ঢাকা ০৭:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অল্প আমলে বেশি প্রতিদান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৫:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ২৯ বার
মুসলিম ও আহলে কিতাবের পার্থক্য বর্ণনা করে নবী করিম (সা.) একটি উপমা পেশ করে বলেন, তোমরা এবং উভয় আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান)-এর উদাহরণ হলো এমন এক ব্যক্তির মতো, যে কয়েকজন মজদুরকে কাজে নিয়োগ করে বলল, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক কিরাত (আরবের ওজন ও মাপের একক বিশেষ) পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমার কাজ কে করবে? তখন ইহুদি কাজ করে দিল। তারপর সে ব্যক্তি বলল, কে আছ যে দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত এক কিরাতের বিনিময়ে আমার কাজ করে দেবে? তখন খ্রিস্টান কাজ করে দিল। তারপর সে ব্যক্তি বলল, কে আছ যে আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুই কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করবে? আর তোমরাই হলে (মুসলমান) তারা। (যারা অল্প পরিশ্রমে বেশি পারিশ্রমিক লাভ করল) তাতে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা রাগান্বিত হলো

তারা বলল, এটা কেমন কথা, আমরা কাজ করলাম বেশি, অথচ পারিশ্রমিক পেলাম কম। তখন সে ব্যক্তি (নিয়োগকর্তা) বলল, আমি তোমাদের প্রাপ্য কম দিয়েছি? তারা বলল, না। তখন সে বলল, সেটা তো আমার অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা দান করি। (বুখারি, হাদিস : ২২৬৮)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে হাজার আসকলানি (রহ.) ফাতহুল বারিতে হাদিসে বর্ণিত শব্দ ‘মাছালুকুম’-এর সঙ্গে ‘মাআ নাবিউকুম’ উহ্য ধরে উল্লেখ করেন, নিজ নিজ নবীর সঙ্গে তোমাদের উদাহরণ হলো এমন ব্যক্তির মতো, যাকে কোনো কিছুর বিনিময়ে কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে।

অতএব, উল্লিখিত উদাহরণে উম্মতের আমলের সঙ্গে তাদের নবীদের আমল এবং উম্মতের প্রতিদানের সঙ্গে নবীদের প্রতিদানও যুক্ত হবে। এই উদাহরণ দ্বারা উম্মতে মুহাম্মদির ওপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ দান ও অনুগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। এই উম্মতের আমল কম হবে, তবে প্রতিদান হবে বেশি।

এখানে উপরোক্ত বর্ণনা থেকে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো—

১. অন্য সব দ্বিনের ওপর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত।

একজন নিষ্ঠাবান উম্মতে মুহাম্মদিকে তার অল্প আমলে প্রতিদানস্বরূপ এই পরিমাণ সওয়াব দেওয়া হবে, যা পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতকে দেওয়া হয়নি। এ কথা রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে ব্যক্ত করেছেন—‘এটা আল্লাহর মেহেরবানি। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।’তবে আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর ঈমান আনবে এবং তাঁকে সত্যায়ন করবে তার প্রতিদান দিগুণ করে দেওয়া হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোরআনের আগে আমি যাদের কিতাব দিয়েছি, তারা এতে বিশ্বাস করে যখন তাদের কাছে এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম।

এটা আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্য। আমরা এর আগেও আজ্ঞাবহ ছিলাম। তারা দুইবার পুরস্কৃত হবে তাদের সবরের কারণে। তারা মন্দের জবাবে ভালো করে এবং আমি তাদের যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫২-৫৪)আর হাদিসে এসেছে, আবু বুরদা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের লোকের জন্য দুটি পুণ্য রয়েছে—

(১) আহলে কিতাব—যে ব্যক্তি তার নবীর ওপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপরও ঈমান এনেছে।

(২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক আদায় করে এবং তার মালিকের হকও (আদায় করে)।

(৩) যার দাসী ছিল, যার সঙ্গে সে মিলিত হতো। তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালোভাবে দ্বিনি ইলম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আজাদ করে বিয়ে করেছে। তার জন্যও দুটি পুণ্য রয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৯৭)

