ঢাকা ০৯:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোনো ভাঙনই সুখের নয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৬:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • ৩ বার

ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের বৃহস্পতি তুঙ্গে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ঢাকাই সিনেমায় নিজের দাপট ধরে রেখেছেন এই নায়ক। টালিউডেও অভিনয় করেছেন শাকিব। সেখানে তার ভক্ত-অনুরাগী কম নয়। দুই বাংলায় জনপ্রিয় এই নায়কের মুখোমুখি হয়েছিল ভারতের জনপ্রিয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার। সাক্ষাৎকারে শাকিব নিজের ব্যক্তিগত জীবন, বিয়ে, বিরহ, বিচ্ছেদ ও কাজ নিয়ে কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন কেমন আছেন?

শাকিব: খুব ভালো আছি। আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি একজন অরাজনৈতিক মানুষ। সবসময় দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে।

প্রশ্ন: বারবার আপনার ব্যক্তিগত জীবন, আর ভালোভাবে বললে বিয়ে নিয়ে নানা কাটাছেঁড়া হয়েছে— মানুষ শাকিবকে কতটা আঘাত দেয় এসব?

শাকিব: আঘাত তো দিয়েছেই। কোনো ভাঙনই তো সুখের নয়। যতটুকু হয়েছে, হয়তো সেটুকুই হওয়ার ছিল। ‘লাইফ ইজ আ জার্নি’। এই যাত্রায় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, পরিচয় হয়। আমার জীবনে দুজন (অপু-বুবলী) মানুষ অতীত— এটি আগেও বলেছি। অতীত হিসেবে তারা থাকুক। এসব নিয়ে আমার আক্ষেপ-ভ্রূক্ষেপ কিছুই নেই, যা হয়েছে হয়তো ভালোর জন্য হয়েছে। আমার দুই সন্তান, বাবা-মা, বোন ও তার পরিবার, কিছু কাছের আপন মানুষ, আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং দেশ-বিদেশের কোটি কোটি ভালোবাসার মানুষ রয়েছে, যারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দেন, তাদের সবাইকে নিয়ে আমি খুব ভালো আছি।

প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে শাকিব খান নাকি ফের বিয়ে করছেন, তা-ও আবার সম্পর্ক করে— পাত্রী নাকি চিকিৎসক, সত্যিই কি কখনো ফের সংসারী হবেন?

শাকিব: মানুষ একা থাকতে পারে না। পরিবার এবং সমাজ নিয়ে বেঁচে থাকে। দেখা যাক, কোনো তাড়াহুড়ো নেই যে নির্দিষ্ট কোনো বছরের মধ্য বিয়ে করতে হবে। যদি তেমন কিছু হয় পারিবারিকভাবে হবে এবং সেটা বিয়ের পর্যায়ে যাবে। আমার বাবা-মায়ের যেহেতু বয়স হয়েছে, সন্তান হিসেবে তারা আমাকে সংসারী দেখতে চান।

প্রশ্ন: দুই ছেলে তো আপনার দেশে আছে, ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী পরিকল্পনা আছে?

শাকিব: ওরা এখনো অনেক ছোট। বুঝতে শেখেনি। ওরা স্কুলে যাচ্ছে, লেখাপড়া করছে। বাবা হিসেবে আমি ওদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চাই। আমি চাই ওরা আমার চেয়েও অনেক বড় হোক। ওদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেওয়ার জন্য যা যা করতে হয় বাবা হিসেবে আমি করে যাব।

প্রশ্ন: শাকিবের আরেক নাম বাংলাদেশে ‘কিং খান’, ভারতে শাহরুখ খানকে এই নামে ডাকা হয়। আপনি তার সঙ্গে নিজের কোনো মিল খুঁজে পান?

শাকিব: শাহরুখ খান একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মহাতারকা। এশিয়া মহাদেশের তারকাদের কাছে উনি অনুপ্রেরণার আরেক নাম। আমি মনে করি, শুধু ভারত নয়, সমগ্র মহাদেশের গর্ব তিনি। তার সঙ্গে তুলনার প্রশ্নই ওঠে না। আমি চিন্তাও করিনি কখনো এমন। তবে মানুষ একটু হলেও তার মতো করে আমাকে ভালোবাসে। বোধহয় এই মিলটুকু খুঁজে পাই। এটিই ভালো লাগার জায়গা।

প্রশ্ন: আপনার আসন্ন ছবি ‘দরদ’-এ সোনাল চৌহানের সঙ্গে কাজ করলেন, হিন্দি ছবির নায়িকা। ওর সঙ্গে কাজ করার সময় ভাষাগত কোনো সমস্যা হয়েছে?

শাকিব: বাংলা-হিন্দি অনেক শব্দের মিল রয়েছে। তাই পারস্পরিক বোঝাবুঝিতে একদমই বেগ পেতে হয়নি। তা ছাড়া আজকের পৃথিবীতে ভাষা কোনো প্রতিবন্ধকতাই নয়।

প্রশ্ন: সোনালকে নায়িকা হিসেবে কত নম্বর দেবেন, তার কোন গুণটি ভালো লেগেছে?

শাকিব: সোনাল ভীষণ সহযোগিতা করেছেন। চেষ্টা করেছেন ভেঙেচুরে নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার। শুটিংয়ের সময় ওর যে মনোযোগ দেখেছি, আমার খুব ভালো লেগেছে, খুব খুশি কাজ করে। আমার বিশ্বাস— বাংলাদেশ ও ভারত বিশ্বের যেখানে ‘দরদ’ ছবিটি দেখানো হবে, দর্শকদের ওর কাজ ভালো লাগবে।

প্রশ্ন: ‘তুফান’ বাংলাদেশে প্রায় রেকর্ড গড়েছে, কিন্তু কলকাতায় সেই ম্যাজিক করতে পারল না। এর কারণ কী?

শাকিব: কলকাতায় বাণিজ্যিক ছবির বাজার খুবই মন্দা। যতটুকু গিয়ে দেখলাম, খোঁজখবর নিলাম— ওখানকার বড় বড় তারকারাই কত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেক বছর ধরে কলকাতার মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির বাজার ভালো নয়। ‘তুফান’-এর সাফল্য কিন্তু শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ না, সারা বিশ্বে সাফল্য পেয়েছে। ছবির এই সাফল্য গত বছর ‘প্রিয়তমা’র হাত ধরে শুরু হয়েছে। পৃথিবীর বড় শহরগুলোতে পর পর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি যেমন ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’, ‘তুফান’— সব কটাই সফল হয়েছে। আমি লক্ষ করছি— সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ছবির বাজার তৈরি হয়ে গেছে। স্টকহোম, ডাবলিন, প্যারিস, মিডল ইস্ট, নর্থ আমেরিকা ছাড়াও বহু শহরের প্রেক্ষাগৃহে হলিউডের ছবিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এবং সাফল্য পাচ্ছে। যেটা আগে ভাবনার বাইরে ছিল। কিন্তু আমি এই স্বপ্নটাই দীর্ঘ দিন ধরে দেখে আসছি, যা এখন সত্যি হয়েছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের সিনেমা থেকে গান দুই দেশের একটা সহজ চলাচল ছিল, সেই সময় এমন পালাবদল। ফেসবুকে ভারতবিদ্বেষী মন্তব্য— কী মনে হয়, এভাবে কি সিনেমার শিল্পের উন্নতি সম্ভব?

শাকিব: বাংলাদেশের ইলিশ মাছ তো ঠিকই যাচ্ছে। আমাদের ক্রিকেটাররা খেলতে যাচ্ছেন, বিভিন্ন কূটনৈতিক আলোচনাও হচ্ছে। প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের পরস্পরের মিলেমিশে থাকা উচিত। তেমনটাই তো দেখছি। কিছু মানুষ এখান থেকে এক কথা বললে, ওখান থেকেও কিছু মানুষ বাংলাদেশ নিয়ে কুমন্তব্য করছেন! মানুষের আবেগের জায়গা থেকে মতামতের একটা বিভেদ থাকতে পারে। আর সম্পর্ক থাকলে ভাঙাগড়া থাকেই। কিছু দিন পর আবার ঠিক হয়ে যায়। এসব নিয়ে আমি একদমই ভাবিত নই। সমস্যা থাকলে দুই দেশের নীতিনির্ধারকরা তার সমাধান খুঁজে বার করবেন। আমি মনে করি, এশিয়ান হিসেবে আমাদের মিলেমিশে থাকা উচিত।

প্রশ্ন: এত বড় একটা পালাবদল, অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়েছে, সিনেমা হল ভাঙচুর হয়েছে, বড় তারকা হিসেবে আপনি কীভাবে দেখছেন এ পরিস্থিতি?

