ঢাকা ০১:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তীব্র লবণ সংকটে শ্রীলঙ্কা—ক্রেতারা ছুটছেন শহর থেকে শহরে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪১:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • ১৪ বার

ভারী বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় তৈরি হয়েছে লবণের তীব্র সংকট। সমুদ্রঘেরা এই দ্বীপরাষ্ট্রে লবণের অভাবে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির বেড়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু এই অর্থ দিয়েও লবণ খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই। বাধ্য হয়ে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর কেউ কেউ সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা পানি ফুটিয়ে লবন বের করার চেষ্টা করছেন।

আজ বুধবার যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলোর অভাবে হামবানটোটা, এলিফ্যান্ট পাস ও পুট্টালাম এলাকার লবণ চাষে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটে। শুধু গত সপ্তাহেই ভারী বৃষ্টিতে প্রায় ১৫ হাজার টন সংগ্রহকৃত লবণ ধুয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পুট্টালামের লবণ উৎপাদকেরা। ৫০ কেজির একটি লবণের বস্তার দাম চারগুণ ছাড়িয়ে গেছে।

শ্রীলঙ্কায় সাধারণত বছরে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টন লবণের চাহিদা থাকে। গত এক বছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ১ লাখ টনের বেশি লবণ উৎপাদন হলেও, তা চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। পুট্টালাম অঞ্চল একাই দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ লবণ উৎপাদন করে থাকে।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে ডেইলি মিরর সম্পাদক জামিলা হোসেইন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘লবণের চরম সংকট চলছে। সুপারমার্কেটের তাকগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে, ভোক্তারা হতাশ।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশটির এক বাসিন্দা বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে লবণের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছি। শেষ পর্যন্ত বোড়ালাসগামুয়া শহরে গিয়ে লবণ পেয়েছি।’

ড. চন্দনা বিক্রমসিংহ লিখেছেন, ‘আমাদের প্রিয় ভাত-তরকারিও আজ হুমকির মুখে। দুর্ভাগ্য যে, সমুদ্রবেষ্টিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র হয়েও আমরা বারবার লবণের মতো মৌলিক উপকরণের জন্য ভারতসহ বাইরের দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি।’

শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াসান্তা সমারাসিংহে জানিয়েছেন, ভারত থেকে ৩ হাজার ৫০ টন লবণের একটি চালান বুধবার শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাবে। এর আগে ১২ হাজার ৫০০ টনের একটি চালান আনা হয়েছিল।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহ দিতে আমদানি বন্ধ রেখেছিলাম। মার্চ ও মে মাসে ভালো উৎপাদনের আশায় ছিল সবাই। কিন্তু মে মাসেও বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই আমদানি করতে হয়েছে।’

শ্রীলঙ্কা এখনো ২০২২ সালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সেই সময় বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে দেশটি পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানি ও কয়লা আমদানি করতে পারেনি। এ অবস্থায় লবণের এই সংকট দেশটির জন্য আরেকটি নতুন আঘাত হয়ে এসেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তীব্র লবণ সংকটে শ্রীলঙ্কা—ক্রেতারা ছুটছেন শহর থেকে শহরে

আপডেট টাইম : ০৭:৪১:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

ভারী বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় তৈরি হয়েছে লবণের তীব্র সংকট। সমুদ্রঘেরা এই দ্বীপরাষ্ট্রে লবণের অভাবে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির বেড়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু এই অর্থ দিয়েও লবণ খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই। বাধ্য হয়ে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর কেউ কেউ সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা পানি ফুটিয়ে লবন বের করার চেষ্টা করছেন।

আজ বুধবার যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলোর অভাবে হামবানটোটা, এলিফ্যান্ট পাস ও পুট্টালাম এলাকার লবণ চাষে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটে। শুধু গত সপ্তাহেই ভারী বৃষ্টিতে প্রায় ১৫ হাজার টন সংগ্রহকৃত লবণ ধুয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পুট্টালামের লবণ উৎপাদকেরা। ৫০ কেজির একটি লবণের বস্তার দাম চারগুণ ছাড়িয়ে গেছে।

শ্রীলঙ্কায় সাধারণত বছরে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টন লবণের চাহিদা থাকে। গত এক বছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ১ লাখ টনের বেশি লবণ উৎপাদন হলেও, তা চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। পুট্টালাম অঞ্চল একাই দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ লবণ উৎপাদন করে থাকে।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে ডেইলি মিরর সম্পাদক জামিলা হোসেইন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘লবণের চরম সংকট চলছে। সুপারমার্কেটের তাকগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে, ভোক্তারা হতাশ।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশটির এক বাসিন্দা বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে লবণের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছি। শেষ পর্যন্ত বোড়ালাসগামুয়া শহরে গিয়ে লবণ পেয়েছি।’

ড. চন্দনা বিক্রমসিংহ লিখেছেন, ‘আমাদের প্রিয় ভাত-তরকারিও আজ হুমকির মুখে। দুর্ভাগ্য যে, সমুদ্রবেষ্টিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র হয়েও আমরা বারবার লবণের মতো মৌলিক উপকরণের জন্য ভারতসহ বাইরের দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি।’

শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াসান্তা সমারাসিংহে জানিয়েছেন, ভারত থেকে ৩ হাজার ৫০ টন লবণের একটি চালান বুধবার শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাবে। এর আগে ১২ হাজার ৫০০ টনের একটি চালান আনা হয়েছিল।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহ দিতে আমদানি বন্ধ রেখেছিলাম। মার্চ ও মে মাসে ভালো উৎপাদনের আশায় ছিল সবাই। কিন্তু মে মাসেও বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই আমদানি করতে হয়েছে।’

শ্রীলঙ্কা এখনো ২০২২ সালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সেই সময় বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে দেশটি পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানি ও কয়লা আমদানি করতে পারেনি। এ অবস্থায় লবণের এই সংকট দেশটির জন্য আরেকটি নতুন আঘাত হয়ে এসেছে।