ঢাকা ১১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

জুনায়েদ ইভান কনসার্টের আয় দিয়েই মানবিক কাজ করবে ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • ৩১ বার
গানের পাশাপাশি মানুষ ও মানবতার জন্য কাজ করে ব্যান্ড ‘অ্যাশেজ’। এবার দেশজুড়ে কমিউনিটি গঠন করে আরো বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে চান তাঁরা। সেই লক্ষ্যে শুরু করেছেন ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’। এই উদ্যোগ এবং গানের ব্যস্ততা নিয়ে ব্যান্ডটির প্রধান জুনায়েদ ইভানের সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।

‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’ আসলে কী?

আমরা অনেক আগে থেকেই চ্যারিটি নিয়ে কাজ করছি। ১০-১২ বছর তো হবেই। এ কাজটা যেন ধারাবাহিকভাবে, পুরো দেশে করা সম্ভব হয়, সে জন্যই ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’ গঠন করছি। আমাদের লক্ষ্য, প্রতি জেলায় এক হাজার সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা।

এরই মধ্যে চার হাজারের বেশি মানুষ যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে।

এই কমিউনিটি থেকে কী কী কার্যক্রম পরিচালিত হবে?

একটা বিষয় স্পষ্ট করি, আমাদের এই পরিবারের কোনো সদস্য কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেবে না। কেউ চাইলেও ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’কে টাকা দিতে পারবেন না। যেহেতু পুরো দেশে কার্যক্রম চলবে, অনেক মানুষ জড়িত।

সুতরাং এসব অর্থনৈতিক বিষয় মেন্টেইন করা জটিল।তাহলে টাকা আসবে কোথা থেকে?

আমাদের প্রত্যেক কনসার্ট থেকে একটা অংশ এই চ্যারিটি প্রকল্পের জন্য থাকবে। এখান থেকে অসহায় মানুষের চোখের চিকিৎসা, ক্যান্সার কিংবা কিডনির মতো রোগের চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় করা হবে। আবার কিছু কাজ স্বল্প টাকা কিংবা টাকা ছাড়াও হয়। যেমন বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা, রক্তদান কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ এসবও করা হবে।

এরই মধ্যে আমরা বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, হাসপাতালে কথা বলেছি। সব কিছুই সুন্দরভাগে গুছিয়ে নিচ্ছি।আরেকটা ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজও আমরা করতে চাই, তা হলো টয়লেট নিয়ে। দেখুন দেশের অধিকাংশ জায়গায় পাবলিক টয়লেট সংকট। যা আছে, তাতেও ভালো ব্যবস্থাপনা নেই। আমাদের ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’র সদস্যরা তাদের নিজ নিজ এলাকার পাবলিক টয়লেট নিয়ে কাজ করবে। একটা বিষয় ভাবুন, একজন মহিলা যখন বাইরে যান, তার জন্য টয়লেট আছে? ধরুন কেউ অন্তঃসত্ত্বা, কেউ প্যারালাইজড, এসব মানুষের কথাও তো ভাবতে হবে। আমরা যদি ৫, ১০, ২০টা টয়লেটও স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনায় আনতে পারি, সেটাও কম কিসে?

যত দূর জানি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আগে থেকেই মানুষকে সহযোগিতা করে আসছেন…

আমি মনে করি, এটা আমার দায়বদ্ধতা। এই যে গান করে এত টাকা আয় করছি, এত মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি, এর বিপরীতে আমারও তো কিছু দায়বদ্ধতা আছে। সেই ভাবনা থেকেই চেষ্টা করছি। যদিও কখনো হিসাব রাখিনি, অনুমানিক ১০০ মানুষের চিকিৎসায় সহায়তা করেছি।

এসব চ্যারিটি কাজে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়?

হ্যাঁ, কিছু সমস্যা তো আছেই। যেমন কেউ কেউ সন্দেহের চোখে দেখেন, জানতে চায় উদ্দেশ্য কী? মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘুরতে যাই কি না! তাদের এই জিজ্ঞাসা অযৌক্তিক না। কারণ প্রতারণার ঘটনাও তো অহরহ ঘটে। তাই বলে আমরা ভালো কাজ বন্ধ করে দেব? সব কিছু মানিয়ে নিয়েই কাজ করে যেতে হবে। স্বচ্ছতার জন্য অনুদান সংগ্রহে আমি কখনো নিজের কিংবা আমার পরিবার, বন্ধু-স্বজন কারো নাম্বার দিই না। সরাসরি রোগী অথবা তার পরিবারের নাম্বার দিয়ে দিই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যার যার সহযোগিতা পাঠান।

মানুষের ভালোবাসা বড় অদ্ভুত। একটা ঘটনা বলি, কয়েক বছর আগে ইকরা নামের এক মেয়ের জন্য আমরা অনুদান সংগ্রহ করেছিলাম। অনেক দিন পর তার খালা আমার কাছে এলেন প্রায় দেড় লাখ টাকা নিয়ে। জানালেন, চিকিৎসা শেষে এই টাকা বেঁচে গেছে। তাই আমাকে ফেরত দিতে এসেছেন। আমি তাঁকে বলেছি, এই টাকা মানুষ ইকরার জন্য দিয়েছে। আমি এটা নিতে পারব না। আপনি আরেকটা ইকরাকে খুঁজে বের করে তাকে টাকাগুলো দিন, যাতে সেও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এই যে মানুষের সততা, এটা সচরাচর দেখা যায় না।

গানের প্রসঙ্গে আসি। নতুন অ্যালবাম কবে আসবে?

আমরা দুটি অ্যালবাম নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছি। এর মধ্যে ‘নিরুদ্দেশ’ অ্যালবামটির দুটি গান এর আগে প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় অ্যালবামটির নাম ‘ডানাহীন পাখি’। দুই অ্যালবামে মোট ১৪টি গান থাকবে। এ বছরের মধ্যেই অ্যালবাম দুটি প্রকাশ করব। এ জন্য গানগুলোর কাজও একসঙ্গে গুছিয়ে নিচ্ছি। কাজও প্রায় শেষের দিকে।

কনসার্টের ব্যস্ততা কেমন?

বেশ। ২০ মে আমাদের উত্তরবঙ্গ ট্যুর শুরু হবে। চলবে ৩০ মে পর্যন্ত। গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে সাতটি কনসার্ট করব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সচিবালয়-কেন্দ্রিক সকল সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

জুনায়েদ ইভান কনসার্টের আয় দিয়েই মানবিক কাজ করবে ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি

আপডেট টাইম : ১১:১৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
গানের পাশাপাশি মানুষ ও মানবতার জন্য কাজ করে ব্যান্ড ‘অ্যাশেজ’। এবার দেশজুড়ে কমিউনিটি গঠন করে আরো বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে চান তাঁরা। সেই লক্ষ্যে শুরু করেছেন ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’। এই উদ্যোগ এবং গানের ব্যস্ততা নিয়ে ব্যান্ডটির প্রধান জুনায়েদ ইভানের সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।

‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’ আসলে কী?

আমরা অনেক আগে থেকেই চ্যারিটি নিয়ে কাজ করছি। ১০-১২ বছর তো হবেই। এ কাজটা যেন ধারাবাহিকভাবে, পুরো দেশে করা সম্ভব হয়, সে জন্যই ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’ গঠন করছি। আমাদের লক্ষ্য, প্রতি জেলায় এক হাজার সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা।

এরই মধ্যে চার হাজারের বেশি মানুষ যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে।

এই কমিউনিটি থেকে কী কী কার্যক্রম পরিচালিত হবে?

একটা বিষয় স্পষ্ট করি, আমাদের এই পরিবারের কোনো সদস্য কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেবে না। কেউ চাইলেও ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’কে টাকা দিতে পারবেন না। যেহেতু পুরো দেশে কার্যক্রম চলবে, অনেক মানুষ জড়িত।

সুতরাং এসব অর্থনৈতিক বিষয় মেন্টেইন করা জটিল।তাহলে টাকা আসবে কোথা থেকে?