শাকিব: এমন একটা ঘটনার পর সব কিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে সময় লাগে। আমাদের এখানকার একজন শিল্পীর ছবি যখন পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেল, তখনই ওখানকার একটি আন্দোলনের ফলে মুখ থুবড়ে পড়ল সেটা। সব জায়গায় কমবেশি ওলটপালট থাকে। দেশের সংকটে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করবে, আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক।

সাধারণ মানুষই অনেক কিছু ভাঙে। আবার তারাই গড়ে! নতুন কিছু এলে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়। তাই সব কিছু আবার যেভাবে গড়ে উঠছে, আমি আশা করছি সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে কাজে মনোযোগী হয়েছেন। আমি আশা করছি, আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আগের চেয়ে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।

প্রশ্ন: আপনার দেশের একটা বড় অংশের দর্শক পালাবদলের সময় আপনার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান, অনেকে বলছেন আপনি নাকি দেশেই ছিলেন না?

শাকিব: আমার সামাজিকমাধ্যমের পাতাটা দেখলেই বোঝা যাবে বাংলাদেশে গণ্ডগোলের আগেই দুবাই সরকার থেকে আমাকে গোল্ডেন ভিসা ও রেসিডেন্সি দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল দুবাইয়ের কাজ সেরে ছুটি কাটানোর জন্য দুই সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রে থাকব। ওখানে আমার একটা বাসস্থানও রয়েছে। দুবাই গিয়ে প্রথম জানতে পারি দেশের এমন অবস্থা। তৎক্ষণাৎ আমি আমার সামাজিকমাধ্যমে দেশ ও মানুষের পক্ষে থাকার কথা জানিয়েছিলাম। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় একধিকবার মানুষের পক্ষে সমর্থন দিয়ে পোস্ট দিয়েছি। আগেও বলেছি— আমি অরাজনৈতিক মানুষ। সব সময় দেশ ও মানুষের পক্ষে এবং তাদের জন্য আমি সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: বড় তারকা হওয়ার বিড়ম্বনা কিছু আছে?

শাকিব: অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যেটা দেখি ভিত্তিহীন খবর। উদ্ভট সব জিনিস লেখা হয়। যার কোনো সত্যতা নেই, যা কখনো ঘটেনি সেগুলো অনেকে রঙ মিশিয়ে লিখে দেয়। এখন ভিউ নিয়ে শুধু প্রতিযোগিতা। সেই কারণে এসব হয়ে থাকে। এগুলো মাঝে মাঝে বিরক্তিকর লাগে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মানুষ কাছে আসার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন, ঘিরে ধরেন। অস্বস্তি হয় কখনো কখনো। তবে জানি, এটা আসলে ভালোবাসার কারণে হয়। এই ভালোবাসার কারণেই তো আমি।

প্রশ্ন: ‘বরবাদ’ আপনার পরবর্তী সিনেমা। কবে থেকে শুটিং শুরু করবেন?

শাকিব: অক্টোবর মাসেই মুম্বাইয়ে শুরু হচ্ছে ‘বরবাদ’-এর শুটিং। আগামী বছর সঠিক সময় দেখে মুক্তি পাবে। ‘বরবাদ’ অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে এই প্রত্যাশা করছি।

প্রশ্ন: শুনছি ‘তুফান ২’ নাকি আসতে চলছে?

শাকিব: প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এ বছর তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। ২০২৫-এ ‘তুফান ২’ আসছে না। তার আগে আমরা আলফা আই, চরকি, এসভিএফ মিলে অন্য একটি কাজ করতে পারি। চিত্রনাট্য খুব ভালো লেগেছে। আমি বরাবরই বুদ্ধিদীপ্ত ও নতুন গল্প খুঁজি, যেখানে নতুন করে নিজেকে তুলে ধরতে পারব। এতে নিজের মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জ আনা যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কোনো ভাঙনই সুখের নয়

আপডেট টাইম : ০৬:১৬:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের বৃহস্পতি তুঙ্গে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ঢাকাই সিনেমায় নিজের দাপট ধরে রেখেছেন এই নায়ক। টালিউডেও অভিনয় করেছেন শাকিব। সেখানে তার ভক্ত-অনুরাগী কম নয়। দুই বাংলায় জনপ্রিয় এই নায়কের মুখোমুখি হয়েছিল ভারতের জনপ্রিয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার। সাক্ষাৎকারে শাকিব নিজের ব্যক্তিগত জীবন, বিয়ে, বিরহ, বিচ্ছেদ ও কাজ নিয়ে কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন কেমন আছেন?

শাকিব: খুব ভালো আছি। আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি একজন অরাজনৈতিক মানুষ। সবসময় দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে।

প্রশ্ন: বারবার আপনার ব্যক্তিগত জীবন, আর ভালোভাবে বললে বিয়ে নিয়ে নানা কাটাছেঁড়া হয়েছে— মানুষ শাকিবকে কতটা আঘাত দেয় এসব?

শাকিব: আঘাত তো দিয়েছেই। কোনো ভাঙনই তো সুখের নয়। যতটুকু হয়েছে, হয়তো সেটুকুই হওয়ার ছিল। ‘লাইফ ইজ আ জার্নি’। এই যাত্রায় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, পরিচয় হয়। আমার জীবনে দুজন (অপু-বুবলী) মানুষ অতীত— এটি আগেও বলেছি। অতীত হিসেবে তারা থাকুক। এসব নিয়ে আমার আক্ষেপ-ভ্রূক্ষেপ কিছুই নেই, যা হয়েছে হয়তো ভালোর জন্য হয়েছে। আমার দুই সন্তান, বাবা-মা, বোন ও তার পরিবার, কিছু কাছের আপন মানুষ, আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং দেশ-বিদেশের কোটি কোটি ভালোবাসার মানুষ রয়েছে, যারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দেন, তাদের সবাইকে নিয়ে আমি খুব ভালো আছি।

প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে শাকিব খান নাকি ফের বিয়ে করছেন, তা-ও আবার সম্পর্ক করে— পাত্রী নাকি চিকিৎসক, সত্যিই কি কখনো ফের সংসারী হবেন?

শাকিব: মানুষ একা থাকতে পারে না। পরিবার এবং সমাজ নিয়ে বেঁচে থাকে। দেখা যাক, কোনো তাড়াহুড়ো নেই যে নির্দিষ্ট কোনো বছরের মধ্য বিয়ে করতে হবে। যদি তেমন কিছু হয় পারিবারিকভাবে হবে এবং সেটা বিয়ের পর্যায়ে যাবে। আমার বাবা-মায়ের যেহেতু বয়স হয়েছে, সন্তান হিসেবে তারা আমাকে সংসারী দেখতে চান।

প্রশ্ন: দুই ছেলে তো আপনার দেশে আছে, ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী পরিকল্পনা আছে?

শাকিব: ওরা এখনো অনেক ছোট। বুঝতে শেখেনি। ওরা স্কুলে যাচ্ছে, লেখাপড়া করছে। বাবা হিসেবে আমি ওদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চাই। আমি চাই ওরা আমার চেয়েও অনেক বড় হোক। ওদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেওয়ার জন্য যা যা করতে হয় বাবা হিসেবে আমি করে যাব।

প্রশ্ন: শাকিবের আরেক নাম বাংলাদেশে ‘কিং খান’, ভারতে শাহরুখ খানকে এই নামে ডাকা হয়। আপনি তার সঙ্গে নিজের কোনো মিল খুঁজে পান?

শাকিব: শাহরুখ খান একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মহাতারকা। এশিয়া মহাদেশের তারকাদের কাছে উনি অনুপ্রেরণার আরেক নাম। আমি মনে করি, শুধু ভারত নয়, সমগ্র মহাদেশের গর্ব তিনি। তার সঙ্গে তুলনার প্রশ্নই ওঠে না। আমি চিন্তাও করিনি কখনো এমন। তবে মানুষ একটু হলেও তার মতো করে আমাকে ভালোবাসে। বোধহয় এই মিলটুকু খুঁজে পাই। এটিই ভালো লাগার জায়গা।

প্রশ্ন: আপনার আসন্ন ছবি ‘দরদ’-এ সোনাল চৌহানের সঙ্গে কাজ করলেন, হিন্দি ছবির নায়িকা। ওর সঙ্গে কাজ করার সময় ভাষাগত কোনো সমস্যা হয়েছে?

