ঢাকা ১১:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৫ বছর কেন নিষিদ্ধ ছিলাম, প্রশ্ন ফেরদৌস আরার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৫:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • ৩৭ বার

বিনোদন জগতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। যিনি গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে গান গাইতে পারেননি। অংশ নিতে পারেননি কোনো অনুষ্ঠানে। ভিন্নমতের হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে অনেক শিল্পীই সেই কালো তালিকাভুক্ত ছিলেন।

রাষ্ট্রীয় বেতার ও টিভি চ্যানেলে কোন কোন শিল্পী পরিবেশন করতে পারবেন, আর কে কে পারবেন না— তা ছিল একটি অঘোষিত তালিকা। এমনকি একটি ‘কালো তালিকা’ও ছিল। সেই কালো তালিকায় নাম ছিল এ জনপ্রিয় নজরুলসংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরার। এমনটিই জানিয়েছেন এ শিল্পী।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও ফেরদৌস আরা বিটিভি ও বেতারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কদিন আগে তার গাওয়া একটি আধুনিক গান প্রচার করা হয়েছে বিটিভিতে। মারজুক রাসেলের লেখা ‘আমি আমার মতোই আছি/তুমি তোমার মতো থেকো’ গানটি প্রচারের পর অনেকেই গানটির প্রশংসা করেছেন।

এতদিন পর রাষ্ট্রীয় মাধ্যমে গান প্রচার হওয়ায় কেমন লাগছে? —এমন প্রশ্নে ফেরদৌস আরা বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারও আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান বিটিভিতে গাইতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। শিল্পী তৈরিতে এ প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা বর্ণনাতীত। কিন্তু কী কারণে আমাকে দীর্ঘদিন কোনো অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি জানি না। শুনেছি অনেক শিল্পী রাজনীতি করার কারণে বিটিভি-বেতারে নিষিদ্ধ ছিলেন। কিন্তু আমি তো রাজনীতি করি না। আমাকে কেন এত বছর বঞ্চিত করা হয়েছে?

বিএনপি সরকারের আমলে সচিব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন ফেরদৌস আরার স্বামী ড. রফিকুল মুহাম্মদ। বিগত সরকারের অনুসারীরা ধরে নিয়েছিলেন— রাজনৈতিকভাবে তারা বিএনপিপন্থি ও দলটির অনুগত। এ কারণেও ফেরদৌস আরাকে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমে গান করতে দেওয়া হতো না বলে ধারণা অনেকের।

আক্ষেপ করে এই শিল্পী বলেন, আমার স্বামীর চাকরির কারণে যদি এমনটি হয়ে থাকে, সেটি কি কোনো যুক্তির কথা? আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করতেন না। এ কোন দেশে বাস করি আমরা? শিল্পী তো নির্দিষ্ট কোনো দলের হতে পারে না। শিল্পী সবার— সব মানুষের জন্য গান করে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ পেতে শুরু করেছেন ফেরদৌস আরা। সম্প্রতি নজরুল ইনস্টিটিউটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গত সপ্তাহে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাদেশ বেতারের একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে নজরুলসংগীতবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।

উল্লেখ্য, সব ধরনের গান গাইলেও নজরুলসংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন ফেরদৌস আরা। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে সংগীতচর্চা করছেন এ শিল্পী। উজবেকিস্তানে জাতিসংঘ আয়োজিত লোকসংগীত উৎসবে নজরুলসংগীত গেয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলেন তিনি।

ফেরদৌস আরা বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা, নজরুল ইনস্টিটিউটে নজরুলসংগীতের প্রশিক্ষক, সংগীত অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, লেখালেখি, প্লে-ব্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। সঠিকভাবে নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সংগীতচর্চার জন্য এ শিল্পী ২০০০ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে গড়ে তোলেন সংগীত প্রতিষ্ঠান সুরসপ্তক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

১৫ বছর কেন নিষিদ্ধ ছিলাম, প্রশ্ন ফেরদৌস আরার

আপডেট টাইম : ০৬:২৫:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

বিনোদন জগতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। যিনি গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে গান গাইতে পারেননি। অংশ নিতে পারেননি কোনো অনুষ্ঠানে। ভিন্নমতের হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে অনেক শিল্পীই সেই কালো তালিকাভুক্ত ছিলেন।

রাষ্ট্রীয় বেতার ও টিভি চ্যানেলে কোন কোন শিল্পী পরিবেশন করতে পারবেন, আর কে কে পারবেন না— তা ছিল একটি অঘোষিত তালিকা। এমনকি একটি ‘কালো তালিকা’ও ছিল। সেই কালো তালিকায় নাম ছিল এ জনপ্রিয় নজরুলসংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরার। এমনটিই জানিয়েছেন এ শিল্পী।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও ফেরদৌস আরা বিটিভি ও বেতারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কদিন আগে তার গাওয়া একটি আধুনিক গান প্রচার করা হয়েছে বিটিভিতে। মারজুক রাসেলের লেখা ‘আমি আমার মতোই আছি/তুমি তোমার মতো থেকো’ গানটি প্রচারের পর অনেকেই গানটির প্রশংসা করেছেন।

এতদিন পর রাষ্ট্রীয় মাধ্যমে গান প্রচার হওয়ায় কেমন লাগছে? —এমন প্রশ্নে ফেরদৌস আরা বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারও আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান বিটিভিতে গাইতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। শিল্পী তৈরিতে এ প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা বর্ণনাতীত। কিন্তু কী কারণে আমাকে দীর্ঘদিন কোনো অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি জানি না। শুনেছি অনেক শিল্পী রাজনীতি করার কারণে বিটিভি-বেতারে নিষিদ্ধ ছিলেন। কিন্তু আমি তো রাজনীতি করি না। আমাকে কেন এত বছর বঞ্চিত করা হয়েছে?

বিএনপি সরকারের আমলে সচিব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন ফেরদৌস আরার স্বামী ড. রফিকুল মুহাম্মদ। বিগত সরকারের অনুসারীরা ধরে নিয়েছিলেন— রাজনৈতিকভাবে তারা বিএনপিপন্থি ও দলটির অনুগত। এ কারণেও ফেরদৌস আরাকে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমে গান করতে দেওয়া হতো না বলে ধারণা অনেকের।

আক্ষেপ করে এই শিল্পী বলেন, আমার স্বামীর চাকরির কারণে যদি এমনটি হয়ে থাকে, সেটি কি কোনো যুক্তির কথা? আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করতেন না। এ কোন দেশে বাস করি আমরা? শিল্পী তো নির্দিষ্ট কোনো দলের হতে পারে না। শিল্পী সবার— সব মানুষের জন্য গান করে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ পেতে শুরু করেছেন ফেরদৌস আরা। সম্প্রতি নজরুল ইনস্টিটিউটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গত সপ্তাহে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাদেশ বেতারের একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে নজরুলসংগীতবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।

উল্লেখ্য, সব ধরনের গান গাইলেও নজরুলসংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন ফেরদৌস আরা। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে সংগীতচর্চা করছেন এ শিল্পী। উজবেকিস্তানে জাতিসংঘ আয়োজিত লোকসংগীত উৎসবে নজরুলসংগীত গেয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলেন তিনি।

ফেরদৌস আরা বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা, নজরুল ইনস্টিটিউটে নজরুলসংগীতের প্রশিক্ষক, সংগীত অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, লেখালেখি, প্লে-ব্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। সঠিকভাবে নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সংগীতচর্চার জন্য এ শিল্পী ২০০০ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে গড়ে তোলেন সংগীত প্রতিষ্ঠান সুরসপ্তক।