ছোটবেলার পূজা অনেক গর্জিয়াস ছিল, অনেক পরিকল্পনা থাকত, অনেক আনন্দ থাকত। সারাবছর অপেক্ষায় থাকতাম কখন পূজা আসবে। এখনকার পূজার সঙ্গে সেই সময়ের তুলনা চলে না। এখন সব দিন একই রকম হয়ে গেছে। পেশাগত ব্যস্ততা আর পূজার ব্যস্ততা মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। এবারের পূজায় ঢাকাতেই আছি। পূজা ট্র্যাডিশনাল একটি বিষয়। তাই সাজপোশাকে ট্র্যাডিশনাল বিষয়টি থাকবে। পূজার বিকালগুলো পরিবারের সঙ্গে কাটাব। জয়কে নিয়ে এবার অনেক আনন্দ করব। ওকে নিয়েই এবারের সব পরিকল্পনা। পূজায় পরিবারের সদস্যদের সুন্দর সুন্দর উপহার দিচ্ছি। নিজেও পূজার উপহার পাচ্ছি।’ বেশ কয়েক বছর আগে অপু বিশ্বাসের মা গত হন। মা ছাড়া বেশ কয়েকটি পূজা আড়ম্বরহীন কেটেছে অপুর। এখন ছেলে আব্রাম খান জয় বড় হচ্ছে। এই পূজাতে তার স্কুলও ছুটি থাকে। ফলে ছেলেকে নিয়ে উৎসব আনন্দেই পূজার ছুটি উপভোগ করেন অপু। তবে উৎসব আর আনন্দে মেতে থাকলেও প্রতি মুহূর্তে মাকে মনে পড়ে তার। মনে হয়, মা থাকলে এই পূজা আরও আনন্দমুখর ও বর্ণিল হতো।
চঞ্চল চৌধুরী
ছোটবেলার দুর্গাপূজার কয়েকটি স্মৃতি আমাকে আজও ভাবিয়ে তোলে। আমি এমন একটি পরিবারে জন্মেছি, যেখানে অর্থসংকট ছিলই। সারা বছর নতুন কাপড় কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না বাবা-মায়ের। অনেক কষ্ট করে পূজা উপলক্ষে একটি নতুন জামা পেতাম। একবার নতুন জামা বাবা খুব কষ্ট করে কিনে দিয়েছিলেন। সে কাপড় দর্জির দোকানে সেলাই করতে দিয়ে ২০ বার গিয়েছিলাম, আমার জামাটি বানানো হয়েছে কিনা জানতে। দর্জি বিরক্ত হয়েছিল; কিন্তু আমার যে আগ্রহ ছিল পূজায় নতুন জামা পরব, সেটা হয়তো তিনি বুঝতে পারেননি। জীবনের অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে আজ এ অবস্থানে এসেও পুরনো পূজার সেই স্মৃতি ভুলতে পারি না। কষ্টকর হলে এখন সেই স্মৃতিগুলোই আমার কাছে মধুর মনে হয়।
অপর্ণা ঘোষ
তখন ক্লাস ফোর কিংবা ফাইভে পড়ি। আমাকে কুমারী সাজানো হয়েছিল। সেটা জীবনের অনেক বড় স্মৃতি। আর পূজায় পাড়া বেড়ানোর অন্যরকম আনন্দ; কিন্তু এখন সেই আনন্দ করা যায় না। পূজামণ্ডপে গেলে অনেকেই এসে ছবি তুলতে চায়, কথা বলতে চায়। এতে নিজের মতো করে ঘুরে বেড়ানো যায় না। আমাদের বাড়ি চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ নালাপাড়ায়। ছোটবেলায় ষষ্ঠীতে পাড়ার মণ্ডপে ঘুরতাম। সপ্তমী আর অষ্টমী তোলা থাকত বাইরের মণ্ডপের ঠাকুর দেখার জন্য। প্রতিমা বিসর্জনের দিন চলে যেতাম পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে। এখন কাজের ব্যস্ততায় আগের মতো আনন্দ করা যায় না।
বিদ্যা সিনহা মিম
দুর্গাপূজার একটি ঘটনা খুব মনে পড়ে। আমার এক বান্ধবী ছিল। রাগ কিংবা আনন্দ- সবকিছুতেই সে ছিল। আমি তখন রাজশাহীতে থাকি। একবার পূজায় তাকে নিয়েই ঘুরতে বের হয়েছিলাম। নৌকায় উঠেছিলাম বেড়ানোর জন্য; কিন্তু নৌকায় উঠে খুব বিপদ হয়েছিল। অতিরিক্ত মানুষের কারণে নৌকা প্রায় ডুবুডুবু। এতে আমার তেমন ভয় লাগেনি; কিন্তু আমার বান্ধবীকে নিয়েই যত ভয় ছিল। কারণ সে সাঁতার জানত না। যদি ডুবে যায়, তবে আমি না হয় সাঁতরে কোনো পাড়ে গিয়ে বাঁচব, কিন্তু বান্ধবীটার কী হবে? সে জন্য ওপরের দিকে তাকিয়ে ভগবানকে ডাকতে থাকলাম। ভয়ে ভয়ে পাড়ে নৌকা পৌঁছানোর পর বান্ধবীকে ইচ্ছামতো বকলাম- ‘তুই আমার কিসের বান্ধবী সাঁতার জানিস না! আজ থেকে তুই আমার বান্ধবী না। আজ যদি নৌকা ডুবত তা হলে তো আমি খুনি হয়ে যেতাম!’
বাপ্পী চৌধুরী
পূজা মানেই নতুন কাপড় পরিধান করা। বাবা-মা সবসময় নতুন জামা কিনে দিতেন। খাওয়া-দাওয়ায়ও ছিল নতুনত্ব। বছরের এ সময়টাতে সবাই অন্যরকমভাবে কাটাতাম। বন্ধুরা মিলে ঘুরতাম। আমি খুব ডানপিটে ছিলাম। তাই বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি করতাম। পূজা এলে ছোটবেলার একটি ঘটনা খুব মনে পড়ে। ভয়ংকর সে ঘটনা! আমি পটকা ফাটাতাম। এ জন্য অনেকেই আমাকে ভয় পেত। একবার পটকা ফাটাতে গিয়ে বিরক্ত হয়েছিলাম। পটকায় আগুন লেগেছিল; কিন্তু ফাটছে না। পরে দেখলাম যে, পটকায় পানি লেগেছিল। একটু পর পটকাটি ফাটল আর আমি তো লাফ দিয়ে দুই তলায় ওঠে আবার পড়ে গেলাম। ফলে আমার পা ফেটে রক্ত ঝরেছিল।
পূজা চেরী
পূজা এলে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। যেন আনন্দে হারিয়ে যায় মন। কখন কী করব, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত কোন কোন মণ্ডপে ঘুরে বেড়াব- এমন পরিকল্পনার ছক আঁকতাম আগে। ঢাকার হাজারীবাগে বেড়ে ওঠা। ধুলোমাখা শৈশবের দিনগুলো ওই মাটিতেই কেটেছে। ছোটবেলায় তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজারসহ পুরান ঢাকার অনেক মন্দিরে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করেছি। এখন সেই সময়গুলো খুব মিস করি। শুটিং, ডাবিংয়ের ব্যস্ততা না থাকলে অনেক আনন্দ করব। ঢাকায় ঢাকেশ্বরী ও বনানী পূজামণ্ডপে ঘোরার ইচ্ছা রয়েছে।