আর এই পুণ্য তখনই লাভ করবে, যখন তারা তাদের কাছে প্রেরিত নবী-রাসুলের পাশাপাশি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ঈমান আনবে, অন্যথায় সর্বসম্মতিক্রমে কাফির সাব্যস্ত হবে। যদিও নিজ নিজ নবীর ওপর ঈমান রাখে।

২. উম্মতে মুহাম্মদির শুরু থেকে শেষাংশ পর্যন্ত পুরো জাতির শ্রেষ্ঠত্ব লাভ—আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেন, বিশুদ্ধতম অভিমত হলো, এই আয়াত সব উম্মতের ওপর প্রযোজ্য। প্রত্যেক যুগের উম্মত তাদের যুগ হিসেবে অন্যান্য উম্মত থেকে শ্রেষ্ঠ। আর সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ হলো যে অংশে নবী করিম (সা.) প্রেরিত হয়েছেন। অতঃপর যথাক্রমে তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈনদের যুগ। যেমন অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৪৩)

উপরোক্ত আলোচনার পর ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, উম্মতে মুহাম্মদি এই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হবে, তারা আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও সবচেয়ে সম্মানিত রাসুলের অনুসারী হওয়ার কারণে। কেননা তাঁকে আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণ দ্বিন ও শরিয়ত দিয়ে পাঠিয়েছেন, যা এর আগে কোন নবী-রাসুলকে দেওয়া হয়নি। সুতরাং এই শরিয়তের নির্ধারিত পন্থা অনুযায়ী চললে অন্যান্য উম্মতের তুলনায় অল্প আমলেই বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।

এভাবে এই উম্মতের নেক ব্যক্তিরা অন্য উম্মতের আবেদ থেকে শ্রেষ্ঠ হবে। যেমন সব আম্বিয়া (আ.)-এর পর আবু বকর (রা.)-এর স্থান সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। তেমনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা অন্য নবীর সাথিদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

৩. আর উম্মতে মুহাম্মদির দ্বিগুণ প্রতিদান অন্য উম্মতের ওপর জুলুম নয়। কারণ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দলটি এক কিরাতের বিনিময়ে ফজর থেকে অর্ধদিবস পর্যন্ত কাজ করার জন্য রাজি ছিল। তাই এই তারা এক কিরাতেরই হকদার ছিল। তদ্রূপ দ্বিতীয় দলটিও অর্ধদিবস থেকে আসর পর্যন্ত সময়ে এক কিরাতের বিনিময়ে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তারাও তাদের প্রাপ্য পেয়েছে। তবে শেষ দল তথা উম্মতে মুহাম্মদি আসরের পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত (অর্থাৎ সর্বশেষ দুনিয়ায় আগমনকারী হিসেবে) কাজ করার জন্য নিযুক্ত হয়েছে। আর তাদের দিগুণ পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে। এক কিরাত তাদের প্রাপ্য হিসেবে আর এক কিরাত আল্লাহ প্রদত্ত সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে। আর সম্মান দানের ব্যাপারে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানী ও বিচক্ষণ। তা ছাড়া বিশেষ কারণে অধীনদের একজনকে অন্যদের ওপরে প্রাধান্য দেওয়ারও সুযোগ আছে।

৪. উপরোক্ত হাদিসের বর্ণনার দ্বারা বোঝা যায়, শ্রমিককে তার প্রাপ্য পারিশ্রমিকের বেশি দেওয়া যাবে।

৫. দ্বিনি বিষয়াবলি বোঝানোর জন্য হিকমতের সঙ্গে বিভিন্ন উপমা উপস্থাপন করা বৈধ।

৬. উল্লিখিত হাদিসে মুমিন ও কাফিরদের প্রতি আল্লাহর যথাযথ ন্যায়বিচার ও বিশেষ কারো প্রতি তার বিশেষ অনুগ্রহের চিত্র ফুটে উঠেছে।

৭. এই হাদিসের ব্যাখায় ইবনে মুনজির (রহ.)  বলেন, এর মাধ্যমে বোঝা যায় নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইজারা বৈধ।

৮. এর মাধ্যমে ফজর ও আসরের সময়ের ফজিলত প্রকাশ পায়। (শরহুল বুখারি, ইবনে বাততাল : ৬/৩৯৩)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অল্প আমলে বেশি প্রতিদান

