ নিয়ে নানামুখী অপতৎপরতা আছে।
জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনসহ আরো পাঁচটি ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দলও স্বাক্ষর করবে নাÑ এমন প্রচারণা রয়েছে। এ ছাড়া সনদে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) থাকা বিষয়গুলো উল্লেখ থাকায় স্বাক্ষর করবে না বাংলাদেশ জাসদ, সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মার্ক্সবাদী।
জুলাই সনদের স্বাক্ষর করা নিয়ে কিছু দলের আপত্তির মুখে গতকাল বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি (রব), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না জানিয়ে দেন। অতপর জুলাই সদনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। বৈঠকের পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। যেকোনো উপায়েই হোক ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলেও পরবর্তীতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদেরকেই এর আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি জাতীয় সংসদের ওপর নির্ভর করবে। আমরা জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করব, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যেগুলো রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, সব প্রস্তাবে যদি সবাই একমত হতো, তাহলে আলোচনার প্রয়োজন পড়ত না। আমরা আশা করি, ১৭ অক্টোবর জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে এবং সেটি জাতির সামনে প্রকাশ করা হবে। পরবর্তীতে ঐকমত্য কমিশন সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রস্তাব রাখবে।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা জুলাই সনদের যে খসড়া আমাদের কাছে পেয়েছি, সেই খসড়ায় নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলোকে পরিষ্কার করা হয়নি। নোট অব ডিসেন্ট বিষয়গুলোর একটি সংজ্ঞায়ন প্রয়োজন। কীভাবে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করা হবেÑ সে পথরেখা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। সেই অঙ্গীকারনামায় আমরা দীর্ঘসময় ধরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আলোচনা করেছি। সেই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখানে সুস্পষ্টভাবে বিস্তৃত হয়নি। আমরা একটি আদেশের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নের কথা বলেছি। সাংবিধানিক আদেশ নামকরণ হলে সে ক্ষেত্রে অনেক আপত্তির জায়গা ছিল। আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির তরফ থেকে সেটিকে জুলাই বাস্তবায়নের আদেশ বা সাংবিধানিক সংস্কার আদেশÑ যেকোনো নামেই হোক, সেটিকে আমরা বাস্তবায়নের কথা বলেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করিÑ এই আদেশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের প্রধান হিসেবে জারি করবেন। সেটি জনগণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, সেই অভিপ্রায়কে সুসংহত করতে হেড অব গভর্নমেন্ট হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা সেটিকে বাস্তবায়ন করবেন, আদেশ জারি করবেন। এই আশাবাদ আমরা ব্যক্ত করছি। আমরা চাই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথটাকে পরিষ্কার করে তারপর আমরা সনদ স্বাক্ষর করার দিকে অগ্রসর হবো। জাতির কাছে সবগুলো বিষয়কে পরিষ্কার করে তারপর জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হলে তবেই সেটি বাংলাদেশে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং জাতির প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব।
এর আগে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫, এর স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে গতকাল বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে একটি বৈঠক হবে বলে জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে কমিশনের একজনের সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনে বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অনতিবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করবেন।’
যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। অতপর ৭ অক্টোবরের মধ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। কমিশনগুলো সংস্কার প্রস্তাব জমা দেয়ার পর চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি হিসেবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রফেসর ড. আলী রীয়াজকে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুই দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রায় অর্ধশত দিন সংলাপ করেন। গত ৩১ জুলাই সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। ৯ অক্টোবর এই আলোচনা শেষ হয়। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দেয়। ৯ অক্টোবর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কমিশন জানিয়েছিল, বিশেষজ্ঞ ও দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারকে সুপারিশ করবে। এরপর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতপার্থক্য কমাতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণভোটের ভিত্তি কী হবে, গণভোট কি সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবেÑ নাকি আগে, গণভোটে কী কী প্রশ্ন থাকবে, এসব বিষয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা এখনো কাটেনি। সূত্রের দাবি, যে সব রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার তারা কার্যত আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন পেছানোর চেষ্টায় একের পর এক ইস্যুতে ভিন্নমত পোষণ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা যা বললেন : ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে দলিলগুলো আপনারা তৈরি করেছেন সেগুলো হারিয়ে যাবে না। আমি যতদিন পারি চেষ্টা করব এগুলো যেন প্রত্যেকের কাছে যায়। যেন সবার মনের মধ্যে থাকতে পারে, কেন আমরা একমত হতে পেরেছি। একমত হওয়া এক জিনিস, এটিকে সঞ্চারিত করা এক জিনিস। এই সঞ্চারণের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে সরকার হিসেবে, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করব। বিষয়গুলো জনগণের কাছে প্রচার করার মতো ভাষায় প্রচার করতে হবে। আমি বলে রেখেছি, আপনারা যে বিতর্কগুলো করেছেন এগুলো অমূল্য সম্পদ। এগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে, বই করে আমাদের কাছে থাকবে, যাতে হারিয়ে না যায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচার করলে সবার কাছে পরিষ্কার হবে। তিনি বলেন, যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন সেটি শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না, পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। আপনারা কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সমাধানে এসেছেন। নিজেরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। এ জন্য আজকে জুলাই সনদ রচনা হয়েছে। সে জন্য আমি একা নই, জাতির সবাই অভিভূত হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকে যেই পয়েন্টে এসেছি, সেটি একটি অবিশ্বাস্য কা-। মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করছে। আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে গর্ববোধ করছি যে, এই কাজের সঙ্গে আমি শরিক ছিলাম, অংশীদার ছিলাম। যে অসম্ভব কাজ আপনারা করলেন, এটি যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো একটি দিন। প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান তারপরে এটিই মনে হয় সঠিকভাবে রচিত হলো। কাজেই জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে সারা জাতি শরিক হবে। যেই কলমে সই করা হবে সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। যে যে কলম দিয়ে সই করবেন তার তার মুহূর্ত জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। কারণ কেউ ভুলতে পারবে না আপনাদের। এটি এমন একটি ঘটনা, আমরা যেহেতু ঘটনার ভেতরে আছি বলে অনুভব করতে পারছি না। বাইরে গিয়ে যদি দাঁড়াতে পারতাম তাহলে মনে হতো বিশাল একটি কাজ। মাসের পর মাস বৈঠক করে হয়তো মনে করেছেন এটি অসমাপ্ত থেকে যাবে। এটি অসমাপ্ত থেকে যায়নি। সন্তোষজনকভাবে আপনারা সমাপ্তিতে এনেছেন। আপনারা ভেবেচিন্তে নিয়ম-কানুন বের করেছেন, যাতে সবাই সনদে সই করতে পারেন। এটি জাতির জন্য একটি মস্ত বড় সম্পদ রয়ে গেল। এ জন্য আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা সবাই যে পরিশ্রম করেছেন তা জাতি হিসেবে সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
Reporter Name 



















