ঢাকা ০২:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার ফজিলত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৫ বার

ইসলামে দীন কায়েমের জন্য জীবন উৎসর্গ করার ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ। বিশেষ করে, যদি সেই জীবনদান হয় নিজের দেশ, ধর্ম, এবং মানবতার জন্য। ইসলামের মূল শিক্ষায় দেখা যায়, নিজের প্রাণের বিনিময়ে দেশ ও ধর্মের জন্য সংগ্রাম করা এবং নিজের জাতির মুক্তির জন্য আত্মত্যাগ করা অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ। নিচে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কোরআনের দৃষ্টিতে জীবন উৎসর্গ করার মর্যাদা

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, তবে তোমরা তা অনুভব করতে পার না।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৫৪)

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, যারা আল্লাহর পথে এবং ন্যায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন, তাদের প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু হয় না। তারা আল্লাহর কাছে জীবিত থাকে এবং তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত সুখের জীবন। দেশের জন্য জীবন দান করা একটি মহান কাজ, কারণ এটি আল্লাহর পথে সংগ্রামের একটি রূপ।

জান্নাতের প্রতিশ্রুতি

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর হত্যা করে এবং নিহত হয়।’ (সূরা আত-তওবা, আয়াত ১১১)

এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, যারা তাদের জান ও মাল আল্লাহর পথে দান করে, তাদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। দেশের জন্য জীবন দান করা আল্লাহর পথে জীবন দানের একটি উদাহরণ, যেখানে একজন মুসলিম তার জীবন এবং সম্পদ উৎসর্গ করে একটি বৃহত্তর স্বার্থে।

শহীদের মর্যাদা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শহীদদের জন্য জান্নাতে ছয়টি বিশেষ সম্মাননা রয়েছে: রক্তের প্রথম ফোঁটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সকল পাপ ক্ষমা করা হয়, জান্নাতে তার স্থান নির্ধারিত হয়, সে জান্নাতে সত্তর জন আত্মীয়কে সুপারিশ করতে পারবে, সে জান্নাতে আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পায়, এবং সে জান্নাতে যে কোনো জায়গায় বিচরণ করতে পারবে।’ (তিরমিজি)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন, তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। শহীদদের জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে বিশেষ মর্যাদা এবং তাদের জন্য জান্নাতে বিশেষ সম্মাননা অপেক্ষা করছে।

ইসলামের পথে আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা

ইসলামে নিজের জীবনের বিনিময়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করাকে সর্বোচ্চ ত্যাগ হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা চায়, তা তার ভাইয়ের জন্যও চায়।’ (সহিহ বুখারি)

দেশের জন্য জীবন দান করা এই হাদিসের একটি নিখুঁত উদাহরণ, যেখানে একজন ব্যক্তি নিজের স্বার্থকে দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করে। দেশের স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি, এবং জনগণের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা প্রকৃত ঈমানদারের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ।

জাতির ওপর দায়িত্ব

ইসলামে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং জাতীয় দায়িত্ব পালনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা উত্তম জাতি, মানবজাতির জন্য বের করা হয়েছে; তোমরা মানুষকে ভালো কাজের নির্দেশ দাও এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর উপর ঈমান রাখো।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০)

এই আয়াতের আলোকে, একজন মুসলিমের দায়িত্ব তার দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা, এবং সেই লক্ষ্যে যদি জীবন উৎসর্গ করতেও হয়, তবে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

সবশেষে বলা যায়, দেশের জন্য জীবন দান করা ইসলামের দৃষ্টিতে এক মহান ত্যাগ এবং অত্যন্ত সম্মানজনক কাজ। কুরআন এবং সুন্নাহ আমাদেরকে এই ত্যাগের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। যারা দেশের জন্য জীবন দান করেন, তারা আল্লাহর কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদা এবং জান্নাতের প্রতিশ্রুতি পান। দেশের জন্য জীবন দানের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন, যা ইসলামের অন্যতম মূলনীতি। তাই আল্লাহ আমাদেরকে ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার এবং দেশের কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

প্রধান শিক্ষক, দারুলহুদা মডেল মাদরাসা, কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার ফজিলত

আপডেট টাইম : ১০:৩৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসলামে দীন কায়েমের জন্য জীবন উৎসর্গ করার ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ। বিশেষ করে, যদি সেই জীবনদান হয় নিজের দেশ, ধর্ম, এবং মানবতার জন্য। ইসলামের মূল শিক্ষায় দেখা যায়, নিজের প্রাণের বিনিময়ে দেশ ও ধর্মের জন্য সংগ্রাম করা এবং নিজের জাতির মুক্তির জন্য আত্মত্যাগ করা অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ। নিচে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কোরআনের দৃষ্টিতে জীবন উৎসর্গ করার মর্যাদা

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, তবে তোমরা তা অনুভব করতে পার না।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৫৪)

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, যারা আল্লাহর পথে এবং ন্যায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন, তাদের প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু হয় না। তারা আল্লাহর কাছে জীবিত থাকে এবং তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত সুখের জীবন। দেশের জন্য জীবন দান করা একটি মহান কাজ, কারণ এটি আল্লাহর পথে সংগ্রামের একটি রূপ।

জান্নাতের প্রতিশ্রুতি

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর হত্যা করে এবং নিহত হয়।’ (সূরা আত-তওবা, আয়াত ১১১)

এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, যারা তাদের জান ও মাল আল্লাহর পথে দান করে, তাদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। দেশের জন্য জীবন দান করা আল্লাহর পথে জীবন দানের একটি উদাহরণ, যেখানে একজন মুসলিম তার জীবন এবং সম্পদ উৎসর্গ করে একটি বৃহত্তর স্বার্থে।

শহীদের মর্যাদা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শহীদদের জন্য জান্নাতে ছয়টি বিশেষ সম্মাননা রয়েছে: রক্তের প্রথম ফোঁটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সকল পাপ ক্ষমা করা হয়, জান্নাতে তার স্থান নির্ধারিত হয়, সে জান্নাতে সত্তর জন আত্মীয়কে সুপারিশ করতে পারবে, সে জান্নাতে আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা পায়, এবং সে জান্নাতে যে কোনো জায়গায় বিচরণ করতে পারবে।’ (তিরমিজি)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন, তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। শহীদদের জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে বিশেষ মর্যাদা এবং তাদের জন্য জান্নাতে বিশেষ সম্মাননা অপেক্ষা করছে।

ইসলামের পথে আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা

ইসলামে নিজের জীবনের বিনিময়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করাকে সর্বোচ্চ ত্যাগ হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা চায়, তা তার ভাইয়ের জন্যও চায়।’ (সহিহ বুখারি)

দেশের জন্য জীবন দান করা এই হাদিসের একটি নিখুঁত উদাহরণ, যেখানে একজন ব্যক্তি নিজের স্বার্থকে দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করে। দেশের স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি, এবং জনগণের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা প্রকৃত ঈমানদারের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ।

জাতির ওপর দায়িত্ব

ইসলামে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং জাতীয় দায়িত্ব পালনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা উত্তম জাতি, মানবজাতির জন্য বের করা হয়েছে; তোমরা মানুষকে ভালো কাজের নির্দেশ দাও এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর উপর ঈমান রাখো।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০)

এই আয়াতের আলোকে, একজন মুসলিমের দায়িত্ব তার দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা, এবং সেই লক্ষ্যে যদি জীবন উৎসর্গ করতেও হয়, তবে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

সবশেষে বলা যায়, দেশের জন্য জীবন দান করা ইসলামের দৃষ্টিতে এক মহান ত্যাগ এবং অত্যন্ত সম্মানজনক কাজ। কুরআন এবং সুন্নাহ আমাদেরকে এই ত্যাগের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। যারা দেশের জন্য জীবন দান করেন, তারা আল্লাহর কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদা এবং জান্নাতের প্রতিশ্রুতি পান। দেশের জন্য জীবন দানের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন, যা ইসলামের অন্যতম মূলনীতি। তাই আল্লাহ আমাদেরকে ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার এবং দেশের কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

প্রধান শিক্ষক, দারুলহুদা মডেল মাদরাসা, কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর।