ঢাকা ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদক-অপকর্মের আখড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
  • ৪৯ বার

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতা ও অপরাধচক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্যের অবাধ বেচাকেনা চলে হরদম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস লাগোয়া এই উদ্যানে অপরাধ তৎপরতায় আতঙ্কিত সাধারণ দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর উদ্যানজুড়ে দেখা যায় ভয়ংকর রূপ। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইল, অসামাজিক কার্যকলাপসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে এই উদ্যানে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন ঢাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য।

জানা যায়, উদ্যানে সন্ধ্যার পর থেকে মুক্তমঞ্চ, কালীমন্দির, ছবির হাট, লেকপাড়, টিএসসি-সংলগ্ন গেট, মন্দিরের পাশের গেট, ভিআইপি গেট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের পেছনের এলাকাগুলোয় প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়। পারুলী, রেখা, ফিরোজ, নাসু, বাবু, হৃদয়সহ অন্তত ১০ জনের নেতৃত্বে মাদক ব্যবসায় সক্রিয় রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ জন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চক্রের এক সদস্য বুধবার যুগান্তরকে জানায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে উদ্যানের মাদক সিন্ডিকেট এবং অবৈধ দোকানপাট নিয়ন্ত্রণ করত ছাত্রলীগ। ৫ আগস্টের পর নতুন চাঁদাবাজরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে উদ্যান। তাদের চাঁদা দিয়েই ব্যবসা চলছে।

ছবিরহাটের সামনে কথা হয় আজমল হোসেন নামে এক রিকশাচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে গাজা কিনতে ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার লোকজন আসেন। রাতে মুক্তমঞ্চ এলাকায় প্রকাশ্যে গাঁজার আসর বসে। এক পুরিয়া ১০০ টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হলেও পুলিশ না দেখার ভান করে। তিনি জানান, মন্দিরের পাশ, গ্লাস টাওয়ার ও চারুকলার গেট এলাকায় সন্ধ্যার পর তরুণ-তরুণী ও হিজড়াচক্রের দৌরাÍ্য বেড়ে যায়। চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। এরা মানুষকে ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোন-টাকাও ছিনিয়ে নেয়। অনেক জুটি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলেও লজ্জা বা ভয়ে প্রকাশ করে না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, উদ্যানের অপরাধচক্রে জড়িত রয়েছে কতিপয় শিক্ষার্থীও। বান্ধবীদের ফাঁদ হিসাবে ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করেন তারা।

বুধবার উদ্যানে ঘুরতে আসা আসমা বেগম বলেন, এত সুন্দর একটা জায়গা অপরাধীদের অভয়ারণ্য হোক, আমরা কখনো চাই না। এই উদ্যানকে অপরাধমুক্ত করা হোক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শুধু একটি পার্ক নয়, এটি আমাদের ঐতিহাসিক স্মৃতির স্থান। এখানে মাদক, অপরাধ ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকলে তা হবে জাতির জন্য লজ্জার।

আরেক দর্শনার্থী আল আমিন বলেন, উদ্যানজুড়ে সিসিটিভি স্থাপন, পর্যাপ্ত আলো, নিয়মিত টহল, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করলে পরিবেশটা ভালো হবে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে নিরাপত্তাহীনতা ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজি, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মের আখড়া। তার দাবি, উদ্যানের চারপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট ও অফিস থাকলেও তারা এসব অনিয়ম দমন না করে উলটো এসবের ‘ভাগীদার’ হয়ে উঠেছে। এর ফলে যুবসমাজের একটা অংশ বিপথে যাচ্ছে, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, উদ্যানটি উন্মুক্ত, তাই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ কঠিন। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদক-অপকর্মের আখড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

আপডেট টাইম : ০৯:৪৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতা ও অপরাধচক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্যের অবাধ বেচাকেনা চলে হরদম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস লাগোয়া এই উদ্যানে অপরাধ তৎপরতায় আতঙ্কিত সাধারণ দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর উদ্যানজুড়ে দেখা যায় ভয়ংকর রূপ। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইল, অসামাজিক কার্যকলাপসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে এই উদ্যানে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন ঢাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য।

জানা যায়, উদ্যানে সন্ধ্যার পর থেকে মুক্তমঞ্চ, কালীমন্দির, ছবির হাট, লেকপাড়, টিএসসি-সংলগ্ন গেট, মন্দিরের পাশের গেট, ভিআইপি গেট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের পেছনের এলাকাগুলোয় প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়। পারুলী, রেখা, ফিরোজ, নাসু, বাবু, হৃদয়সহ অন্তত ১০ জনের নেতৃত্বে মাদক ব্যবসায় সক্রিয় রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ জন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চক্রের এক সদস্য বুধবার যুগান্তরকে জানায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে উদ্যানের মাদক সিন্ডিকেট এবং অবৈধ দোকানপাট নিয়ন্ত্রণ করত ছাত্রলীগ। ৫ আগস্টের পর নতুন চাঁদাবাজরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে উদ্যান। তাদের চাঁদা দিয়েই ব্যবসা চলছে।

ছবিরহাটের সামনে কথা হয় আজমল হোসেন নামে এক রিকশাচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে গাজা কিনতে ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার লোকজন আসেন। রাতে মুক্তমঞ্চ এলাকায় প্রকাশ্যে গাঁজার আসর বসে। এক পুরিয়া ১০০ টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হলেও পুলিশ না দেখার ভান করে। তিনি জানান, মন্দিরের পাশ, গ্লাস টাওয়ার ও চারুকলার গেট এলাকায় সন্ধ্যার পর তরুণ-তরুণী ও হিজড়াচক্রের দৌরাÍ্য বেড়ে যায়। চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। এরা মানুষকে ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোন-টাকাও ছিনিয়ে নেয়। অনেক জুটি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলেও লজ্জা বা ভয়ে প্রকাশ করে না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, উদ্যানের অপরাধচক্রে জড়িত রয়েছে কতিপয় শিক্ষার্থীও। বান্ধবীদের ফাঁদ হিসাবে ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করেন তারা।

বুধবার উদ্যানে ঘুরতে আসা আসমা বেগম বলেন, এত সুন্দর একটা জায়গা অপরাধীদের অভয়ারণ্য হোক, আমরা কখনো চাই না। এই উদ্যানকে অপরাধমুক্ত করা হোক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শুধু একটি পার্ক নয়, এটি আমাদের ঐতিহাসিক স্মৃতির স্থান। এখানে মাদক, অপরাধ ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকলে তা হবে জাতির জন্য লজ্জার।

আরেক দর্শনার্থী আল আমিন বলেন, উদ্যানজুড়ে সিসিটিভি স্থাপন, পর্যাপ্ত আলো, নিয়মিত টহল, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করলে পরিবেশটা ভালো হবে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে নিরাপত্তাহীনতা ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজি, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মের আখড়া। তার দাবি, উদ্যানের চারপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট ও অফিস থাকলেও তারা এসব অনিয়ম দমন না করে উলটো এসবের ‘ভাগীদার’ হয়ে উঠেছে। এর ফলে যুবসমাজের একটা অংশ বিপথে যাচ্ছে, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, উদ্যানটি উন্মুক্ত, তাই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ কঠিন। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই।