ঢাকা ১১:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবাসন ব্যবসায় মন্দা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২২:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১০ বার

রাজধানীর একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মোল্লা, যিনি দুই বছর আগে অবসরে যান; তার স্ত্রী রেহানা খাতুনও প্রায় অবসরের দ্বারপ্রান্তে। তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছে। কিন্তু কিনবেন কি-না তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছেন এখন। শাহজাহান মোল্লা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের এই ডামাডোলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফ্ল্যাট কেনার সাহস পাচ্ছেন না। আমি আর আমার স্ত্রী মিলে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মতো সঞ্চয় করেছিÑ আমার পেনশন আর সব মিলিয়ে। কিন্তু এই টাকায় যেখানে খুঁজছি সেখানে নতুন ফ্ল্যাট পাচ্ছি না। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন ফি আরো প্রায় ১৫ শতাংশ। তাই ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হচ্ছে না। সব থেকে বড় কথা হলোÑ এই মুহূর্তে এই টাকায় ফ্ল্যাট কিনে ঝামেলায় পড়ি কি-না। এ জন্য কেনা হচ্ছে না।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার ভারতে পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতা-বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা, উচ্চ নিবন্ধন ফি, নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়া, ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধন না করাসহ বেশ কিছু কারণে দেশের আবাসন ব্যবসায় মন্দাবস্থা বা ঝিমিয়ে পড়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া জীবনযাত্রায় উচ্চ ব্যয়ের কারণে সঞ্চয় ভেঙে ফ্ল্যাট কেনায় এই মুহূর্তে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই। আবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফ্ল্যাট-প্লটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ‘কালো টাকা’ বিনিয়োগের যে সুযোগ রাখা হয়, সংস্কারমুখী অন্তর্বর্তী সরকার যে বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেনি। ফলে সব শ্রেণির ক্রেতার মধ্যে সংশয় কাজ করছে বলে উঠে এসেছে সংশ্লিষ্টদের কথায়। যদিও গত বছর বন্ধ থাকার পর এবার এ খাতকে চাঙ্গায় আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে আবাসন মেলা। সংশ্লিষ্টদের আশা, মেলার মাধ্যমে আবার চাঙ্গা হবে আবাসন খাত।

অবশ্য সঙ্কটের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টা মার্কেট ইনসাইটসের তথ্যমতে, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের আবাসনের বাজার ২ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের আবাসিক খাতের এই ব্যবসায় বাজারে আধিপত্য বিস্তার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৪ থেকে ২০২৮ সাল নাগাদ এই বাজার বার্ষিক ২ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে বাড়ার আভাস। ফলে ২০২৮ সালের মধ্যে দেশের আবাসন খাতের বাজার দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারে।

ক্রেতা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে
ধানমন্ডি এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা ছিল সিলেটের মধ্যবিত্ত দম্পতি চাঁদনী বেগম ও শামজিদ হোসেনের। কিস্তিতে কেনার শর্তে দিয়েছিলেন ডাউন পেমেন্টও। কিন্তু এখন তারা কিস্তি পরিশোধ না করে সেই ফ্ল্যাটটি বিক্রির চেষ্টা করছেন। তাদের মতে, আমরা ফ্ল্যাটের কিস্তিটা চালিয়ে যেতে চাইছিলাম কিন্তু সাহস পাচ্ছি না। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় কি-না অথবা রাজনৈতিক পরিস্থিতিই বা কেমন হয়; এ নিয়ে একটি শঙ্কা আছে। ফলে আমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি। এছাড়া দেশের একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে আমাদের কিছু জমানো অর্থ ছিল। এখন সেখান থেকে টাকা তুলতে পারছি না। ব্যাংকের লোকজন সময় চেয়েছে।

রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে থাকেন ব্যবসায়ী মিলন খান। পুরান ঢাকায় তার নিজের ব্যবসায় আছে। তিনি পূর্বাচলে একটি ফ্ল্যাট কেনার কথা পাকাপাকি করেছিলেন। তবে এখন তিনি ফ্ল্যাট না কিনে সেই টাকা নিজের অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। তার ভাষ্যও প্রায় একইরকম।

বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে
আবাসন ব্যবসায় মন্দার জন্য ত্রুটিপূর্ণ বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপকে দায়ী করছেন। নতুন প্রকল্প নিতে সমস্যা হওয়ায় তলানিতে এসে ঠেকেছে ফ্ল্যাট তৈরি। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর অস্থির সময়, অর্থনৈতিক মন্দা, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করার কথাই ঘুরেফিরে আসছে। দেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাবের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৫ হাজারের কাছাকাছি ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়েছে। এরপর ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সেটি নেমে বছরে গড়ে ১২ হাজারের কিছু বেশিতে ঠেকে। ২০১৭-২০ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজারে দাঁড়ায়। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি বছর ১৫ হাজারের কাছাকাছি ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়েছে। এরপর নির্মাণ উপকরণের মূল্য বেড়ে যায়, যার প্রভাব দেখা যায় ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রিতে। সঙ্গে শুরু হয় কোভিড মহামারি। ফের কমে যায় কেনাবেচা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি হয় ১০ হাজারের কাছাকাছি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংখ্যাটি ১০ হাজারের নিচে নেমে যায়। এ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা দিনকে দিন কমছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর আগে থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসায় কমেছে অন্তত ৫০ শতাংশ বলে দাবি রিহ্যাবের।

রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব ব্যবসায় আসলে ‘মন্দা’ যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাও শ্লথ। বেচাবিক্রি যে একেবারে হচ্ছে না, তা না। হচ্ছে; কিন্তু দামে কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে। আগে যা হতো, এখন তার চেয়ে ৫০ বা ৬০ শতাংশ কম হচ্ছে। তিনি বলেন, আবাসন প্রতিষ্ঠান ও জমির মালিকেরা বাড়ি নির্মাণ করছেন না। সে কারণে অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বাড়লেও জোগান কম, দামও বাড়তি। সঙ্কট কাটাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, সরকারের তরফ থেকে যে সমস্ত সেক্টরে বিনিয়োগে বাধা নেই বা এখানে বিনিয়োগ করলে বা ব্যাংকে টাকা রাখলে যে ঝুঁকি নেই; এ ধরনের প্রচার হলে হয়তো সেক্টরটা ঘুরে দাঁড়াবে। মানুষের মধ্যে সাহস সঞ্চার হবে। এটিই মেইন ইস্যু।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আবাসন ব্যবসায়ী বলেন, অনেকে বিনিয়োগ যে করবেন, সে আস্থা পাচ্ছেন না। টাকা যদি লক হয়ে যায়, তাহলে আমরা কোথায় যাব? এ দিকে অনেক ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট। ফলে দুটো মিলেই এই ব্যবসায় এখন ‘মন্দা’ বলে আমরা ফিডব্যাক পেয়েছি বলে জানান তিনি।

কালো টাকা বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে ধূম্রজাল
ক্ষমতার পালাবদলের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) সাদা করার সুযোগ গত ২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে বাতিল করে। তবে চলতি বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের জন্য দেয়া আরেকটি সুযোগের বিষয়ে এ প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি। সেই সুযোগ হলোÑ স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেস ও ভূমি আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত থাকলে তা নির্ধারিত হারে আয়কর দিয়ে বৈধ করার বিধান। সরকার কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় আইনের দিক থেকে এটি এখনো বহাল রয়েছে। তবে সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন না বিনিয়োগকারী বা ক্রেতারা। এ বিষয়ে এনবিআরের (করনীতি) সদস্য এ কে এম বদিউল আলম বলেছেন, সবশেষ বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, সেটি ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করেছে সরকার। কিন্তু জমি ও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের সুযোগ বাতিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

স্থবিরতা কাটাতে ড্যাপ বাতিল চায় রিহ্যাব
আবাসন ব্যবসায়ে বিশেষ করে প্লট-ফ্ল্যাটের বাজারে সঙ্কটের কারণ হিসেবে ঘুরেফিরে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ বাতিলের কথা বলেছেন এই খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের দাবি, বর্তমানে রাজউকের এই ড্যাপ বৈষম্যমূলক। এটি বাতিল করলে বিল্ডিংয়ের প্ল্যান পাস বাড়বে। সেই সাথে বিল্ডিংয়ের আয়তন (ইউনিট-ফ্ল্যাট) বাড়বে, যার প্রভাবে বাজার সচল হতে শুরু করবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫ অনুসারে ঢাকা শহরের বেশির ভাগ এলাকায় আগে ভবনের যে আয়তন পাওয়া যেত, এখন তার প্রায় ৬০ শতাংশ পাওয়া যায়। ফলে ডেভেলপাররা নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতে পারছেন না। যারা ব্যক্তি উদ্যোগে বাড়ি করেন, তারাও প্ল্যান পাস করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ অনেক এলাকায় আগে যেখানে আটতলা ভবন তৈরি করতে পারতেন, সেখানে পারবেন চার থেকে পাঁচতলা। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ ও মাস্টার প্ল্যান (ড্যাপ)-২০১০ বিধি অনুসারে ভবনের নকশা অনুমোদনের দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।

নিবন্ধন ব্যয় আর নির্মাণসামগ্রীর দামের আধিক্য
ফ্ল্যাট কেনাবেচায় ভাটার কারণ হিসেবে আরো কিছু বিষয় সামনে এনেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, নতুন ও পুরোনো ফ্ল্যাটের নিবন্ধনের হার একই হওয়ায় বাজার বড় হচ্ছে না। একই সঙ্গে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ও শ্রমিক-কারিগরের ব্যয় বাড়ার বিষয়টিও ফ্ল্যাটের দামে প্রভাব রেখেছে। সঙ্গত কারণেই বেচাকেনাতেও প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে নীতি সহায়তা চেয়ে সরকারের কাছে দাবি জানায়। উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বাজার মূল্যের অসঙ্গতিতে ব্যবসায় কমেছে বহু উদ্যেক্তার। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ইস্পাত উৎপাদনে খরচ বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। পাশাপাশি গ্যাসের দরও বেড়েছে। ফলে প্রতি টন রডে দুই হাজার টাকা দাম বেড়েছে। একই অবস্থা সিমেন্ট, বালু, ইট-পাথরের ক্ষেত্রেও।

এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, এই ব্যবসার সাথে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ব্যবসায় জড়িয়ে আছে। ফলে ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ বা বাজারে সেগুলোরও প্রভাব আছে। যেমনÑ নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে, লেবার কস্টও বেড়েছে, সব মিলিয়ে এই ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে।
নিবন্ধন ফি কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের মতো ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি যদি ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়, তাহলে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে সব মিলিয়ে নিবন্ধন ফি ও অন্যান্য খরচ মিলে এটি ১৮ শতাংশে যায়। এটিকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ এলিভেটর এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জল বলেন, আবাসন ব্যবসায় মন্দার প্রভাব পড়েছে লিফট ব্যবসায়। বর্তমানে এলিভেটর, এসকেলেটরস ও লিফট ইন্সটলেশন একেবারে কমে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে আবাসন খাতকে আবারো চাঙ্গা করতে আগামী সোমবার থেকে পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা আয়োজন করেছে রিহ্যাব। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এবারের মেলায় ২২০টি স্টল থাকবে। রিহ্যাব সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস বলেন, ড্যাপের কারণে ফ্ল্যাটের দাম ইতোমধ্যে বেড়েছে। সামনে হয়তো আরো বাড়বে। গত বছর নির্বাচনের কারণে মেলা হয়নি। এক বছর পর মেলা হওয়ায় এবার লোকসমাগম বেশি হবে বলে তার বিশ্বাস। মেলায় অ্যাপার্টমেন্টের পাশাপাশি গৃহঋণ ও বাড়ি নির্মাণের প্রয়োজনীয় উপকরণ যাচাই করতে পারবেন ক্রেতারা। একই সঙ্গে মেলায় বুকিং দিলেই মিলবে নানা অঙ্কের ছাড় ও উপহার। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, এবারের মেলায় এক হাজার কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট ও প্লট বুকিং হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আবাসন ব্যবসায় মন্দা

আপডেট টাইম : ১১:২২:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজধানীর একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মোল্লা, যিনি দুই বছর আগে অবসরে যান; তার স্ত্রী রেহানা খাতুনও প্রায় অবসরের দ্বারপ্রান্তে। তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছে। কিন্তু কিনবেন কি-না তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছেন এখন। শাহজাহান মোল্লা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের এই ডামাডোলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফ্ল্যাট কেনার সাহস পাচ্ছেন না। আমি আর আমার স্ত্রী মিলে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মতো সঞ্চয় করেছিÑ আমার পেনশন আর সব মিলিয়ে। কিন্তু এই টাকায় যেখানে খুঁজছি সেখানে নতুন ফ্ল্যাট পাচ্ছি না। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন ফি আরো প্রায় ১৫ শতাংশ। তাই ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হচ্ছে না। সব থেকে বড় কথা হলোÑ এই মুহূর্তে এই টাকায় ফ্ল্যাট কিনে ঝামেলায় পড়ি কি-না। এ জন্য কেনা হচ্ছে না।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার ভারতে পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতা-বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা, উচ্চ নিবন্ধন ফি, নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়া, ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধন না করাসহ বেশ কিছু কারণে দেশের আবাসন ব্যবসায় মন্দাবস্থা বা ঝিমিয়ে পড়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া জীবনযাত্রায় উচ্চ ব্যয়ের কারণে সঞ্চয় ভেঙে ফ্ল্যাট কেনায় এই মুহূর্তে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই। আবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফ্ল্যাট-প্লটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ‘কালো টাকা’ বিনিয়োগের যে সুযোগ রাখা হয়, সংস্কারমুখী অন্তর্বর্তী সরকার যে বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেনি। ফলে সব শ্রেণির ক্রেতার মধ্যে সংশয় কাজ করছে বলে উঠে এসেছে সংশ্লিষ্টদের কথায়। যদিও গত বছর বন্ধ থাকার পর এবার এ খাতকে চাঙ্গায় আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে আবাসন মেলা। সংশ্লিষ্টদের আশা, মেলার মাধ্যমে আবার চাঙ্গা হবে আবাসন খাত।

অবশ্য সঙ্কটের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টা মার্কেট ইনসাইটসের তথ্যমতে, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের আবাসনের বাজার ২ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের আবাসিক খাতের এই ব্যবসায় বাজারে আধিপত্য বিস্তার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৪ থেকে ২০২৮ সাল নাগাদ এই বাজার বার্ষিক ২ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে বাড়ার আভাস। ফলে ২০২৮ সালের মধ্যে দেশের আবাসন খাতের বাজার দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারে।

ক্রেতা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে
ধানমন্ডি এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা ছিল সিলেটের মধ্যবিত্ত দম্পতি চাঁদনী বেগম ও শামজিদ হোসেনের। কিস্তিতে কেনার শর্তে দিয়েছিলেন ডাউন পেমেন্টও। কিন্তু এখন তারা কিস্তি পরিশোধ না করে সেই ফ্ল্যাটটি বিক্রির চেষ্টা করছেন। তাদের মতে, আমরা ফ্ল্যাটের কিস্তিটা চালিয়ে যেতে চাইছিলাম কিন্তু সাহস পাচ্ছি না। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় কি-না অথবা রাজনৈতিক পরিস্থিতিই বা কেমন হয়; এ নিয়ে একটি শঙ্কা আছে। ফলে আমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি। এছাড়া দেশের একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে আমাদের কিছু জমানো অর্থ ছিল। এখন সেখান থেকে টাকা তুলতে পারছি না। ব্যাংকের লোকজন সময় চেয়েছে।

রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে থাকেন ব্যবসায়ী মিলন খান। পুরান ঢাকায় তার নিজের ব্যবসায় আছে। তিনি পূর্বাচলে একটি ফ্ল্যাট কেনার কথা পাকাপাকি করেছিলেন। তবে এখন তিনি ফ্ল্যাট না কিনে সেই টাকা নিজের অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। তার ভাষ্যও প্রায় একইরকম।

বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে
আবাসন ব্যবসায় মন্দার জন্য ত্রুটিপূর্ণ বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপকে দায়ী করছেন। নতুন প্রকল্প নিতে সমস্যা হওয়ায় তলানিতে এসে ঠেকেছে ফ্ল্যাট তৈরি। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর অস্থির সময়, অর্থনৈতিক মন্দা, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করার কথাই ঘুরেফিরে আসছে। দেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাবের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৫ হাজারের কাছাকাছি ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়েছে। এরপর ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সেটি নেমে বছরে গড়ে ১২ হাজারের কিছু বেশিতে ঠেকে। ২০১৭-২০ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজারে দাঁড়ায়। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি বছর ১৫ হাজারের কাছাকাছি ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়েছে। এরপর নির্মাণ উপকরণের মূল্য বেড়ে যায়, যার প্রভাব দেখা যায় ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রিতে। সঙ্গে শুরু হয় কোভিড মহামারি। ফের কমে যায় কেনাবেচা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি হয় ১০ হাজারের কাছাকাছি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংখ্যাটি ১০ হাজারের নিচে নেমে যায়। এ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা দিনকে দিন কমছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর আগে থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসায় কমেছে অন্তত ৫০ শতাংশ বলে দাবি রিহ্যাবের।

রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব ব্যবসায় আসলে ‘মন্দা’ যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাও শ্লথ। বেচাবিক্রি যে একেবারে হচ্ছে না, তা না। হচ্ছে; কিন্তু দামে কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে। আগে যা হতো, এখন তার চেয়ে ৫০ বা ৬০ শতাংশ কম হচ্ছে। তিনি বলেন, আবাসন প্রতিষ্ঠান ও জমির মালিকেরা বাড়ি নির্মাণ করছেন না। সে কারণে অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বাড়লেও জোগান কম, দামও বাড়তি। সঙ্কট কাটাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, সরকারের তরফ থেকে যে সমস্ত সেক্টরে বিনিয়োগে বাধা নেই বা এখানে বিনিয়োগ করলে বা ব্যাংকে টাকা রাখলে যে ঝুঁকি নেই; এ ধরনের প্রচার হলে হয়তো সেক্টরটা ঘুরে দাঁড়াবে। মানুষের মধ্যে সাহস সঞ্চার হবে। এটিই মেইন ইস্যু।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আবাসন ব্যবসায়ী বলেন, অনেকে বিনিয়োগ যে করবেন, সে আস্থা পাচ্ছেন না। টাকা যদি লক হয়ে যায়, তাহলে আমরা কোথায় যাব? এ দিকে অনেক ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট। ফলে দুটো মিলেই এই ব্যবসায় এখন ‘মন্দা’ বলে আমরা ফিডব্যাক পেয়েছি বলে জানান তিনি।

কালো টাকা বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে ধূম্রজাল
ক্ষমতার পালাবদলের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) সাদা করার সুযোগ গত ২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে বাতিল করে। তবে চলতি বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের জন্য দেয়া আরেকটি সুযোগের বিষয়ে এ প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি। সেই সুযোগ হলোÑ স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেস ও ভূমি আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত থাকলে তা নির্ধারিত হারে আয়কর দিয়ে বৈধ করার বিধান। সরকার কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় আইনের দিক থেকে এটি এখনো বহাল রয়েছে। তবে সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন না বিনিয়োগকারী বা ক্রেতারা। এ বিষয়ে এনবিআরের (করনীতি) সদস্য এ কে এম বদিউল আলম বলেছেন, সবশেষ বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, সেটি ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করেছে সরকার। কিন্তু জমি ও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের সুযোগ বাতিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

স্থবিরতা কাটাতে ড্যাপ বাতিল চায় রিহ্যাব
আবাসন ব্যবসায়ে বিশেষ করে প্লট-ফ্ল্যাটের বাজারে সঙ্কটের কারণ হিসেবে ঘুরেফিরে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ বাতিলের কথা বলেছেন এই খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের দাবি, বর্তমানে রাজউকের এই ড্যাপ বৈষম্যমূলক। এটি বাতিল করলে বিল্ডিংয়ের প্ল্যান পাস বাড়বে। সেই সাথে বিল্ডিংয়ের আয়তন (ইউনিট-ফ্ল্যাট) বাড়বে, যার প্রভাবে বাজার সচল হতে শুরু করবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫ অনুসারে ঢাকা শহরের বেশির ভাগ এলাকায় আগে ভবনের যে আয়তন পাওয়া যেত, এখন তার প্রায় ৬০ শতাংশ পাওয়া যায়। ফলে ডেভেলপাররা নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতে পারছেন না। যারা ব্যক্তি উদ্যোগে বাড়ি করেন, তারাও প্ল্যান পাস করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ অনেক এলাকায় আগে যেখানে আটতলা ভবন তৈরি করতে পারতেন, সেখানে পারবেন চার থেকে পাঁচতলা। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ ও মাস্টার প্ল্যান (ড্যাপ)-২০১০ বিধি অনুসারে ভবনের নকশা অনুমোদনের দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।

নিবন্ধন ব্যয় আর নির্মাণসামগ্রীর দামের আধিক্য
ফ্ল্যাট কেনাবেচায় ভাটার কারণ হিসেবে আরো কিছু বিষয় সামনে এনেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, নতুন ও পুরোনো ফ্ল্যাটের নিবন্ধনের হার একই হওয়ায় বাজার বড় হচ্ছে না। একই সঙ্গে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ও শ্রমিক-কারিগরের ব্যয় বাড়ার বিষয়টিও ফ্ল্যাটের দামে প্রভাব রেখেছে। সঙ্গত কারণেই বেচাকেনাতেও প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে নীতি সহায়তা চেয়ে সরকারের কাছে দাবি জানায়। উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বাজার মূল্যের অসঙ্গতিতে ব্যবসায় কমেছে বহু উদ্যেক্তার। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ইস্পাত উৎপাদনে খরচ বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। পাশাপাশি গ্যাসের দরও বেড়েছে। ফলে প্রতি টন রডে দুই হাজার টাকা দাম বেড়েছে। একই অবস্থা সিমেন্ট, বালু, ইট-পাথরের ক্ষেত্রেও।

এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, এই ব্যবসার সাথে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ব্যবসায় জড়িয়ে আছে। ফলে ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ বা বাজারে সেগুলোরও প্রভাব আছে। যেমনÑ নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে, লেবার কস্টও বেড়েছে, সব মিলিয়ে এই ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে।
নিবন্ধন ফি কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের মতো ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি যদি ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়, তাহলে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে সব মিলিয়ে নিবন্ধন ফি ও অন্যান্য খরচ মিলে এটি ১৮ শতাংশে যায়। এটিকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ এলিভেটর এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জল বলেন, আবাসন ব্যবসায় মন্দার প্রভাব পড়েছে লিফট ব্যবসায়। বর্তমানে এলিভেটর, এসকেলেটরস ও লিফট ইন্সটলেশন একেবারে কমে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে আবাসন খাতকে আবারো চাঙ্গা করতে আগামী সোমবার থেকে পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা আয়োজন করেছে রিহ্যাব। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এবারের মেলায় ২২০টি স্টল থাকবে। রিহ্যাব সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস বলেন, ড্যাপের কারণে ফ্ল্যাটের দাম ইতোমধ্যে বেড়েছে। সামনে হয়তো আরো বাড়বে। গত বছর নির্বাচনের কারণে মেলা হয়নি। এক বছর পর মেলা হওয়ায় এবার লোকসমাগম বেশি হবে বলে তার বিশ্বাস। মেলায় অ্যাপার্টমেন্টের পাশাপাশি গৃহঋণ ও বাড়ি নির্মাণের প্রয়োজনীয় উপকরণ যাচাই করতে পারবেন ক্রেতারা। একই সঙ্গে মেলায় বুকিং দিলেই মিলবে নানা অঙ্কের ছাড় ও উপহার। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, এবারের মেলায় এক হাজার কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট ও প্লট বুকিং হবে।