আপডেট টাইম : ০৬:৫৫:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
মুসলিম ও আহলে কিতাবের পার্থক্য বর্ণনা করে নবী করিম (সা.) একটি উপমা পেশ করে বলেন, তোমরা এবং উভয় আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান)-এর উদাহরণ হলো এমন এক ব্যক্তির মতো, যে কয়েকজন মজদুরকে কাজে নিয়োগ করে বলল, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক কিরাত (আরবের ওজন ও মাপের একক বিশেষ) পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমার কাজ কে করবে? তখন ইহুদি কাজ করে দিল। তারপর সে ব্যক্তি বলল, কে আছ যে দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত এক কিরাতের বিনিময়ে আমার কাজ করে দেবে? তখন খ্রিস্টান কাজ করে দিল। তারপর সে ব্যক্তি বলল, কে আছ যে আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুই কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করবে? আর তোমরাই হলে (মুসলমান) তারা। (যারা অল্প পরিশ্রমে বেশি পারিশ্রমিক লাভ করল) তাতে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা রাগান্বিত হলো

তারা বলল, এটা কেমন কথা, আমরা কাজ করলাম বেশি, অথচ পারিশ্রমিক পেলাম কম। তখন সে ব্যক্তি (নিয়োগকর্তা) বলল, আমি তোমাদের প্রাপ্য কম দিয়েছি? তারা বলল, না। তখন সে বলল, সেটা তো আমার অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা দান করি। (বুখারি, হাদিস : ২২৬৮)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে হাজার আসকলানি (রহ.) ফাতহুল বারিতে হাদিসে বর্ণিত শব্দ ‘মাছালুকুম’-এর সঙ্গে ‘মাআ নাবিউকুম’ উহ্য ধরে উল্লেখ করেন, নিজ নিজ নবীর সঙ্গে তোমাদের উদাহরণ হলো এমন ব্যক্তির মতো, যাকে কোনো কিছুর বিনিময়ে কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে।

অতএব, উল্লিখিত উদাহরণে উম্মতের আমলের সঙ্গে তাদের নবীদের আমল এবং উম্মতের প্রতিদানের সঙ্গে নবীদের প্রতিদানও যুক্ত হবে। এই উদাহরণ দ্বারা উম্মতে মুহাম্মদির ওপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ দান ও অনুগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। এই উম্মতের আমল কম হবে, তবে প্রতিদান হবে বেশি।

এখানে উপরোক্ত বর্ণনা থেকে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো—

১. অন্য সব দ্বিনের ওপর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত।

একজন নিষ্ঠাবান উম্মতে মুহাম্মদিকে তার অল্প আমলে প্রতিদানস্বরূপ এই পরিমাণ সওয়াব দেওয়া হবে, যা পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতকে দেওয়া হয়নি। এ কথা রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে ব্যক্ত করেছেন—‘এটা আল্লাহর মেহেরবানি। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।’তবে আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর ঈমান আনবে এবং তাঁকে সত্যায়ন করবে তার প্রতিদান দিগুণ করে দেওয়া হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোরআনের আগে আমি যাদের কিতাব দিয়েছি, তারা এতে বিশ্বাস করে যখন তাদের কাছে এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম।

এটা আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্য। আমরা এর আগেও আজ্ঞাবহ ছিলাম। তারা দুইবার পুরস্কৃত হবে তাদের সবরের কারণে। তারা মন্দের জবাবে ভালো করে এবং আমি তাদের যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫২-৫৪)আর হাদিসে এসেছে, আবু বুরদা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের লোকের জন্য দুটি পুণ্য রয়েছে—

(১) আহলে কিতাব—যে ব্যক্তি তার নবীর ওপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপরও ঈমান এনেছে।

(২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক আদায় করে এবং তার মালিকের হকও (আদায় করে)।

(৩) যার দাসী ছিল, যার সঙ্গে সে মিলিত হতো। তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালোভাবে দ্বিনি ইলম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আজাদ করে বিয়ে করেছে। তার জন্যও দুটি পুণ্য রয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৯৭)

