ঢাকা ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা: পেছন থেকে হাওয়া দিচ্ছে কারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:১৫:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • ৩৮ বার

হঠাৎ করেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও সংঘাতময় পরিস্থিতি যেন উত্তপ্ত করে তুলেছে রাজপথ। নার্সিং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ-প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হত্যা, সব মিলিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, এই অস্থিরতা কি আকস্মিক! নাকি এর পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত কোনো চক্রান্ত?

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার (১৪ সে) রাতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে সরাসরি অভিযোগ তোলেন, এসব ঘটনার মূল হোতা আওয়ামী লীগ।

তিনি দাবি করেন, ক্ষমতাসীন দল জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এবং বিরোধী মত ও তরুণদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে এমন পন্থা অবলম্বন করছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এসব ‘মৃত্যু ও বিশৃঙ্খলা’ মূলত রাজনৈতিক প্রকল্প, যার মাধ্যমে সরকার নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে।

ফেসবুক পোস্ট ইলিয়াস হোসেন বলেন, তরুণদের মাঝে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়াতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শাহরিয়ারকে হত্যা করা হয়েছে। এটি নিছক অপরাধ নয়, এটি রাষ্ট্রীয় প্রকল্প।

তিনি আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন দমানোর অংশ হিসেবেই তৈরি করা হচ্ছে সহিংস পরিস্থিতি, যেনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর কেউ মাথা তুলে কথা না বলে।

এই অভিযোগ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন সময় এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন অপরাধ বা প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তবে ইলিয়াস হোসেনের মতে , ক্ষমতাসীন দল মাঠ পরিষ্কার করতে এখন আর রাজনৈতিক দল নয়, বরং সরাসরি ছাত্র ও তরুণদের নিশানা করছে।

এদিকে ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার তদন্তে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদার (৩০)–কে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।  ছাত্রদল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার পাশাপাশি সাম্য হত্যার জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে। এছাড়া, এই হত্যাকাণ্ডের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা ও অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়েও সমালোচনা উঠে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। অবৈধ দোকান ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া, উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদার, পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এবং রাত ৮টার পর জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধসহ ৮টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

তবে এই পদক্ষেপ নেয়ার পরও সাম্য হত্যাকাণ্ডের নিয়ে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অন্যদিকে গতকাল বুধবার (১৪ মে) রাতে কাকরাইল মসজিদের সামনে চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় ভিড়ের মধ্য থেকে এক যুবক তার মাথায় একটি প্লাস্টিকের পানির বোতল ছুড়ে মারেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায়, ওই যুবকের মাথায় একটি ক্যাপ ছিল এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন ।

ঘটনার পরপরই পুলিশ ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত যুবককে শনাক্তের চেষ্টা করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ওই যুবককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

দেশের রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি এই ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা কানাঘুষা। কিছুটা হলেও সরকার এই পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় চাপে পড়েছেন। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণির অ্যাক্টিভিস্ট সরকারের সমালোচনা শুরু করেছেন।  যা সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া শাহবাগে নাসিং শিক্ষার্থীদের অবরোধে পুলিশের জলকামান ও লাঠিচার্জ নিয়েও উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই ঘটনাগুলো সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

ইলিয়াসের ভাষ্যমতে, এই ঘটনাগুলো পরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হচ্ছে। আর তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তিনি জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দদের নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা: পেছন থেকে হাওয়া দিচ্ছে কারা

আপডেট টাইম : ০৩:১৫:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

হঠাৎ করেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও সংঘাতময় পরিস্থিতি যেন উত্তপ্ত করে তুলেছে রাজপথ। নার্সিং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ-প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হত্যা, সব মিলিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, এই অস্থিরতা কি আকস্মিক! নাকি এর পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত কোনো চক্রান্ত?

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার (১৪ সে) রাতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে সরাসরি অভিযোগ তোলেন, এসব ঘটনার মূল হোতা আওয়ামী লীগ।

তিনি দাবি করেন, ক্ষমতাসীন দল জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এবং বিরোধী মত ও তরুণদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে এমন পন্থা অবলম্বন করছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এসব ‘মৃত্যু ও বিশৃঙ্খলা’ মূলত রাজনৈতিক প্রকল্প, যার মাধ্যমে সরকার নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে।

ফেসবুক পোস্ট ইলিয়াস হোসেন বলেন, তরুণদের মাঝে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়াতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শাহরিয়ারকে হত্যা করা হয়েছে। এটি নিছক অপরাধ নয়, এটি রাষ্ট্রীয় প্রকল্প।

তিনি আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন দমানোর অংশ হিসেবেই তৈরি করা হচ্ছে সহিংস পরিস্থিতি, যেনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর কেউ মাথা তুলে কথা না বলে।

এই অভিযোগ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন সময় এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন অপরাধ বা প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তবে ইলিয়াস হোসেনের মতে , ক্ষমতাসীন দল মাঠ পরিষ্কার করতে এখন আর রাজনৈতিক দল নয়, বরং সরাসরি ছাত্র ও তরুণদের নিশানা করছে।

এদিকে ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার তদন্তে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদার (৩০)–কে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।  ছাত্রদল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার পাশাপাশি সাম্য হত্যার জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে। এছাড়া, এই হত্যাকাণ্ডের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা ও অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়েও সমালোচনা উঠে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। অবৈধ দোকান ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া, উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদার, পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এবং রাত ৮টার পর জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধসহ ৮টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

তবে এই পদক্ষেপ নেয়ার পরও সাম্য হত্যাকাণ্ডের নিয়ে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অন্যদিকে গতকাল বুধবার (১৪ মে) রাতে কাকরাইল মসজিদের সামনে চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় ভিড়ের মধ্য থেকে এক যুবক তার মাথায় একটি প্লাস্টিকের পানির বোতল ছুড়ে মারেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায়, ওই যুবকের মাথায় একটি ক্যাপ ছিল এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন ।

ঘটনার পরপরই পুলিশ ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত যুবককে শনাক্তের চেষ্টা করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ওই যুবককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

দেশের রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি এই ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা কানাঘুষা। কিছুটা হলেও সরকার এই পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় চাপে পড়েছেন। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণির অ্যাক্টিভিস্ট সরকারের সমালোচনা শুরু করেছেন।  যা সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া শাহবাগে নাসিং শিক্ষার্থীদের অবরোধে পুলিশের জলকামান ও লাঠিচার্জ নিয়েও উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই ঘটনাগুলো সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

ইলিয়াসের ভাষ্যমতে, এই ঘটনাগুলো পরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হচ্ছে। আর তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তিনি জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দদের নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন