ঢাকা ১২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কে হচ্ছেন হিজবুল্লাহর নতুন নেতা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ২৫ বার
ইসরায়েলের হামলায় লেবাননের হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহর নিহত হওয়ার পর এখন গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব কার হাতে উঠবে—সে প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। এর মধ্যে দুই নেতা হাশেম সাফিয়েদ্দিন ও নাইম কাসেমের নাম আলোচনায় এসেছে।

হাশেম সাফিয়েদ্দিন 

হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান হাশেম সাফিয়েদ্দিন পরবর্তী নেতা হতে যাচ্ছেন বলে জোরালো গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সাফিয়েদ্দিন সম্পর্কে নাসরাল্লাহর ভাইও হন।

১৯৬৪ সালে দক্ষিণ লেবাননে টায়ার জেলার দেইর কানুন এন নাহার শহরে এক সম্ভ্রান্ত শিয়া পরিবারে জন্ম সাফিয়েদ্দিনের। তিনি মাথায় সব সময় কালো পাগড়ি পরিধান করেন। ইরাকের নাজাফ ও ইরানের কোম শহরে নাসরাল্লাহর সঙ্গেই তিনি শিয়াদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছেন। নাসরাল্লাহর সঙ্গেই তিনি হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে গোষ্ঠীটিতে যোগ দেন।
নির্বাহী পরিষদের প্রধান হিসেবে সাফিয়েদ্দিন হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক বিষয়গুলো দেখভাল করেন। হিজবুল্লাহর সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী জিহাদ কাউন্সিলেরও সদস্য তিনি। সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর ছেলের সঙ্গে ইরানের কাসেম সোলাইমানির মেয়ের বিয়ে হয়েছে।ইরানের শীর্ষ জেনারেল সোলাইমানি ২০২০ সালে মার্কিন হামলায় নিহত হন। ২০১৭ সালে সাফিয়েদ্দিনকে সন্ত্রাসীর তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গত জুনে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বদলা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। সাফিয়েদ্দিন তখন ইসরায়েলকে সাবধান করে বলেছিলেন, শত্রুকে কান্না ও বিলাপের জন্য প্রস্তুত হতে বল।

নাইম কাসেম 

হিজবুল্লাহর উপমহাসচিব নাইম কাসেম।

তাঁকে প্রায় সময়ই হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে ডাকা হয়। দক্ষিণ লেবাননের শিয়া অধ্যুষিত কাফর কিলা গ্রামে জন্ম তাঁর। গ্রামটি বহুবার ইসরায়েলি আক্রমণের শিকার হয়েছে। শিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কাসেমের জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে তিনি ইমাম মুসা আল-সদরের হারাকাত আল-মাহরুমিন আন্দোলনে যোগ দেন, যা পরবর্তী সময়ে শিয়া সংগঠন আমল আন্দোলনে পরিণত হয়।পরবর্তী সময়ে আমল আন্দোলন ছেড়ে ১৯৮০-এর দশকে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার কাজে লেগে পড়েন। তিনি হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় নেতাদের একজন ছিলেন। তিনি হিজবুল্লাহর শিক্ষাবিষয়ক নেটওয়ার্ক দেখভাল করেন এবং লেবাননের পার্লামেন্টে গোষ্ঠীর কার্যক্রম দেখাশোনায় জড়িত রয়েছেন। তিনি গোষ্ঠীটির শুরা পরিষদেরও সদস্য। ২০০৫ সালে তাঁর লেখা হিজবুল্লাহ, দ্য স্টোরি ফ্রম উইদিন বইটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নাসরাল্লাহ হত্যার পর নতুন নেতার নাম আপাতত ঘোষণা করবে না হিজবুল্লাহ। কেননা ইসরায়েল এরই মধ্যে গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতাদের হত্যা করছে। নতুন নেতার নাম প্রকাশ হলে তিনি সহজেই ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি রাদওয়ান ফোর্সের এক কমান্ডার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। বাহিনীর নেতা নিহতের কয়েক দিন পরই ওই কমান্ডার সেটির প্রধান হয়েছিলেন। এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে হিজবুল্লাহ এখন তাদের শীর্ষ পদটিতে কে আসীন হবেন তা নাও জানাতে পারে। হিজবুল্লাহ হয়তো নেতা বাছাইয়ের চেয়ে ইসরায়েলের গভীরে তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতির বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কে হচ্ছেন হিজবুল্লাহর নতুন নেতা

আপডেট টাইম : ১০:৫৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ইসরায়েলের হামলায় লেবাননের হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহর নিহত হওয়ার পর এখন গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব কার হাতে উঠবে—সে প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। এর মধ্যে দুই নেতা হাশেম সাফিয়েদ্দিন ও নাইম কাসেমের নাম আলোচনায় এসেছে।

হাশেম সাফিয়েদ্দিন 

হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান হাশেম সাফিয়েদ্দিন পরবর্তী নেতা হতে যাচ্ছেন বলে জোরালো গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সাফিয়েদ্দিন সম্পর্কে নাসরাল্লাহর ভাইও হন।

১৯৬৪ সালে দক্ষিণ লেবাননে টায়ার জেলার দেইর কানুন এন নাহার শহরে এক সম্ভ্রান্ত শিয়া পরিবারে জন্ম সাফিয়েদ্দিনের। তিনি মাথায় সব সময় কালো পাগড়ি পরিধান করেন। ইরাকের নাজাফ ও ইরানের কোম শহরে নাসরাল্লাহর সঙ্গেই তিনি শিয়াদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছেন। নাসরাল্লাহর সঙ্গেই তিনি হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে গোষ্ঠীটিতে যোগ দেন।
নির্বাহী পরিষদের প্রধান হিসেবে সাফিয়েদ্দিন হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক বিষয়গুলো দেখভাল করেন। হিজবুল্লাহর সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী জিহাদ কাউন্সিলেরও সদস্য তিনি। সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর ছেলের সঙ্গে ইরানের কাসেম সোলাইমানির মেয়ের বিয়ে হয়েছে।ইরানের শীর্ষ জেনারেল সোলাইমানি ২০২০ সালে মার্কিন হামলায় নিহত হন। ২০১৭ সালে সাফিয়েদ্দিনকে সন্ত্রাসীর তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গত জুনে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বদলা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। সাফিয়েদ্দিন তখন ইসরায়েলকে সাবধান করে বলেছিলেন, শত্রুকে কান্না ও বিলাপের জন্য প্রস্তুত হতে বল।

নাইম কাসেম 

হিজবুল্লাহর উপমহাসচিব নাইম কাসেম।

তাঁকে প্রায় সময়ই হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে ডাকা হয়। দক্ষিণ লেবাননের শিয়া অধ্যুষিত কাফর কিলা গ্রামে জন্ম তাঁর। গ্রামটি বহুবার ইসরায়েলি আক্রমণের শিকার হয়েছে। শিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কাসেমের জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে তিনি ইমাম মুসা আল-সদরের হারাকাত আল-মাহরুমিন আন্দোলনে যোগ দেন, যা পরবর্তী সময়ে শিয়া সংগঠন আমল আন্দোলনে পরিণত হয়।পরবর্তী সময়ে আমল আন্দোলন ছেড়ে ১৯৮০-এর দশকে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার কাজে লেগে পড়েন। তিনি হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় নেতাদের একজন ছিলেন। তিনি হিজবুল্লাহর শিক্ষাবিষয়ক নেটওয়ার্ক দেখভাল করেন এবং লেবাননের পার্লামেন্টে গোষ্ঠীর কার্যক্রম দেখাশোনায় জড়িত রয়েছেন। তিনি গোষ্ঠীটির শুরা পরিষদেরও সদস্য। ২০০৫ সালে তাঁর লেখা হিজবুল্লাহ, দ্য স্টোরি ফ্রম উইদিন বইটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নাসরাল্লাহ হত্যার পর নতুন নেতার নাম আপাতত ঘোষণা করবে না হিজবুল্লাহ। কেননা ইসরায়েল এরই মধ্যে গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতাদের হত্যা করছে। নতুন নেতার নাম প্রকাশ হলে তিনি সহজেই ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি রাদওয়ান ফোর্সের এক কমান্ডার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। বাহিনীর নেতা নিহতের কয়েক দিন পরই ওই কমান্ডার সেটির প্রধান হয়েছিলেন। এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে হিজবুল্লাহ এখন তাদের শীর্ষ পদটিতে কে আসীন হবেন তা নাও জানাতে পারে। হিজবুল্লাহ হয়তো নেতা বাছাইয়ের চেয়ে ইসরায়েলের গভীরে তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতির বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে