অভিনেতা, নির্মাতা, লেখক ও চিত্রশিল্পী- এমন অনেক পরিচয়ে পরিচিত আফজাল হোসেন। বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিনয় দিয়ে জয় করেছেন হাজারো দর্শক হৃদয়। অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাতা হিসেবেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন সবখানে। বেশ কয়েক বছর ধরে গুণী এই অভিনেতা সরব আছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কাজের পাশাপাশি এই মাধ্যমে ব্যক্তিজীবন ও নানা মত প্রকাশ করে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি বেশ কিছু প্রশ্ন ও ভাবনা শেয়ার করলেন।
শুরুতেই আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘কবে দেশটাকে নিজের বলে মনে হয়েছিল? চুয়ান্ন বছরে অনেকবার মনে করার মতো সুযোগ এসেছে। অনেকবারই মনে হয়েছে, এইবার দেশ আসলেই আমাদের হলো। যতবার মনে হয়েছে, ততবারই সে অনুভবের আনন্দ টিকে থাকতে পেরেছে সামান্য কাল। কেউ কি কখনও ভেবে দেখেছে, কেন বারবার কপালে এই দুঃখ জোটে! কেন, কি কারণে জোটে, তা নিয়ে বিস্তর ভেবেছে এদেশের বহু মানুষ বা জনগণ। ভেবেছে, ভাবে- তবে তত প্রকাশ্যে নয়, গোপনে।
কেন গোপনে- সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই অভিনেতা। তার কথায়, ‘আশঙ্কায়। যদি প্রকাশ হয়ে পড়ে, দেশ আমার হয়নি- সে মন্তব্য অপরাধী বানিয়ে দিতে পারে। আর সে অপরাধ, দোষের ক্ষয় ক্ষতির পরিমান মোটেও কম হয় না। কালে কালে প্রশ্ন করার লোক থাকে, থাকে জামার কলার বা ঘাড় ধরে ঝাঁকি দেওয়ার মানুষ। তাদের রূঢ় আচরণ- এই দ্রোহী, দেশপ্রেমহীন, অরাজক এবং অসভ্য ভাবনার সাহস কোত্থেকে পেলিরে তুই?’
কেন ভয় থাকবে সেকথা উল্লেখ করে আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘দেশটা আমার, আমাদের। আমরা আমাদের মতো করে দেশটাকে মনযোগ দিয়ে এবং অমনযোগী হয়ে ভালোবাসবো- তা কেন খোলা মন নিয়ে প্রকাশ করতে দ্বিধা হবে? কেন “দেয়ালেরও কান আছে” এমন শঙ্কায় সাধারণকে সদা সাবধানে থাকতে হয়? যদি দেশের দুর্দিন, অব্যবস্থা, মানুষের অযথা কষ্ট নিয়ে কারও ক্ষোভ, অভিমান, অনুযোগ থেকে থাকে- সে সকল যাতনার কথা নিজের মনে চেপে রাখতে হবে- নিজের দেশে এ ভয় ডর কাকে, কেন করতে হয়?’
স্বার্থবাদীরা চিরকাল সাধারণের ঘাড় মটকাতে চেয়েছে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গুণী এই অভিনেতা বলেন, ‘নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা প্রাণ মন খুলে বলা যাবে না। কালে কালে নয়া নয়া মালিক বনে যাওয়াদের চোখ রাঙানো, গালি খাওয়া বা গলা চেপে ধরার ভয়ে মিনমিনে জীবনযাপন করতে হবে বা হয় কেন? যেসব মানুষেরা অর্ধশত বছরেরও অধিক কাল ধরে নিষ্ঠার সাথে দেশটাকে ভালোবেসেছে, দেশ ও মানুষদেরকে দিয়েছে অনেক- তাদের অসামান্য ভালোবাসা খাঁটি কি খাঁটি নয়- সে বিচারের দায় দায়িত্ব যার ইচ্ছা কাঁধে তুলে নিতে পারে- এ কেমন স্বেচ্ছাচারিতা? হুঙ্কারে, গর্জনে জামানা শাসন করতে চাওয়া স্বার্থবাদীরা চিরকাল সাধারণের সস্তা ঘাড় মটকাতে চেয়েছে। মটকে দিতে পেরে ভেবেছে, আহা! বেশ মালিক মালিক অনুভব হচ্ছে। দেশ তাহলে আমাদেরই। অতএব হে সাধারণ, ভালো চাও যদি মান্য করো। অভিধানে জনগণ বলে যে সম্প্রদায়ের কথা লেখা- তাদের সাথে এ ধারাবাহিক মশকরা কি জীবনভর চলতেই থাকবে?’