বাংলাদেশ রেলওয়েতে একটি কাজের দরপত্র প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত করে কেবল অনুমোদনের জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেটি হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ। ২০২৩ সালে ঠিকাদার পালিয়ে গেলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগে এক বছর আগে প্রস্তাব দেওয়া হয়। চলতি মাসে অনুমোদন দেওয়া হয় ঠিকাদার নিয়োগের। এবার চুক্তির অপেক্ষা। একইভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট থেকে ছাতক বাজার সেকশন পূর্ত কাজটিরও একই অবস্থা। এভাবে সময় বিলম্বের কারণে প্রকল্পের কাজে দেরি হয়। ভেরিয়েশন ও সংশোধনের নামে সরকারকে গুনতে হয় বাড়তি টাকা; ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদেরও।
নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় আসেন ট্রেনে চেপে। দৈনিক এ পথে ১৬ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করে। ব্যস্ত রুটটি সিঙ্গেল লাইনের হওয়ায় এটি ডাবল লাইন করতে প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু করেও একপর্যায়ে পালিয়ে যায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর পর নতুন করে দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২৩ সালেই।
ঘটনার শুরুটা হচ্ছে, পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না লিমিটেড ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ কন্ট্র্রাক্ট টার্মিনেশন নোটিশ দেওয়ার পর। ওই ঠিকাদার কাজ শুরু করে ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর। কাজের শুরুতে রেলওয়ের জমি নিয়ে ১৩টি রিট মামলা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও কোভিড ছড়িয়ে পড়া ইত্যাদি কারণে চুক্তির মেয়াদ ছয়বার বাড়ানো হয়। এর পরও শেষ পর্যন্ত ঠিকাদার কাজ ছেড়ে চলে গেলে অবশিষ্ট কাজসহ নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। ডব্লিউ৩ নামের ওই প্যাকেজের সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে জিপিটি-স্ট্যান্ডার্ডকে ২৯৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং প্রভিশনাল সাম ১৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ক্রয়প্রস্তাব চলতি মাসে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ।
এদিকে গত বছরের ২০ জুন পাঠানো আরেকটি প্রস্তাব চলতি মাসে অনুমোদন মিলেছে। বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট থেকে ছাতক বাজার সেকশন (মিটার গেজ ট্র্যাক) পুনর্বাসন প্রকল্পের ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের পূর্ত কাজের ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। দরপত্রটির মূল্যায়ন এবং সুপারিশের জন্য গঠিত মূল্যায়ন কমিটি গত বছর মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে তিনটি বৈঠক করে। এর পর তা চূড়ান্ত হয়। প্রকল্পটির অনুমোদন হয় ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ১৮৪ কোটি টাকা। ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এর বাস্তবায়নকাল ধরা আছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের জন্য ২১৪ কোটি টাকার সংস্থান আছে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মীর আখতার হোসেন লিমিটেডকে ১৯৯ কোটি ৯৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৫ টাকায় দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপত্র জমা পড়ে। ৪টি দরপত্রই টেকনিক্যালি রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। দরপত্রের
সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মীর আখতার হোসেন লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট থেকে ছাতক বাজার পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেললাইনের এমব্যাংকমেন্ট ও রেলপথ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে রেল চলাচল বন্ধ আছে। রেলপথটি পুনর্বাসন করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।