মুসলিম ও অভিবাসী বিরোধী দাঙ্গা সহিংসতার কারণে আতঙ্ক আর শঙ্কায় দিন কাটছে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়ের। প্রাণভয়ে ঘর থেকেই বের হওয়া বাদ দিয়েছেন অনেকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সুপরিচিত শহরগুলোর ধর্মীয় স্থাপনা, অভিবাসী কেন্দ্রগুলোতেও চলছে তাণ্ডব। মুসলিমদের অভিযোগ, উগ্রপন্থিরা উসকানি দিয়ে তৈরি করেছে এমন পরিস্থিতি। শীগগির, যুক্তরাজ্যে আবারও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হবে আশা তাদের।
এই আল রাহমা মসজিদ লিভারপুলের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এক সপ্তাহ আগেও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর থাকা মসজিদটির এখন বেশিরভাগ দরজাই বন্ধ। হামলার শঙ্কায় বেড়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল, মসজিদ রক্ষায় পাহারা দিচ্ছেন তরুণ মুসলিম স্বেচ্ছাসেবীরাও। এদিকে, সহিংসতার শঙ্কায় বন্ধ হয়ে গেছে আরেক প্রাচীন মসজিদ আবদুল্লাহ কুইলিয়াম মসজিদ।
স্থানীয় এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সহাবস্থানের জন্য বেশ সুনাম লিভারপুলের। অথচ গত এক সপ্তাহ ধরে, যুক্তরাজ্যজুড়ে কট্টরপন্থিদের যে সহিংসতা আর দাঙ্গা চলছে তা ছড়িয়ে পড়েছে এই শহরেও। একাধিক ধর্মীয় স্থাপনা, অভিবাসী কেন্দ্র ভাংচুরের পাশাপাশি লুটপাট চলছে দোকানপাট- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটছে অভিবাসী, মুসলিমসহ সংখ্যালঘু নাগরিকদের। এমন পরিস্থিতিতে ঘর থেকেই বের হচ্ছে না অনেকে। ভুক্তভোগীরা বলেন, আমার জন্ম লিভারপুলে। এখানেই আমার বেড়ে উঠা। এই শহরকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু লিভারপুলসহ গোটা যুক্তরাজ্যে এখন যা ঘটছে, যেভাবে লুটপাট আর দাঙ্গা চলছে তা আতঙ্কের।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, আমাদের প্রতিবেশিরা কঠিন এই মুহূর্তে পাশে দাঁড়াচ্ছে। কেউ এসে বলছে, তোমাদের কেনাকাটা আমি করে দেব। কেউ বলছে, যেকোনো প্রয়োজনে তাকে জানাতে। দেশে এখন যা হচ্ছে সেটি তার’ সমর্থন করে না। কিন্তু তারা জানে এই পরিস্থিতিতে এখন আমার বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়।
গোটা যুক্তরাজ্যেই এখন একই চিত্র। গত একযুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গার সাক্ষী হচ্ছে দেশটি। শত শত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অভিযোগ উঠেছে, উগ্রপন্থিরা উসকানি দিয়ে শান্ত শহরগুলোকে অশান্ত করে তুলেছে। ভুক্তভোগীরা বলেন, যা ঘটছে তা নিশ্চিতভাবে বর্ণবাদ। কিন্তু লিভারপুলে এমন বর্ণবাদ ছিলো না। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এখানে আমরা একসাথে থাকতাম। এর আগে কখনও এমন পরিস্থিতি এখানে দেখিনি। কিছু লোক উসকানি দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে।
যুক্তরাজ্যে সাউথপোর্টে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে, নাচের স্কুলে তিন শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ছড়ায় এই দাঙ্গা। হামলাকারী অভিবাসী মুসলিম- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর অভিবাসন বিরোধী কট্টরপন্থিরা নেমে আসে রাস্তায়। যদিও পরে জানা যায়, ওই হামলাকারী ব্রিটিশ নাগরিক।