ঢাকা ০২:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শরীয়তপুরে ডাকাতির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ৪, গণপিটুনিতে নিহত ২

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
  • ১৮ বার
শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে নদীতে বাল্কহেডে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের গুলিতে চারজন আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের গণপিটুনিতে দুই ডাকাত নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ তিন শ্রমিক ও গুরুতর আহত পাঁচ ডাকাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে প্রেরণ করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় মাদারীপুরের কালকিনি ও রাত ১১টার দিকে ডোমসার ইউনিয়নের তেতুলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একদল সংঘবদ্ধ ডাকাত মাদারীপুরের কালকিনির রাজারচর এলাকায় একটি বাল্কহেডে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দেয়। তখন ডাকাতরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলিতে বাল্কহেডের শ্রমিক পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার মাসুম মিয়া (৩০) ও পিরোজপুরের কালিকাঠীর আলামিন ফকির (১৯) গুলিবিদ্ধ হন।

পরে ডাকাতরা পালিয়ে শরীয়তপুরের আঙ্গারিয়ার ভাসানচর এলাকায় ঢুকে পড়ে। এরই মধ্যে ডাকাতির খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা সতর্ক হয়ে যান। ওইখানেও বাল্কহেডের শ্রমিকরা বাধা প্রদান করে। পরে ডাকাতরা আবার কীর্তিনাশা নদী দিয়ে পালানোর সময় রাজগঞ্জ এলাকা দিয়ে নদীপথে বের হওয়ার চেষ্টা করে।
তবে স্থানীয়রা বাল্কহেড দিয়ে ডোমসার এলাকার তেতুলিয়া গ্রামের নদীপথ আটকে দেয়। বাধা পেয়ে ডাকাতরা স্পিডবোট তীরে রেখে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় জনতা তাদের ধাওয়া করে। এ সময় ডাকাতরা হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এ সময় ডাকাতদের গুলিতে বাল্কহেডের শ্রমিক ডোমসার মোল্ল কান্দি এলাকার তোতা মিয়া (৩৫) ও স্থানীয় একজন আহত হন।পরে স্থানীয়রা মুন্সীগঞ্জ কালীচর থানার রিপন (৪০), শরীয়তপুরের জাজিরার কুন্ডের চরের আনোয়ার দেওয়ান (৫০), মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুরের সজীব (৩০) অজ্ঞাত আরো চারজনসহ ৭ জন ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দেয় এবং পুলিশে সোপর্দ করে।

আহত ডাকাতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মধ্যে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক পরে গুলিবিদ্ধ তিন শ্রমিকসহ ৫ ডাকাতের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকায় প্রেরণ করেন।হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গুলিবিদ্ধ আলামিন ফকির বলেন, হঠাৎ দেখি ডাকাতরা স্পিডবোট নিয়ে আসছে। কোনো কথা বলার আগেই তারা এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলি আমার শরীরে লাগে। এরপর কি হয়েছে আমি বলতে পারব না। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মুনতাসির খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ডাকাতদের গুলিতে আহত চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। এবং বাকি তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ৭ জন আহত ডাকাতের মধ্যে দুজন মারা গেছে এবং বাকি পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, মাদারীপুরের কালকিনীর রাজারচরে বাল্কহেডে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটার সময় পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ও তিনজন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। ডাকাতির সংবাদ পেয়ে আমাদের সদর থানা টিম বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে ডাকাতরা স্পিডবোটে পালানোর চেষ্টা করে এবং আঙ্গারিয়া হয়ে শরীয়তপুরের ভেতরে ঢুকে যায়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা তাদের আটক করে এবং শারীরিকভাবে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ দলকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই এবং সাতজন ডাকাতকে জনগণের কাছ থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। ঘটনাস্থল থেকে একটি স্পিডবোট ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করেছি। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শরীয়তপুরে ডাকাতির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ৪, গণপিটুনিতে নিহত ২

আপডেট টাইম : ১১:৫৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে নদীতে বাল্কহেডে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের গুলিতে চারজন আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের গণপিটুনিতে দুই ডাকাত নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ তিন শ্রমিক ও গুরুতর আহত পাঁচ ডাকাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে প্রেরণ করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় মাদারীপুরের কালকিনি ও রাত ১১টার দিকে ডোমসার ইউনিয়নের তেতুলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একদল সংঘবদ্ধ ডাকাত মাদারীপুরের কালকিনির রাজারচর এলাকায় একটি বাল্কহেডে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দেয়। তখন ডাকাতরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলিতে বাল্কহেডের শ্রমিক পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার মাসুম মিয়া (৩০) ও পিরোজপুরের কালিকাঠীর আলামিন ফকির (১৯) গুলিবিদ্ধ হন।

পরে ডাকাতরা পালিয়ে শরীয়তপুরের আঙ্গারিয়ার ভাসানচর এলাকায় ঢুকে পড়ে। এরই মধ্যে ডাকাতির খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা সতর্ক হয়ে যান। ওইখানেও বাল্কহেডের শ্রমিকরা বাধা প্রদান করে। পরে ডাকাতরা আবার কীর্তিনাশা নদী দিয়ে পালানোর সময় রাজগঞ্জ এলাকা দিয়ে নদীপথে বের হওয়ার চেষ্টা করে।
তবে স্থানীয়রা বাল্কহেড দিয়ে ডোমসার এলাকার তেতুলিয়া গ্রামের নদীপথ আটকে দেয়। বাধা পেয়ে ডাকাতরা স্পিডবোট তীরে রেখে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় জনতা তাদের ধাওয়া করে। এ সময় ডাকাতরা হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এ সময় ডাকাতদের গুলিতে বাল্কহেডের শ্রমিক ডোমসার মোল্ল কান্দি এলাকার তোতা মিয়া (৩৫) ও স্থানীয় একজন আহত হন।পরে স্থানীয়রা মুন্সীগঞ্জ কালীচর থানার রিপন (৪০), শরীয়তপুরের জাজিরার কুন্ডের চরের আনোয়ার দেওয়ান (৫০), মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুরের সজীব (৩০) অজ্ঞাত আরো চারজনসহ ৭ জন ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দেয় এবং পুলিশে সোপর্দ করে।

আহত ডাকাতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মধ্যে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক পরে গুলিবিদ্ধ তিন শ্রমিকসহ ৫ ডাকাতের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকায় প্রেরণ করেন।হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গুলিবিদ্ধ আলামিন ফকির বলেন, হঠাৎ দেখি ডাকাতরা স্পিডবোট নিয়ে আসছে। কোনো কথা বলার আগেই তারা এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলি আমার শরীরে লাগে। এরপর কি হয়েছে আমি বলতে পারব না। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মুনতাসির খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ডাকাতদের গুলিতে আহত চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। এবং বাকি তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ৭ জন আহত ডাকাতের মধ্যে দুজন মারা গেছে এবং বাকি পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, মাদারীপুরের কালকিনীর রাজারচরে বাল্কহেডে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটার সময় পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ও তিনজন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। ডাকাতির সংবাদ পেয়ে আমাদের সদর থানা টিম বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে ডাকাতরা স্পিডবোটে পালানোর চেষ্টা করে এবং আঙ্গারিয়া হয়ে শরীয়তপুরের ভেতরে ঢুকে যায়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা তাদের আটক করে এবং শারীরিকভাবে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ দলকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই এবং সাতজন ডাকাতকে জনগণের কাছ থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। ঘটনাস্থল থেকে একটি স্পিডবোট ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করেছি। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।