আর এই পুণ্য তখনই লাভ করবে, যখন তারা তাদের কাছে প্রেরিত নবী-রাসুলের পাশাপাশি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ঈমান আনবে, অন্যথায় সর্বসম্মতিক্রমে কাফির সাব্যস্ত হবে। যদিও নিজ নিজ নবীর ওপর ঈমান রাখে।

২. উম্মতে মুহাম্মদির শুরু থেকে শেষাংশ পর্যন্ত পুরো জাতির শ্রেষ্ঠত্ব লাভ—আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেন, বিশুদ্ধতম অভিমত হলো, এই আয়াত সব উম্মতের ওপর প্রযোজ্য। প্রত্যেক যুগের উম্মত তাদের যুগ হিসেবে অন্যান্য উম্মত থেকে শ্রেষ্ঠ। আর সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ হলো যে অংশে নবী করিম (সা.) প্রেরিত হয়েছেন। অতঃপর যথাক্রমে তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈনদের যুগ। যেমন অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৪৩)

উপরোক্ত আলোচনার পর ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, উম্মতে মুহাম্মদি এই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হবে, তারা আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও সবচেয়ে সম্মানিত রাসুলের অনুসারী হওয়ার কারণে। কেননা তাঁকে আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণ দ্বিন ও শরিয়ত দিয়ে পাঠিয়েছেন, যা এর আগে কোন নবী-রাসুলকে দেওয়া হয়নি। সুতরাং এই শরিয়তের নির্ধারিত পন্থা অনুযায়ী চললে অন্যান্য উম্মতের তুলনায় অল্প আমলেই বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।

এভাবে এই উম্মতের নেক ব্যক্তিরা অন্য উম্মতের আবেদ থেকে শ্রেষ্ঠ হবে। যেমন সব আম্বিয়া (আ.)-এর পর আবু বকর (রা.)-এর স্থান সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। তেমনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা অন্য নবীর সাথিদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

৩. আর উম্মতে মুহাম্মদির দ্বিগুণ প্রতিদান অন্য উম্মতের ওপর জুলুম নয়। কারণ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দলটি এক কিরাতের বিনিময়ে ফজর থেকে অর্ধদিবস পর্যন্ত কাজ করার জন্য রাজি ছিল। তাই এই তারা এক কিরাতেরই হকদার ছিল। তদ্রূপ দ্বিতীয় দলটিও অর্ধদিবস থেকে আসর পর্যন্ত সময়ে এক কিরাতের বিনিময়ে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তারাও তাদের প্রাপ্য পেয়েছে। তবে শেষ দল তথা উম্মতে মুহাম্মদি আসরের পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত (অর্থাৎ সর্বশেষ দুনিয়ায় আগমনকারী হিসেবে) কাজ করার জন্য নিযুক্ত হয়েছে। আর তাদের দিগুণ পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে। এক কিরাত তাদের প্রাপ্য হিসেবে আর এক কিরাত আল্লাহ প্রদত্ত সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে। আর সম্মান দানের ব্যাপারে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানী ও বিচক্ষণ। তা ছাড়া বিশেষ কারণে অধীনদের একজনকে অন্যদের ওপরে প্রাধান্য দেওয়ারও সুযোগ আছে।

৪. উপরোক্ত হাদিসের বর্ণনার দ্বারা বোঝা যায়, শ্রমিককে তার প্রাপ্য পারিশ্রমিকের বেশি দেওয়া যাবে।

৫. দ্বিনি বিষয়াবলি বোঝানোর জন্য হিকমতের সঙ্গে বিভিন্ন উপমা উপস্থাপন করা বৈধ।

৬. উল্লিখিত হাদিসে মুমিন ও কাফিরদের প্রতি আল্লাহর যথাযথ ন্যায়বিচার ও বিশেষ কারো প্রতি তার বিশেষ অনুগ্রহের চিত্র ফুটে উঠেছে।

৭. এই হাদিসের ব্যাখায় ইবনে মুনজির (রহ.)  বলেন, এর মাধ্যমে বোঝা যায় নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইজারা বৈধ।

৮. এর মাধ্যমে ফজর ও আসরের সময়ের ফজিলত প্রকাশ পায়। (শরহুল বুখারি, ইবনে বাততাল : ৬/৩৯৩)