সাংবাদিকতা

লুৎফর রহমান হিমেল,,,অনেক আগের ঘটনা। সেই সময় অসংখ্য টিভি চ্যানেল বা পত্রিকা ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল ছিল না। ওই সময় চাঁদপুরের এক সাংবাদিক ঢাকায় পত্রিকার অফিসে খবর পাঠালেন, জেলায় কলেরায় ৩০ জনের মৃত্যু। পরদিন সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে কলেরায় কারো মৃত্যুর খবর মিলল না। পরে বার্তা সম্পাদক সেই প্রতিনিধিকে ডেকে বললেন, কেন সে এরকম লিখল?

প্রতিবেদক তখন বলল, চারদিকে এরকম শোনা যাচ্ছিল। কলেরার মড়ক লেগেছে। তাই অনুমান করছিলেন, অসংখ্য মানুষ মারা গেছেই।
বার্তা সম্পাদক তখন বললেন, এরকম রিপোর্ট লেখারও ফর্মুলা আছে। এরপর এ ধরণের রিপোর্টের ক্ষেত্রে তুমি প্রতিবার ”নাকি” শব্দটা যুক্ত করে লিখবা। যেমন, চাঁদপুর শহরে নাকি কলেরায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসক নাকি বলেছেন, ১০০ জনের মৃত্যু না হওয়ার আগ পর্যন্ত এটিকে দুর্যোগ পরিস্থিতি বলা যাবে না। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নাকি কলেরার আতংক দেখা দিয়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি…

উজান-ভাটি

এ ঘটনাটিও আগের। সরেজমিন করে এক রিপোর্টার লিখেছেন, ট্রলারডুবিতে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলের উজানে পাওয়া গেছে কয়েকজনের লাশ। বাকি লাশ উদ্ধারে অভিযান চলছে।

রিপোর্ট এভাবেই ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। লোকজন সমালোচনায় মুখর। লাশ কীভাবে সাঁতার কেটে উজানে যায়? বিস্ময় সবার মনে।
রিপোর্টারকে তলব করা হল। তার চাকরি কেন থাকবে? মর্মে কারণ দর্শানো নোটিশ। রিপোর্টার সরল মনে বললেন, আমি আসলে উজান-ভাটির সংজ্ঞাটার ব্যাপারে পরিষ্কার নই। তা ছাড়া আমিতো মফস্বলের সাংবাদিক, কম জানি। আপনার অফিসের সহ সম্পাদক-কপিএডিটর- বার্তা সম্পাদকরা কি সম্পাদনা করেছেন তাহলে? চাকরি গেলে তাদেরও যেতে হবে। পরে সেই রিপোর্টারের আর চাকরি যায়নি।

[একটু আগে ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খেতে খেতে কলিগ তাহের ভাইয়ের সাথে সাংবাদিকতা নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। তিনিই বলছিলেন এরকম মজারসব অভিজ্ঞতার কথা। এ যুগের সাংবাদিকতা নিয়ে লিখব, যখন এই সময়টা ইতিহাস হবে, তখন।]

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর