ঢাকা ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গুয়ার হাওরে মদের বোতল হাতে নারী পর্যটক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৩:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
  • ১৩ বার
দেশের ‘পরিবেশগত বিপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটন নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটে চলেছে। সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায়- এক নারী মদের বোতল হাতে নাচছেন, রিলস করছেন এবং পানিতে ভিজে উন্মাদনায় মেতেছেন। ঘটনাটি নিয়ে হাওর তীরবর্তী এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের পর্যটন হাওরের পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে কোনো ভাবেই মানানসই নয়।
টাঙ্গুয়ার হাওরে এক তরুণী অশ্লীল পোশাক পড়ে প্রকাশ্যে মদের বোতল নিয়ে  ঘুরছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবেশবিদ ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
 ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী ডিঙি নৌকায় বসে প্রকাশ্যে মদ্যপান করছেন এবং তা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
হাওর পাড়ের স্থানীয়রা বলেন, হাউসবোটে মদের আসর নতুন কিছু নয়। পানি শুকিয়ে গেলে প্লাস্টিক ও মদের বোতলে হাওরের তলদেশ ঢেকে যায়। এতে কৃষি হুমকির মুখে পড়ে।
তারা বলেন, হাউসবোট পর্যটকদের তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক করা উচিত। যাতে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ঘটনার ভিডিওতে দেখা নারীর পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কোন হাউসবোট থেকে তিনি এসেছিলেন, তাও নিশ্চিত নয়। তবে ঘটনাটি নৌকা থেকেই ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
হাওরে তরুণীর হাতে মদের বোতল, ভিডিও ভাইরাল
গণমাধ্যম কর্মী ও হাওর তীরবর্তী বংশীকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা সাজেদা আহমেদ ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর আন্তর্জাতিক ভাবে ঘোষিত ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ)। এ হাওরের জীব-প্রাণবৈচিত্র্য এমনিতেই হুমকির মুখে। দেশের বৃহত্তম মিঠা পানির এ জলাভূমি একসময় দেশীয় মাছের সবচেয়ে বড় উৎস ছিল। ছিল লাখ লাখ পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে জলাভূমিটি এখন মাছ, গাছ, পাখির অভয়ারণ্য নেই। এমনকি এর পানিও দূষিত হয়ে গেছে। তবুও টাঙ্গুয়ার হাওরকে পর্যটন এলাকা বানিয়ে এটিকে মাদক, জঙ্গি, যৌনতা ও অপরাধের অভয়ারণ্য বানানো হয়েছে।’
টাঙ্গুয়ার হাওরপারের বংশীকুন্ডা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক সোনিয়া খানম বলেন, ‘হাওর কেন্দ্রীক সমাজ ও সংস্কৃতি এ ধরনের বিষয়কে লালন করেনা। নিঃসন্দেহে এটি স্থানীয় সংস্কৃতিকে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। টাঙ্গুয়ার হাওরে এসব কার্যকলাপের কারণে হাওর পাড়ের নিজস্ব সংস্কৃতি, জীববৈচিত্র্য ও কৃষি চরম হুমকির মুখে।’
পরিবেশবিদ ও কলামিস্ট সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘হাওরে প্রকাশ্যে মদ্যপান এবং তা প্রচার করা শুধু বেআইনি নয়, এটি চূড়ান্ত রকমের সামাজিক অবক্ষয়। প্রশাসনকে দ্রুত পর্যটকদের জন্য বিধিমালা তৈরি করতে হবে।’
Dainiksylhet.com | Most popular Bangla News Portal | টাংগুয়ার হাওরে নারী  পর্যটকের হাতে মদের বোতল, সর্বমহলে ক্ষোভ
হাওর গবেষক ও লেখক সজল কান্তি সরকার বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি, জীববৈচিত্র্য ও কৃষিনির্ভর জীবনের কেন্দ্র। পর্যটনের নামে যদি হাওর পরিণত হয় অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আস্তানায়, তাহলে এর অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।’
মধ্যনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাউসবোট মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে।’
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

টাঙ্গুয়ার হাওরে মদের বোতল হাতে নারী পর্যটক

আপডেট টাইম : ১১:২৩:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
দেশের ‘পরিবেশগত বিপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটন নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটে চলেছে। সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায়- এক নারী মদের বোতল হাতে নাচছেন, রিলস করছেন এবং পানিতে ভিজে উন্মাদনায় মেতেছেন। ঘটনাটি নিয়ে হাওর তীরবর্তী এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের পর্যটন হাওরের পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে কোনো ভাবেই মানানসই নয়।
টাঙ্গুয়ার হাওরে এক তরুণী অশ্লীল পোশাক পড়ে প্রকাশ্যে মদের বোতল নিয়ে  ঘুরছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবেশবিদ ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
 ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী ডিঙি নৌকায় বসে প্রকাশ্যে মদ্যপান করছেন এবং তা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
হাওর পাড়ের স্থানীয়রা বলেন, হাউসবোটে মদের আসর নতুন কিছু নয়। পানি শুকিয়ে গেলে প্লাস্টিক ও মদের বোতলে হাওরের তলদেশ ঢেকে যায়। এতে কৃষি হুমকির মুখে পড়ে।
তারা বলেন, হাউসবোট পর্যটকদের তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক করা উচিত। যাতে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ঘটনার ভিডিওতে দেখা নারীর পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কোন হাউসবোট থেকে তিনি এসেছিলেন, তাও নিশ্চিত নয়। তবে ঘটনাটি নৌকা থেকেই ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
হাওরে তরুণীর হাতে মদের বোতল, ভিডিও ভাইরাল
গণমাধ্যম কর্মী ও হাওর তীরবর্তী বংশীকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা সাজেদা আহমেদ ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর আন্তর্জাতিক ভাবে ঘোষিত ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ)। এ হাওরের জীব-প্রাণবৈচিত্র্য এমনিতেই হুমকির মুখে। দেশের বৃহত্তম মিঠা পানির এ জলাভূমি একসময় দেশীয় মাছের সবচেয়ে বড় উৎস ছিল। ছিল লাখ লাখ পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে জলাভূমিটি এখন মাছ, গাছ, পাখির অভয়ারণ্য নেই। এমনকি এর পানিও দূষিত হয়ে গেছে। তবুও টাঙ্গুয়ার হাওরকে পর্যটন এলাকা বানিয়ে এটিকে মাদক, জঙ্গি, যৌনতা ও অপরাধের অভয়ারণ্য বানানো হয়েছে।’
টাঙ্গুয়ার হাওরপারের বংশীকুন্ডা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক সোনিয়া খানম বলেন, ‘হাওর কেন্দ্রীক সমাজ ও সংস্কৃতি এ ধরনের বিষয়কে লালন করেনা। নিঃসন্দেহে এটি স্থানীয় সংস্কৃতিকে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। টাঙ্গুয়ার হাওরে এসব কার্যকলাপের কারণে হাওর পাড়ের নিজস্ব সংস্কৃতি, জীববৈচিত্র্য ও কৃষি চরম হুমকির মুখে।’
পরিবেশবিদ ও কলামিস্ট সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘হাওরে প্রকাশ্যে মদ্যপান এবং তা প্রচার করা শুধু বেআইনি নয়, এটি চূড়ান্ত রকমের সামাজিক অবক্ষয়। প্রশাসনকে দ্রুত পর্যটকদের জন্য বিধিমালা তৈরি করতে হবে।’
Dainiksylhet.com | Most popular Bangla News Portal | টাংগুয়ার হাওরে নারী  পর্যটকের হাতে মদের বোতল, সর্বমহলে ক্ষোভ
হাওর গবেষক ও লেখক সজল কান্তি সরকার বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি, জীববৈচিত্র্য ও কৃষিনির্ভর জীবনের কেন্দ্র। পর্যটনের নামে যদি হাওর পরিণত হয় অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আস্তানায়, তাহলে এর অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।’
মধ্যনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাউসবোট মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে।’