আমাদের প্রত্যেক কনসার্ট থেকে একটা অংশ এই চ্যারিটি প্রকল্পের জন্য থাকবে। এখান থেকে অসহায় মানুষের চোখের চিকিৎসা, ক্যান্সার কিংবা কিডনির মতো রোগের চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় করা হবে। আবার কিছু কাজ স্বল্প টাকা কিংবা টাকা ছাড়াও হয়। যেমন বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা, রক্তদান কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ এসবও করা হবে।

এরই মধ্যে আমরা বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, হাসপাতালে কথা বলেছি। সব কিছুই সুন্দরভাগে গুছিয়ে নিচ্ছি।আরেকটা ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজও আমরা করতে চাই, তা হলো টয়লেট নিয়ে। দেখুন দেশের অধিকাংশ জায়গায় পাবলিক টয়লেট সংকট। যা আছে, তাতেও ভালো ব্যবস্থাপনা নেই। আমাদের ‘অ্যাশেজ ফ্যামিলি’র সদস্যরা তাদের নিজ নিজ এলাকার পাবলিক টয়লেট নিয়ে কাজ করবে। একটা বিষয় ভাবুন, একজন মহিলা যখন বাইরে যান, তার জন্য টয়লেট আছে? ধরুন কেউ অন্তঃসত্ত্বা, কেউ প্যারালাইজড, এসব মানুষের কথাও তো ভাবতে হবে। আমরা যদি ৫, ১০, ২০টা টয়লেটও স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনায় আনতে পারি, সেটাও কম কিসে?

যত দূর জানি, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আগে থেকেই মানুষকে সহযোগিতা করে আসছেন…

আমি মনে করি, এটা আমার দায়বদ্ধতা। এই যে গান করে এত টাকা আয় করছি, এত মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি, এর বিপরীতে আমারও তো কিছু দায়বদ্ধতা আছে। সেই ভাবনা থেকেই চেষ্টা করছি। যদিও কখনো হিসাব রাখিনি, অনুমানিক ১০০ মানুষের চিকিৎসায় সহায়তা করেছি।

এসব চ্যারিটি কাজে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়?

হ্যাঁ, কিছু সমস্যা তো আছেই। যেমন কেউ কেউ সন্দেহের চোখে দেখেন, জানতে চায় উদ্দেশ্য কী? মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘুরতে যাই কি না! তাদের এই জিজ্ঞাসা অযৌক্তিক না। কারণ প্রতারণার ঘটনাও তো অহরহ ঘটে। তাই বলে আমরা ভালো কাজ বন্ধ করে দেব? সব কিছু মানিয়ে নিয়েই কাজ করে যেতে হবে। স্বচ্ছতার জন্য অনুদান সংগ্রহে আমি কখনো নিজের কিংবা আমার পরিবার, বন্ধু-স্বজন কারো নাম্বার দিই না। সরাসরি রোগী অথবা তার পরিবারের নাম্বার দিয়ে দিই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যার যার সহযোগিতা পাঠান।

মানুষের ভালোবাসা বড় অদ্ভুত। একটা ঘটনা বলি, কয়েক বছর আগে ইকরা নামের এক মেয়ের জন্য আমরা অনুদান সংগ্রহ করেছিলাম। অনেক দিন পর তার খালা আমার কাছে এলেন প্রায় দেড় লাখ টাকা নিয়ে। জানালেন, চিকিৎসা শেষে এই টাকা বেঁচে গেছে। তাই আমাকে ফেরত দিতে এসেছেন। আমি তাঁকে বলেছি, এই টাকা মানুষ ইকরার জন্য দিয়েছে। আমি এটা নিতে পারব না। আপনি আরেকটা ইকরাকে খুঁজে বের করে তাকে টাকাগুলো দিন, যাতে সেও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এই যে মানুষের সততা, এটা সচরাচর দেখা যায় না।

গানের প্রসঙ্গে আসি। নতুন অ্যালবাম কবে আসবে?

আমরা দুটি অ্যালবাম নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছি। এর মধ্যে ‘নিরুদ্দেশ’ অ্যালবামটির দুটি গান এর আগে প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় অ্যালবামটির নাম ‘ডানাহীন পাখি’। দুই অ্যালবামে মোট ১৪টি গান থাকবে। এ বছরের মধ্যেই অ্যালবাম দুটি প্রকাশ করব। এ জন্য গানগুলোর কাজও একসঙ্গে গুছিয়ে নিচ্ছি। কাজও প্রায় শেষের দিকে।

কনসার্টের ব্যস্ততা কেমন?

বেশ। ২০ মে আমাদের উত্তরবঙ্গ ট্যুর শুরু হবে। চলবে ৩০ মে পর্যন্ত। গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে সাতটি কনসার্ট করব।