শাকিব: বাংলা-হিন্দি অনেক শব্দের মিল রয়েছে। তাই পারস্পরিক বোঝাবুঝিতে একদমই বেগ পেতে হয়নি। তা ছাড়া আজকের পৃথিবীতে ভাষা কোনো প্রতিবন্ধকতাই নয়।

প্রশ্ন: সোনালকে নায়িকা হিসেবে কত নম্বর দেবেন, তার কোন গুণটি ভালো লেগেছে?

শাকিব: সোনাল ভীষণ সহযোগিতা করেছেন। চেষ্টা করেছেন ভেঙেচুরে নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার। শুটিংয়ের সময় ওর যে মনোযোগ দেখেছি, আমার খুব ভালো লেগেছে, খুব খুশি কাজ করে। আমার বিশ্বাস— বাংলাদেশ ও ভারত বিশ্বের যেখানে ‘দরদ’ ছবিটি দেখানো হবে, দর্শকদের ওর কাজ ভালো লাগবে।

প্রশ্ন: ‘তুফান’ বাংলাদেশে প্রায় রেকর্ড গড়েছে, কিন্তু কলকাতায় সেই ম্যাজিক করতে পারল না। এর কারণ কী?

শাকিব: কলকাতায় বাণিজ্যিক ছবির বাজার খুবই মন্দা। যতটুকু গিয়ে দেখলাম, খোঁজখবর নিলাম— ওখানকার বড় বড় তারকারাই কত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেক বছর ধরে কলকাতার মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির বাজার ভালো নয়। ‘তুফান’-এর সাফল্য কিন্তু শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ না, সারা বিশ্বে সাফল্য পেয়েছে। ছবির এই সাফল্য গত বছর ‘প্রিয়তমা’র হাত ধরে শুরু হয়েছে। পৃথিবীর বড় শহরগুলোতে পর পর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি যেমন ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’, ‘তুফান’— সব কটাই সফল হয়েছে। আমি লক্ষ করছি— সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ছবির বাজার তৈরি হয়ে গেছে। স্টকহোম, ডাবলিন, প্যারিস, মিডল ইস্ট, নর্থ আমেরিকা ছাড়াও বহু শহরের প্রেক্ষাগৃহে হলিউডের ছবিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এবং সাফল্য পাচ্ছে। যেটা আগে ভাবনার বাইরে ছিল। কিন্তু আমি এই স্বপ্নটাই দীর্ঘ দিন ধরে দেখে আসছি, যা এখন সত্যি হয়েছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের সিনেমা থেকে গান দুই দেশের একটা সহজ চলাচল ছিল, সেই সময় এমন পালাবদল। ফেসবুকে ভারতবিদ্বেষী মন্তব্য— কী মনে হয়, এভাবে কি সিনেমার শিল্পের উন্নতি সম্ভব?

শাকিব: বাংলাদেশের ইলিশ মাছ তো ঠিকই যাচ্ছে। আমাদের ক্রিকেটাররা খেলতে যাচ্ছেন, বিভিন্ন কূটনৈতিক আলোচনাও হচ্ছে। প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের পরস্পরের মিলেমিশে থাকা উচিত। তেমনটাই তো দেখছি। কিছু মানুষ এখান থেকে এক কথা বললে, ওখান থেকেও কিছু মানুষ বাংলাদেশ নিয়ে কুমন্তব্য করছেন! মানুষের আবেগের জায়গা থেকে মতামতের একটা বিভেদ থাকতে পারে। আর সম্পর্ক থাকলে ভাঙাগড়া থাকেই। কিছু দিন পর আবার ঠিক হয়ে যায়। এসব নিয়ে আমি একদমই ভাবিত নই। সমস্যা থাকলে দুই দেশের নীতিনির্ধারকরা তার সমাধান খুঁজে বার করবেন। আমি মনে করি, এশিয়ান হিসেবে আমাদের মিলেমিশে থাকা উচিত।

প্রশ্ন: এত বড় একটা পালাবদল, অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়েছে, সিনেমা হল ভাঙচুর হয়েছে, বড় তারকা হিসেবে আপনি কীভাবে দেখছেন এ পরিস্থিতি?

শাকিব: এমন একটা ঘটনার পর সব কিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে সময় লাগে। আমাদের এখানকার একজন শিল্পীর ছবি যখন পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেল, তখনই ওখানকার একটি আন্দোলনের ফলে মুখ থুবড়ে পড়ল সেটা। সব জায়গায় কমবেশি ওলটপালট থাকে। দেশের সংকটে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করবে, আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক।

সাধারণ মানুষই অনেক কিছু ভাঙে। আবার তারাই গড়ে! নতুন কিছু এলে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়। তাই সব কিছু আবার যেভাবে গড়ে উঠছে, আমি আশা করছি সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে কাজে মনোযোগী হয়েছেন। আমি আশা করছি, আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আগের চেয়ে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।

প্রশ্ন: আপনার দেশের একটা বড় অংশের দর্শক পালাবদলের সময় আপনার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান, অনেকে বলছেন আপনি নাকি দেশেই ছিলেন না?

শাকিব: আমার সামাজিকমাধ্যমের পাতাটা দেখলেই বোঝা যাবে বাংলাদেশে গণ্ডগোলের আগেই দুবাই সরকার থেকে আমাকে গোল্ডেন ভিসা ও রেসিডেন্সি দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল দুবাইয়ের কাজ সেরে ছুটি কাটানোর জন্য দুই সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রে থাকব। ওখানে আমার একটা বাসস্থানও রয়েছে। দুবাই গিয়ে প্রথম জানতে পারি দেশের এমন অবস্থা। তৎক্ষণাৎ আমি আমার সামাজিকমাধ্যমে দেশ ও মানুষের পক্ষে থাকার কথা জানিয়েছিলাম। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় একধিকবার মানুষের পক্ষে সমর্থন দিয়ে পোস্ট দিয়েছি। আগেও বলেছি— আমি অরাজনৈতিক মানুষ। সব সময় দেশ ও মানুষের পক্ষে এবং তাদের জন্য আমি সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: বড় তারকা হওয়ার বিড়ম্বনা কিছু আছে?

শাকিব: অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যেটা দেখি ভিত্তিহীন খবর। উদ্ভট সব জিনিস লেখা হয়। যার কোনো সত্যতা নেই, যা কখনো ঘটেনি সেগুলো অনেকে রঙ মিশিয়ে লিখে দেয়। এখন ভিউ নিয়ে শুধু প্রতিযোগিতা। সেই কারণে এসব হয়ে থাকে। এগুলো মাঝে মাঝে বিরক্তিকর লাগে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মানুষ কাছে আসার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন, ঘিরে ধরেন। অস্বস্তি হয় কখনো কখনো। তবে জানি, এটা আসলে ভালোবাসার কারণে হয়। এই ভালোবাসার কারণেই তো আমি।

প্রশ্ন: ‘বরবাদ’ আপনার পরবর্তী সিনেমা। কবে থেকে শুটিং শুরু করবেন?

শাকিব: অক্টোবর মাসেই মুম্বাইয়ে শুরু হচ্ছে ‘বরবাদ’-এর শুটিং। আগামী বছর সঠিক সময় দেখে মুক্তি পাবে। ‘বরবাদ’ অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে এই প্রত্যাশা করছি।

প্রশ্ন: শুনছি ‘তুফান ২’ নাকি আসতে চলছে?

শাকিব: প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এ বছর তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। ২০২৫-এ ‘তুফান ২’ আসছে না। তার আগে আমরা আলফা আই, চরকি, এসভিএফ মিলে অন্য একটি কাজ করতে পারি। চিত্রনাট্য খুব ভালো লেগেছে। আমি বরাবরই বুদ্ধিদীপ্ত ও নতুন গল্প খুঁজি, যেখানে নতুন করে নিজেকে তুলে ধরতে পারব। এতে নিজের মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জ আনা যায়।